জরুরি ওষুধের তালিকা থেকে র্যান্টিডিনকে বাদ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। অম্বলের ওষুধ র্যানট্যাক, জিনট্যাকে থাকে এই র্যান্টিডিন। আশঙ্কা এই লবণ মারাত্মক ক্ষতি করে শরীরের। ডেকে আনতে পারে ক্যানসার।
এর আগে আমেরিকা-সহ বহু দেশ র্যান্টিডিন নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করেছে। এ বার ভারতও সেই পথেই এগোল।
ক্যানসারের কারণ হতে পারে, র্যান্টিডিনের মধ্যে এমন পদার্থের সন্ধান মিলেছিল ২০১৯ সালে। সেই থেকে এই লবণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে আমেরিকার খাদ্য এবং ওষুধ নিয়ামক সংস্থা (এফডিএ)।
তার পর থেকে ভারতও এই ওষুধ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নতুন জরুরি ওষুধের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় রয়েছে ৩৮৪টি ওষুধ। বাদ গিয়েছে র্যান্টিডিন-সহ ২৬টি ওষুধ।
২৬টি বাদ পড়া ওষুধের তালিকায় রয়েছে র্যান্টিডিন, সেট্রিমাইড, প্রোকার্বাজিন। এই ২৬টি ওষুধের উৎপাদনও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
এই র্যান্টিডিন আসলে কী? র্যান্টিডিন হল এক ধরনের লবণ। ভারতে র্যানট্যাক, জিনট্যাক নামে বাজারে পাওয়া যায়। অম্বল, পেটব্যথা হলে এই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
গ্যাস্ট্রোএসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি), গ্যাসট্রিক আলসার, ডুওডেনাল আলসার, স্ট্রেস আলসার হলে রোগীকে র্যান্টিডিন খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের অধীনে ন্যাশনাল লাইব্রেরি ফর মেডিসিন বলছে, গ্যাসট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণে বাধা দেয় এই র্যান্টিডিন। ব্যাসাল গ্যাসট্রিক নিঃসরণও আটকে দেয় এই লবণ। ডুওডেনাল আলসার রয়েছে এমন রোগীর এই ব্যাসাল গ্যাসট্রিক নিঃসরণ হয়।
র্যান্টিডিন তৈরি করেছিল গ্ল্যাক্সো হোল্ডিংস লিমিটেড। এখন ওই সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন পিএলসির অংশ। ১৯৮৩ সালে আমেরিকায় ব্যবহারের ছাড়পত্র পায় র্যান্টিডিন। ক্রমে ৩১টি দেশ এই ওষুধকে ছাড়পত্র দেয়।
দেখা গিয়েছে এই র্যান্টিডিনে রয়েছে এন-নাইট্রোসোডিমিথাইলামাইন (এনডিএমএ)। যদিও সেই পরিমাণ খুবই সামান্য। এই এনডিএমএর কারণে পাকস্থলি, খাদ্যনালী, মূত্রাশয়, নাসোফারিংসে ক্যানসার হতে পারে।
২০২০ সালে একটি বিবৃতি দিয়ে র্যান্টিডিন নিষিদ্ধ করে দেয় আমেরিকার খাদ্য এবং ওষুধ নিয়ামক সংস্থা (এফডিএ)। বিবৃতিতে বলে, ‘আমাদের রোজের খাবারে সামান্য মাত্রায় এনডিএমএ থাকে। এমনকি জলেও সামান্য পরিমাণ এনডিএমএ থাকে। সামান্য পরিমাণ এনডিএমএ থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় এনডিএমএ শরীরে প্রবেশ করলে তা থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
এফডিএ একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সামান্য পরিমাণে এন-নাইট্রোসোডিমিথাইলামাইন (এনডিএমএ) শরীরে তেমন কোনও ক্ষতি করে না। নির্দেশিকায় তারা জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে এন-নাইট্রোসোডিমিথাইলামাইন (এনডিএমএ) খেলে তার জেরে ক্যানসার হতে পারে। এনডিএমএ রয়েছে এমন ওষুধ ৭০ বছর ধরে রোজ খেয়ে গেলেও ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে না।
কিন্তু তা বলে যথেচ্ছ পরিমাণে এই জাতীয় ওষুধ খেলে ঝুঁকি থেকেই যাবে। তাতে লাগাম পরাতেই এ বার নতুন জরুরি ওষুধের তালিকায় স্থান পেল না র্যানট্যাক, জিনট্যাক। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, জরুরি তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণে এগুলির দামও বাড়তে পারে।