৩০ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পর, অবশেষে ইডির মুখোমুখি হলেন হেমন্ত সোরেন। জমি জালিয়াতির মামলার তদন্ত চলাকালীন কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে গ্রেফতার হন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হল কোন জমির জন্য গ্রেফতার হতে হল হেমন্তকে?
জমি জালিয়াতি মামলায় তদন্ত চলাকালীন গ্রেফতার হলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ইডির জি়জ্ঞাসাবাদ-পর্বের পর বুধবার সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।
গত কয়েক দিন ধরেই হেমন্তকে জমি জালিয়াতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছিল ইডি। এই মামলায় এর আগেও এক বার কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর কাছে সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু হেমন্ত কোনও সাড়া দেননি। ২৯ জানুয়ারি তাঁর বাসভবনেও গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু তাঁর দেখা মেলেনি।
শোনা গিয়েছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা সম্ভব হয়নি।
প্রায় ৩০ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পর বুধবার দুপুরে রাঁচীতে নিজের বাড়ির সামনে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এর পরেই তাঁর বাড়িতে ঢোকেন তদন্তকারীরা।
সাত ঘণ্টা ইডি আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়ে সন্ধ্যায় রাজভবনে যান মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, রাঁচীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ৭.১৬ একর জমি বেআইনি ভাবে বিক্রির অভিযোগের মামলায় নাম জড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।
সেই মামলায় ইতিমধ্যেই ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার গ্রেফতার হেমন্তও। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জমি মাফিয়াদের হাতে অবৈধ ভাবে জমি তুলে দিয়েছেন।
যদিও হেমন্তের পাল্টা দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা তাঁর ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। তাই সুকৌশলে সংবাদমাধ্যমে ভুয়ো খবর পরিবেশন করা হচ্ছে।
রাঁচীতে ভারতীয় সেনার একটি জমি কাগজপত্র জাল করে কেনাবেচা হয়েছে বলে দাবি করে গত বছর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রাঁচী পুরসভার ট্যাক্স কালেক্টর দিলীপ শর্মা।
তাঁর অভিযোগ ছিল প্রদীপ বাগচী নামে জনৈকের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে ইডি।
তদন্তে নেমে তারা জানতে পারে, যে জমি নিয়ে বিতর্ক, সেই একাংশের (মোটামুটি ৪.৫ একর) মালিক বিএম লক্ষ্মণ রাও। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাকে ওই জমি দান করেছিলেন তিনি।
ইডি সূত্রে খবর, তদন্তে একটি বড় চক্রের হদিস মেলে। সেই চক্রে জমি মাফিয়াদের পাশাপাশি বেশ কয়েক জন সরকারি আধিকারিক ও মধ্যস্থতাকারী (মিডলম্যান)-র নাম উঠে আসে।
অভিযোগ, তাঁরাই নথিপত্র জাল করে প্রদীপ বাগচীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই জমির মালিক বানিয়েছিলেন। পরে সেই জমি বেচে দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের একটি চা বাগানের মালিকের কাছে।
জমি-মামলায় পরে গ্রেফতার হন প্রদীপ। তদন্তকারীরা জানতে পারে, উক্ত জমির দাম সব মিলিয়ে ২০ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু তা বিক্রি করা হয়েছে মাত্র সাত কোটি টাকায়।
তার মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা সরাসরি নগদ নিয়েছিলেন প্রদীপ। বাকি টাকার লেনদেন হয়েছিল চেকে। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, নথিপত্র জাল করার কাজেও বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছিল। সে সব অভিযোগেই নাম জড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।