সুপ্রিম কোর্ট এবং বিভিন্ন রাজ্যের হাই কোর্টগুলিতে প্রতি দিনই বহু মামলা দায়ের হয়। তারই মধ্যে বাছাই করা গুটিকতক মামলার ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির সিদ্ধান্ত নেয় আদালত।
গত ৬ জুলাই ছত্তীসগঢ় পুলিশের হাতে গ্রেফতার সাংবাদিক রোহিত রঞ্জনের জামিনের আর্জির শুনানি জরুরি ভিত্তিতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। (রোহিতের ছবি)
একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক রোহিতের বিরুদ্ধে ভুয়ো ভিডিয়ো প্রচার করে সাম্প্রদায়িক এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানোর মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। যদিও জামিন পেতে তাঁর অসুবিধা হয়নি।
উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার খবর করতে গিয়ে ধৃত সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের জামিনের আবেদনের শুনানি শীর্ষ আদালতে হয়েছিল ছ’মাসের বেশি পর। (কাপ্পানের ছবি)
আসলে আদালতে কী ভাবে একটি আবেদন তালিকাভুক্ত হবে তার উপরেই শুনানি নির্ভর করে। আদালত দ্রুত তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিলে সেই মামলার শুনানি দ্রুত হয়।
অন্য মামলাগুলির ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়মে হয় তালিকাভুক্তি। সে ক্ষেত্রে শুনানি হতে কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস এমনকি বছরও ঘুরে যেতে পারে।
কোনও আবেদন জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করার সময় আদালত কোনও যুক্তি দেয় না। সাধারণ ভাবে মামলার গুরুত্ব বুঝে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অনেক আইনজীবী এমনকি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অনেকেও মনে করেন দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ‘স্বেচ্ছাচারী’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টে বহু মামলাই বছরের পর বছর বিচারাধীন। এই পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট কিছু মামলার ক্ষেত্রে দ্রুত শুনানির সিদ্ধান্তে বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয় বলেও অভিযোগ।
সাধারণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী আবেদনকারী পক্ষ সশরীরে হাজির হয়ে বা অনলাইনে মামলা নথিভুক্ত করার আবেদন জানায়। এর পর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি তা পরীক্ষা করে ত্রুটি আছে কি না খতিয়ে দেখেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেও আবেদনে কিছু ত্রুটি থেকে যায়। তা সংশোধনের জন্য আবেদনকারীকে ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়। এক পরে তা শুনানির জন্য নথিভুক্ত করা হয়।
নথিভুক্তির সময় আবেদনটি একটি ‘পিটিশন নম্বর’ পায়। সে সময়ই রেজিস্ট্রি যাচাই করে দেখে, সময় অনুসারে মামলাটিকে দ্রুত শুনানির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনআছে কি না।
যাচাইয়ের পরে, বিষয়টি তালিকা বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানেই নির্ধারিত হয় আবেদনের শুনানির তারিখ। পাশাপাশি, কোন বেঞ্চে আবেদনের শুনানি হবে তা-ও ঠিক করা হয়।
সাধারণ ভাবে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়ভিত্তিক ভাবে বেঞ্চ নির্ধারিত রয়েছে। অর্থাৎ কোন ধরনের মামলা কোন বেঞ্চে শুনানি হতে পারে তার আগাম আঁচ পাওয়া সম্ভব।
সাধারণ ভাবে শুনানির প্রথম দিন আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি শুনে অভিযুক্ত পক্ষকে নোটিস দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে স্থির হয় পরবর্তী শুনানির তারিখ।
সাধারণ নিয়মে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। কিন্তু দ্রুত শুনানির ক্ষেত্রে সাধারণ এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে।
রেজিস্ট্রি যদি মামলার ‘গুরুত্ব’ বুঝে আবেদনকারীকে এক দিনের মধ্যেই ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দেয় তবে প্রশস্ত হয় দ্রুত শুনানির পথ।
সেই সুযোগ পাওয়ার জন্য আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীকে প্রথমে রেজিস্ট্রারের অনুমোদন চাইতে যেতে হয়। রেজিস্ট্রার মামলার গুরুত্ব বুঝে দ্রুত শুনানিতে সায় দিতে পারেন।
রেজিস্ট্রার দ্রুত শুনানির অনুমোদন না দিলে, পরের দিন আদালত শুরুর পরে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে সরাসরি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে গিয়ে দ্রুত শুনানির অনুমোদন চাইতে পারেন আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী।
২০১৯ সালে মামলা তালিকাভুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর সময় মামলার শুনানির সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া হয়েছিল।
সরকার বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়, গণপিটুনির মতো সংবেদনশীল বিষয় আবেদনে উল্লিখত হলে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির জন্য তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে।
২০১৮-সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেছিলেন, সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে, এমন মামলা শুনানিতে অগ্রাধিকার পেতে পারে। যদিও সম্প্রতি হিজাব-মামলা সুপ্রিম কোর্টে দ্রুত শুনানির অনুমোদন পায়নি।
২০২০ সালে সালে, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি দুষ্যন্ত দাভে প্রধান বিচারপতি এনভি রমণাকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন, মামলা তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে পক্ষপাতের ঘটনা ঘটছে।