প্রায় ছ’সপ্তাহ ধরে দাবানলের গ্রাসে কানাডা। শুক্রবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ভস্মীভূত ১০৬ লক্ষ একরের বেশি জমি, বাড়ি, অরণ্য।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার রাজ্য মেরিল্যান্ড থেকে দাবানল ছড়িয়েছে কানাডায়। তবে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও জ্বলছে পূর্ব প্রান্ত।
কানাডার দাবানলের ধোঁয়ায় দমবন্ধ অবস্থা পড়শি আমেরিকারও। ধোঁয়ায় ঢেকেছে নিউ ইয়র্কের স্ট্যাটু অফ লিবার্টি। দাবানলের ধোঁয়া ছড়িয়েছে নরওয়েতেও। এমনকি, তা ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কী কী কারণে জ্বলছে কানাডা?
গত এপ্রিলে ভয়াবহ দাবানলের সাক্ষী ছিল মেপল পাতার এই দেশটি। ওই মাসে ৩০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরিত করানো হয়েছিল। যার জেরে সে দেশে তেল এবং গ্যাস উৎপাদন অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যায়। প্রভাব পড়ে খনি শিল্পেও।
কানাডার এই দুর্দশায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা। ইতিমধ্যেই সেখানে আমেরিকার ৬০০ দমকলকর্মী বিপর্যয় মোকাবিলায় নেমেছেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি জারি করে প্রতিবেশী দেশের বিপর্যয় মোকাবিলায় অতিরিক্ত দমকলবাহিনী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ট্রুডোর মতে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল। সে জন্য গ্রীষ্মের মরসুম শুরুর অনেক আগেই দাবানল ছড়িয়েছে কানাডায়।
আমেরিকা ছাড়াও কানাডার পাশে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জ়িল্যান্ড। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ফ্রান্স, পর্তুগাল এবং স্পেনও দমকলবাহিনী পাঠাবে কানাডায়।
কানাডিয়ান ইনসার্জেন্সি ফরেস্ট ফায়ার সেন্টার জানিয়েছে, গত বছর জুড়ে দাবানলের গ্রাসে যতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, চলতি মাস পর্যন্ত তার থেকেও বেশি অঞ্চল পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে।
দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কিউবেক এবং অ্যালবার্তা প্রদেশের প্রতিটিতে দেড়শোটি করে এলাকায় দাবানল ছড়িয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধুমাত্র কিউবেকে অন্তত ১২,৬০০ বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নোভা স্কটিয়া। সেখানে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এলাকায় দাবানল ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
দাবানলের ধোঁয়ায় হাঁসফাঁস অবস্থা কানাডার প্রতিবেশী আমেরিকার। বুধবার ধোঁয়ায় ঢেকে যায় নিউ ইয়র্কের আকাশ। নীলের বদলে আগুনে কমলা রং নেয় তা। ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে আকাশচুম্বী বহুতল থেকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি।
বায়ুর গুণমান সংক্রান্ত প্রযুক্তি নিয়ে কর্মরত সুইডেনের সংস্থা ‘আইকিউএয়ার’ জানিয়েছে, কানাডায় দাবানলের জেরে চলতি সপ্তাহে আমেরিকায় বায়ুদূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কানাডায় দাবানলকে ‘অভূতপূর্ব’ আখ্যা দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের সেনেটর চাক শ্যুমার। বুধবার আমেরিকার কংগ্রেসে তিনি বলেন, ‘‘কানাডার এই পরিস্থিতি রীতিমতো অভূতপূর্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে এই প্রাকৃতিক দুর্দশা আরও বাড়ছে।’’
কানাডার এই বিপর্যয়ে শুধু কি জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী? অনেকের মতে, তা একটি কারণ বটে। তবে গত শীতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম তুষারপাত, চলতি গ্রীষ্মের অত্যধিক তাপপ্রবাহ, যথেচ্ছ ভাবে গাছপালা কেটে ফেলার পাশাপাশি মানুষের নানা দোষত্রুটিও রয়েছে।
কানাডার ৮৫ শতাংশ দাবানলের নেপথ্যে শুকনো আবহাওয়ায় বজ্রবিদ্যুৎ বেশি হওয়াও একটি কারণ বলে মনে করছেন আবহবিদরা।
বিশ্ব জুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের জেরেও কানাডার বিপর্যয়ে ইন্ধন জুগিয়েছেন বলে মত প্রশাসনের। কুইবেকের বহু অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুতের জেরে দাবানল ছড়ালেও অ্যালবার্তায় কী কারণে এই সূত্রপাত হল, তা এখনও পর্যন্ত অজানা।
কানাডার বেশ কয়েকটি প্রান্তে আবার চলন্ত ট্রেন থেকে জঙ্গলে জ্বলন্ত সিগারেট ফেলায় তার স্ফুলিঙ্গ থেকে সেখানে দাবানল ছড়িয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের।