Sanjay Mishra

স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া অন্য অভিনেতার! বিবাগী হয়ে রেস্তরাঁয় বাসন মাজার কাজ নেন সঞ্জয়

হিন্দি ছবি ছাড়া ভোজপুরি ছবিতেও অভিনয় করেছেন সঞ্জয় মিশ্র। এ ছাড়াও ‘প্রণাম ওয়ালেকুম’ এবং ‘ধামা চৌকধি’ নামের দু’টি ছবি পরিচালনা করেন তিনি।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ১০:১৯
Share:
০১ ২৫

গুরুগম্ভীর হোক বা হালকা চরিত্র— বড় পর্দায় সব চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে পটু সঞ্জয় মিশ্র। তবে বিজ্ঞাপন জগত থেকে কাজ শুরু করে বলিউড জগতে পৌঁছনোর পথ সহজ ছিল না তাঁর। কেরিয়ারের সিঁড়িতে ওঠার মুখেই অভিনয় ছেড়ে রাস্তার ধারে ধাবায় বাসন মাজতে শুরু করেছিলেন তিনি।

০২ ২৫

১৯৬৩ সালের ৬ অক্টোবর বিহারের নারায়ণপুরে জন্ম সঞ্জয়ের। তাঁর বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় বিহার থেকে পরিবার-সহ বারাণসীতে চলে আসেন তিনি। বাবা-মা এবং দুই ভাই, এক বোনের সঙ্গে বারাণসীতে থাকতেন তিনি। সেখানে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।

Advertisement
০৩ ২৫

পড়াশোনায় কোনও কালেই ভাল ছিলেন না সঞ্জয়। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন দু’বার ফেল করেছিলেন তিনি। তাঁর ঠাকুরমা পটনা রেডিয়ো স্টেশনে গান গাইতেন। ছুটিতে বেশির ভাগ সময় ঠাকুরমার সঙ্গেই কাটাতেন তিনি। সঞ্জয়ের বাবারও ঝোঁক ছিল শিল্পসংস্কৃতির প্রতি। সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জাগে সঞ্জয়ের।

০৪ ২৫

বারাণসীতে পড়াশোনা শেষ করে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন সঞ্জয়। সেখান থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। সঞ্জয় যখন কলেজে ভর্তি হন, তখন ইরফান খান অন্তিম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিগমাংশু ধুলিয়া তাঁর সহপাঠী ছিলেন।

০৫ ২৫

কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৯১ সালে মুম্বই চলে যান সঞ্জয়। মুম্বইয়ে যাওয়ার পর আর্থিক কষ্টে ভুগেছিলেন তিনি। শুধুমাত্র বড়া পাও খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন, এমনও দিন গিয়েছে তাঁর জীবনে। বিজ্ঞাপন জগতের মাধ্যমে তাঁর অভিনয়যাত্রা শুরু।

০৬ ২৫

নামী ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনেও কাজ করতে শুরু করেছিলেন সঞ্জয়। টেলিভিশনের পর্দার বিজ্ঞাপনে তাঁর মুখ বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন তিনি। তার পর ছোট পর্দার বিভিন্ন ধারাবাহিকে কাজ করার সুযোগ পান।

০৭ ২৫

ধারাবাহিকে টানা ন’বছর কাজ করার পর কমেডি ঘরানার ধারাবাহিক ‘অফিস অফিস’-এ অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সঞ্জয়। ছোট পর্দায় অভিনয়ের পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও কাজ করতে শুরু করেন তিনি।

০৮ ২৫

বড় পর্দায় সঞ্জয়ের প্রথম অভিনয় ১৯৯৫ সালে। ‘ওহ ডার্লিং! ইয়ে হ্যায় ইন্ডিয়া’ নামের হিন্দি ছবিতে কাজ করেন তিনি। এর তিন বছর পর ‘সত্য’ এবং ‘দিল সে’ ছবিতে অভিনয় করে প্রচারে আসেন সঞ্জয়। তার পর ছোট এবং বড়— দুই পর্দাতেই সমান তালে কাজ করতে থাকেন তিনি।

০৯ ২৫

২০০৫ সালে ‘বান্টি অওর বাবলি’ এবং ‘অপনা স্বপনা মানি মানি’ ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় হওয়ার পর ধারাবাহিক থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন সঞ্জয়। কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের জন্যই নামডাক হয়েছিল তাঁর।

১০ ২৫

এর পর ‘অল দ্য বেস্ট’, ‘গোলমাল: ফান আনলিমিটেড’, ‘ধামাল’, ‘মাসান’-এর মতো তারকাসমন্বিত ছবিতে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয়। লোকের মুখে হাসি ফোটাতে ভালবাসতেন তিনি। কিন্তু অভিনেতার জীবন ‘ট্র্যাজে়ডি’র চেয়ে কিছু কম ছিল না।

১১ ২৫

কাজের চাপে শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল সঞ্জয়ের। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় তাঁকে। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমার পেটের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে আমার পেটের ভিতর থেকে প্রায় ১৫ লিটার পুঁজ বার করেন। বিছানার সঙ্গে মিশে গিয়েছিলাম আমি।’’ সেই সময় মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনি। তবে, নিজের অসুস্থতার কারণে নয়।

১২ ২৫

সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় বলেন, ‘‘অসুস্থ হওয়ার পর আমি বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। বাবার সঙ্গে তখন বেশির ভাগ সময় কাটাতাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিণতি কী অদ্ভুত! সেই সময়েই বাবা আমাকে ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুকে চোখের সামনে থেকে এ ভাবে দেখতে হবে তা কখনও ভাবিনি।’’

১৩ ২৫

বাবাকে হারানোর পর ভেঙে পড়েন সঞ্জয়। কাজ ছেড়ে নিভৃতবাসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অভিনেতা বলেন, ‘‘আমি আর মুম্বই ফিরতে চাইনি। মাকে বলেছিলাম আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসছি। তার পর আর বাড়িতেও ফিরিনি আমি। বাবা চলে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম, এ জীবন তো একটাই। ভগবান যে পৃথিবীতে আমাদের পাঠিয়েছেন, তার সৌন্দর্য উপভোগ করব না! তাই আমি গঙ্গোত্রী চলে গিয়েছিলাম।’’

১৪ ২৫

গঙ্গোত্রী যাওয়ার রাস্তায় একটি ধাবায় কাজ জুটিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেখানে চা এবং ওমলেট বানাতেন তিনি। দোকানের মালিক তাঁকে দিয়ে বাসনও মাজাতেন। সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘‘দোকানের মালিক আমাকে বাসন মাজতে বলেছিলেন। সারা দিন পঞ্চাশটি কাপ মাজতাম আমি। দিনের শেষে ১৫০ টাকা করে আমার হাতে দিতেন দোকানের মালিক।’’

১৫ ২৫

গঙ্গোত্রীতে কোনও পর্যটক যেন সঞ্জয়কে চিনতে না পারেন তাই নিজের দাড়ি-গোঁফ-চুল সব বাড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি। এত কিছু করেও এক পর্যটক তাঁকে চিনে ফেলেন। সঞ্জয়কে ওই পরিস্থিতিতে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি। সঞ্জয়কে দেখার পর তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আরে! আপনি গোলমাল ছবিতে ছিলেন না?’’ এই প্রশ্ন ছুড়েই অভিনেতার সঙ্গে ছবি তোলেন তিনি।

১৬ ২৫

সঞ্জয় এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, গঙ্গোত্রী যাওয়ার খবর ছড়িয়ে গেলে তাঁর মা অভিনেতাকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। ঠিক তার পর রোহিত শেট্টি তাঁকে ‘অল দ্য বেস্ট’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। শুরু হয় সঞ্জয়ের জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

১৭ ২৫

হিন্দি ছবি ছাড়াও ভোজপুরি ছবিতে অভিনয় করেছেন সঞ্জয়। এ ছাড়াও ‘প্রণাম ওয়ালেকুম’ এবং ‘ধামা চৌকধি’ নামের দু’টি ছবি পরিচালনা করেন তিনি। ‘আঁখো দেখি’, ‘বধ’, ‘আংরেজি মে কহতে হ্যায়’-এর মতো ড্রামা ঘরানার ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

১৮ ২৫

অভিনয়ের জন্য বহুল প্রশংসিত সঞ্জয়। কিন্তু তিনি যখন প্রথম ক্যামেরার সামনে কাজ করেছিলেন, তখন তাঁকে একটি দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য আঠাশটি টেক দিতে হয়েছিল। ১৯৯১ সালে ‘চাণক্য’ ধারাবাহিকের সেটে এই ঘটনা ঘটে। ধারাবাহিকের পরিচালক সঞ্জয়কে সহপরিচালকের কাছে রেখে চলে যান। সেখানে বার বার রিহার্সাল করার পর উনত্রিশ নম্বর টেকে সঠিক ভাবে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

১৯ ২৫

সম্পর্ক এবং ভালবাসায় বিশ্বাস করতেন না সঞ্জয়। রোশনি আচার্যকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁদের বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। শোনা যায় যে, বলি অভিনেতা রঘুবীর যাদবের সঙ্গে রোশনির বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। এমনকি তাঁরা নাকি একত্রবাসও করতেন।

২০ ২৫

রঘুবীরের স্ত্রী পূর্ণিমা খ়ড়্গ তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগে জানান, বিয়ের সাত বছর পর তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। রঘুবীর যখন রাজ বারতের ধারাবাহিকে কাজ করছিলেন, তখন অন্য মহিলার প্রেমে পড়েন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায় যে, পরিচালক অভিনেত্রী নন্দিতা দাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর।

২১ ২৫

কিন্তু নন্দিতার সঙ্গে রঘুবীরের সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। নন্দিতা নাকি অভিনেতাকে ছেড়ে চলে যান। এমনটাই দাবি করেছিলেন পূর্ণিমা। তার পর সঞ্জয় যে বিল্ডিংয়ে থাকতেন, সেখানে চলে যান রঘুবীর। সঞ্জয়ের স্ত্রী রোশনির সঙ্গে বহু দিন সম্পর্কে ছিলেন তিনি। রঘুবীর এবং রোশনির নাকি এক পুত্রসন্তান রয়েছে বলে দাবি করেন পূর্ণিমা।

২২ ২৫

শেষমেশ আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন পূর্ণিমা। রঘুবীরের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ কোটি টাকা এবং খোরপোশ হিসাবে মাসিক এক লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন পূর্ণিমা। অন্য দিকে সঞ্জয়েরও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ভালবাসা থেকে ভরসা উঠে গিয়েছিল সঞ্জয়ের। পরে অভিনেতার মা তাঁকে জোর করায় দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তিনি।

২৩ ২৫

কিরণ মিশ্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন সঞ্জয়। বর্তমানে দুই কন্যাকে নিয়ে ভরা সংসার অভিনেতার। মুম্বইয়ে একটি বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন তিনি। সঞ্জয়ের সংগ্রহে বিএমডব্লিউ ৩ সিরিজ় এবং টোয়োটা ইনোভা ক্রিস্টা মডেলের গাড়ি রয়েছে।

২৪ ২৫

মাসপিছু ৫০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেন সঞ্জয়। অভিনেতার বার্ষিক আয় ৬ কোটি টাকা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১১০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে নেটমাধ্যমে নিজের অনুরাগীমহল তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীর সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।

২৫ ২৫

২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দ্য লায়ন কিং’ ছবিতে পুম্বা চরিত্রের মুখে হিন্দি সংলাপের ডাবিং করেছিলেন সঞ্জয়। ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ভুল ভুলাইয়া ২’, ‘সার্কাস’, ‘বচ্চন পাণ্ডে’, ‘বধ’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement