লিয়োনেল মেসি থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো— কমবেশি সকলেই মাঠে থুতু ফেলেন। দেখে আপনার হয়তো ঘেন্না লাগে! দর্শকদের অনেকেই ভাবেন, রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু মেসি-রোনাল্ডোদের জন্য এটা জরুরি। ওঁদের ভাল খেলার জন্য খুবই জরুরি।
ফুটবলে খোলায়াড়দের থুতু ফেলা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করতে এ রকম করছেন, এটা ভাবা ভুল। আর ফুটবলারদের থুতু ফেলার জন্য রেফারি কোনও শাস্তিও দেন না।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ফুটবল খেললে বা এ ধরনের শারীরিক কসরত করলে লালারসে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এক ধরনের মিউকাস তৈরি হয়, যাকে বলে এমইউসিবি৫। এর ফলে লালারস আর ঘন হয়ে যায়।
এই ঘন লালারস গিলে ফেলা কঠিন। ঠিক সেই কারণেই ফুটবলাররা থুতু ফেলেন বার বার। এর ফলে তাঁদের শ্বাস নেওয়া অনেক সহজ হয়।
নাইজিরিয়া জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার জোসেফ ডোসু এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখার জন্য বার বার থুতু ফেলেন ফুটবলাররা। টানা ১০ থেকে ১৫ যোজন দৌড়নোর পর একটু তাজা বাতাসের দরকার হয় ফুটবলারদের। তখন তাঁরা থুতু ফেলেন।
এই থুতু ফেলা নিয়ে সব ফুটবলার এক মত নন। ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, থুতু ফেলে নিজেদের পৌরুষত্ব জাহির করতে চান। অনেকে মনে করেন অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের কারণে এই ধরনের আচরণ করেন ফুটবলাররা।
শুধু থুতু ফেলা নয়, অনেক ফুটবলার মুখে জল বা এনার্জি পানীয় নিয়ে তা কুলকুচি করে ফেলেন। একে বলে ‘কার্ব রিনসিং’। এই আচরণেরও একটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।
খেলার মাঝে বার বার এনার্জি পানীয় পান করেন ফুটবলাররা। তাঁরা মনে করেন, এর ফলে মুখে চিনি ও নুনের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেটাই মুখে জল নিয়ে কুলকুচি করে ফেলেন। এর ফলে অদ্ভুত স্বস্তি পান তাঁরা। ভাবেন যে, অতিরিক্ত এনার্জি শরীরে প্রবেশ করেছে, বা শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত হচ্ছে না।
অনেকে মনে করেন, মুখে জল নিয়ে কুলকুচি করে ফেললে ক্লান্তি দূর হয়। মস্তিষ্ক ভাবে, শরীর আর ক্লান্ত নয়।
২০১৭ সালে এই নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষার ফল বার হয়েছিল ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব স্পোর্টস সায়েন্স’-এ। ১২ জন স্বাস্থ্যবান পুরুষের উপর সমীক্ষাটি করা হয়েছিল। তাঁদের বয়স ২০ বছরের আশপাশে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, জল মুখে নিয়ে কুলকুচি করে ফেলার পর তাঁরা আরও জোরে জোরে লাফাতে সক্ষম হয়েছেন। আরও বেশি স্কোয়াটি দিতে পেরেছেন। আরও জোরে দৌড়তে পেরেছেন।
যদিও ২০১৭ সালেই ‘জার্নাল অব স্পোর্টস সায়েন্সেস’-এ একটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, মুখে জল নিয়ে কুলকুচি করলে অর্থাৎ ‘কার্ব রিনসিং’ করলে এনার্জি বাড়ে বা কমে না। প্রায় একই থাকে।
ফুটবলে থুতু ফেলা একেবারেই কোনও অপরাধ নয়। তবে অনেক খেলার ক্ষেত্রে এই থুতু ফেলাকে ‘অপরাধ’ হিসাবে দেখা হয়। অন্য দলের খেলোয়াড়ের উদ্দেশে থুতু ফেললে রেফারি লাল কার্ড দেখিয়ে থাকেন। এই আচরণকে অসম্মান হিসাবে দেখা হয়।
ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবি খেলায় মাঠে থুতু ফেলা অপরাধ নয়। তবে টেনিস এবং বাস্কেটবলের ক্ষেত্রে মাঠে এই আচরণ অপরাধের শামিল।