পঞ্চম বিশ্বকাপের শুরুতেই ‘হোঁচট’ খেলেন লিয়োনেল মেসি! তবে এই প্রথম নয়। ক্লাব ফুটবলে দারুন সফল হলেও আর্জেন্টিনার নীল-সাদা স্ট্রাইপ জার্সিতে বার বার হোঁচট খেয়েছেন এই মুহূর্তে বিশ্ব-ফুটবলের ‘রাজপুত্র’। বার্সেলোনার হয়ে যত সফল হয়েছেন, প্রতি বারই প্রশ্ন উঠেছে, মেসির ক্লাব-সাফল্য বিশ্বমঞ্চে কেন প্রতিফলিত হয় না?
পরিস্থিতির বিরাট বদল না হলে ৩৫ বছরের মেসির এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তিনি নিজেই এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর হাতে বিশ্বকাপ, মুখে বিশ্বজয়ীর হাসি দেখা যাবে কি?
মঙ্গলবার সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে ১-২ গোলে হারার পর মেসিদের উজ্জ্বল স্বপ্নে বড় ধাক্কা লেগেছে। গ্রুপ ‘সি’-তে সৌদির পর মেক্সিকো এবং পোল্যান্ডের মতো কড়া প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা করছে যে! তবে পিছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, বিশ্বমঞ্চে আগেও বার বার হতাশ করেছেন মেসি।
গত বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। ২০১৮ সালে প্রথম ম্যাচেই আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হন মেসি। ১-১ গোলে ড্র করে কোনও রকমে আর্জেন্টিনার মানরক্ষা হলেও মেসির ব্যর্থতা চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
গ্রুপ পর্যায়ের বিদায়ের লজ্জা বাঁচাতে পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল মেসির দল। নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত গোল করে ভক্তদের মন রেখেছিলেন মেসিও। তবে ফ্রান্সের ১৯ বছরের ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপের উত্থানের ছটায় কার্যত চাপা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সে বার বিদায় নিতে হয়েছিল মেসির আর্জেন্টিনাকে।
একের পর এক দুরন্ত গোল করলেও বহু ফুটবলারের মতো আবেগে ভেসে যান না। বরং নিজের উচ্ছ্বাস বেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন মেসি। তবে ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা কাপ ফাইনালে বোধ হয় তাঁর আবেগের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। কাপ জেতার স্বপ্ন খান খান হয়ে যাওয়ার পর কান্নায় ভেসেছিলেন তিনি। পেনাল্টি শুটআউটে চিলির কাছে হেরে আচমকাই অবসরের ঘোষণাও করে দেন। বলে দেন মনের কথাও— ‘‘যা কিছু সম্ভব, সব করেছি। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটা কষ্টকর।’’
জাতীয় দলের জার্সি ছেড়ে বেশি দিন থাকতে পারেননি মেসি। মাস দুয়েক পরে সে অবসর ভেঙে ফিরে আসেন। সে সময় বলেছিলেন, ‘‘আর্জেন্টিনার ফুটবলে অনেক কিছু মেরামতি বাকি। তবে বাইরে বসে সমালোচনা করার চেয়ে মাঠের ভিতরে ঢুকে তা করতে চাইব।’’
আরও পিছিয়ে গেলে দেখা যায়, ব্রাজিল বিশ্বকাপেও নিরাশ করেছিলেন মেসি। সে বার ২৪ বছর পর ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সৌজন্যে, মেসির পা। সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে শুটআউটে গোল করেছিলেন মেসি।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ছিল জার্মানির মতো কড়া প্রতিপক্ষ। তবে অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোতজের এক গোলেই চুরমার হয়ে গিয়েছিল মেসি তথা গোটা আর্জেন্টিনার কাপ জয়ের স্বপ্ন। ০-১ গোলে হেরে রানার্সের তকমায় সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল মেসিকে।
ব্রাজিলের আগে ২০১০ সালে বিশ্বকাপের আসর বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সে বারও বিশ্বকাপ ঘরে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন মেসি। সে বার ফিফার বিচারে প্রথম বার বিশ্বসেরা ফুটবলারের খেতাব জিতেছিলেন তিনি। মারাদোনার প্রশিক্ষণে কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদারও ছিলেন মেসিরা।
গ্রুপ পর্যায়ে নাইজিরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং গ্রিসের বাধা টপকে শেষ ষোলোয় মেক্সিকোকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিলেন মেসিরা। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির দেওয়াল ভেদ করতে পারেননি তাঁরা। সে ম্যাচে ০-৪ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন মেসিরা। সমালোচকেরা অবশ্য মারাদোনার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন।
ক্লাব ফুটবলে মেসির ঝুলিতে রয়েছে লা লিগায় সবচেয়ে বেশি (৪৭৪টি) গোলের রেকর্ড। লা লিগায় সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকও (৩৬ বার) করেছেন তিনি। ৭ বারের বালঁ দ্যর জিতেছেন। লাতিন আমেরিকার পুরুষ ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের (৯১) রেকর্ডও দখলে। তবে এত কিছু সত্ত্বেও জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বমঞ্চে উঠে আমজনতার মুখে হাসি ফোটাতে ব্যর্থ মেসি।
লা লিগায় মেসির গৌরবের অধ্যায়ের মাঝেও ধাক্কা লেগেছিল মেসির। ২০০৬ সালের উয়েফা সুপার কাপ ফাইনালে সেভিয়ার কাছে ৩ গোল খেয়েছিল তাঁর দল বার্সেলোনা।
এর দু’বছর পর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালেই বিদায় নিয়েছিল মেসির দল। ২০০৮ সালে সেই প্রতিযোগিতার প্রথম পর্যায়ের ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল মেসির বার্সেলোনা। তবে ২৯ এপ্রিল দ্বিতীয় পর্যায়ের ম্যাচে পল স্কোলসের গোলে বিদায় নেন তাঁরা।