লোকসভার পর বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্যসভাতেও পাশ হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। তবে কবে থেকে এই বিলের হাত ধরে মহিলারা সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছেই।
সোমবার থেকে পাঁচ দিনের জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসেছিল। মঙ্গলবার নবনির্মিত সংসদ ভবনে প্রথম বার অধিবেশন বসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অধীর চৌধুরীর বক্তব্যের পরই মহিলা সংরক্ষণ বিলটি আনে শাসকশিবির।
পরে লোকসভায় পাশ করা হয় বিলটি। লোকসভা এবং বিধানসভায় মহিলা প্রতিনিধিদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের দাবি দীর্ঘদিনের। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সেই বিলটিই পাশ করাল মোদী সরকার
মহিলা সংরক্ষণ বিলের নামকরণ করেছে মোদী সরকার। নাম দেওয়া হয়েছে ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’।
১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর সরকার পঞ্চায়েত, পুরসভায় এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করার বিল আনে। তবে সেই বিল লোকসভায় পাশ হলেও রাজ্যসভায় পাশ করা হয়নি।
১৯৯৩ সালে নরসিংহ রাও সরকার ওই বিল পাশ করে। এর পর ১৯৯৬ সালে দেবগৌড়া সরকার প্রথম বার মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করে। তবে তা পাশ করা হয়নি। ২৭ বছর পর অবশেষে এই বিলটি পাশ করা হল।
লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিলটি পাশ হয়েছে। বিলটির বিরোধিতা হিসাবে দু’টি ভোট পড়েছে। মুসলিম মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ দাবি করে এআইএমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এবং তাঁর দলের এক সাংসদ বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
বিলটির কৃতিত্ব নিয়েও সরগরম রাজনীতির ময়দান। এই নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা চলছেই। এই আবহে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে বিলটি। কিন্তু বিলটি কার্যকর করা হবে কবে থেকে?
লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘যা হবে ২০২৯ সালের পরেই হবে।’’ আর এই নিয়েই বিরোধীদের মনে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে।
অন্য দিকে, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী বলেছেন, ‘‘এই বিল এখনই কার্যকর না হলে দেশের মহিলাদের প্রতি অবিচার হবে।’’ এই প্রসঙ্গে রাজীব গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনেছেন সনিয়া। বলেছেন, ‘‘আমার জীবনসঙ্গী রাজীব গান্ধী প্রথম পুরসভা, পঞ্চায়েতে মহিলা সংরক্ষণ করে বিল এনেছিলেন।’’
বিল কবে থেকে কার্যকর করা হবে, এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর তুঙ্গে। রাজ্যসভায় বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা দাবি করেছেন, ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় তিন ভাগের এক ভাগ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে এই নিয়ে সরকারের তরফে কিছু জানানো হয়নি।
কিন্তু মহিলাদের জন্য কেন ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ করা হল? কেন ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হল না? এই প্রশ্নও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
বিভিন্ন গবেষণার কথা উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ভারতে মহিলাদের জনসংখ্যা ৪৮ শতাংশের বেশি। তবে শিক্ষিত মহিলার হার পুরুষদের থেকে কম। দেশে দুঁদে মহিলা রাজনীতিকের সংখ্যাও কম।
অন্য দিকে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলে লিঙ্গ সমতা নিয়ে অনেকেই অবগত নন। মহিলা রাজনীতিকের উপর তাঁদের আস্থাও তাই কম। এই কারণে ভারতের মতো দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে মহিলা জনপ্রতিনিধিদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ ঠিক হবে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সব প্রতিষ্ঠানে মোট কর্মীসংখ্যার মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশের বেশি করা হয়েছে, সেখানে গভীর প্রভাব পড়েছে। তাই মহিলাদের সংরক্ষণ এক-তৃতীয়াংশ করা হয়েছে।
মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়ার পর এ বার অন্তত অর্ধেক সংখ্যক রাজ্যের বিধানসভাতেও অনুমোদিত হবে। কিন্তু কবে থেকে সংরক্ষণ বাস্তবায়িত হবে, সেটাই দেখার।