অনুষ্কা শর্মা, করিনা কপূর, সোনম কপূর, আলিয়া ভট্ট হয়ে বিপাশা বসু— তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। স্ফীতোদরের ছবি পোস্ট করে মা হওয়ার খবর দেওয়ার ‘রেওয়াজ’ চলছে নেটমাধ্যমে। দিন, মাস যত এগোচ্ছে, শরীরে যত পরিবর্তন হচ্ছে, ততই বেড়েছে ছবির সংখ্যা। সে ছবি কিন্তু বেশ খোলামেলা। কিন্তু কেন হঠাৎ এ ভাবে ছবি পোস্ট করছেন সেলেবরা? শুধুই কি খবরে থাকার জন্য! নাহ্, নেপথ্যে রয়েছে অন্য সমীকরণ।
এই ধারার সূচনা কিন্তু আরও অনেক কিছুর মতোই হলিউডে। তাঁদের থেকেই ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েছেন বলিউডি সেলেবরা। হলিউডে সাহসী এই পদক্ষেপ প্রথম করেছিলেন ডেমি মুর। সালটা ১৯৯১। একটি পত্রিকার প্রচ্ছদে স্ফীতোদরা ডেমির ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। গায়ে একটা সুতোও ছিল না প্রাক্তন ব্রুস-ঘরনির। মেয়ে স্কাউট উইলিস তখন ডেমির গর্ভে ছিল ডেমির। ছবিটি নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল।
হাল আমলে বেয়ন্সে, কিম কার্দাশিয়ান, সেরেনা উইলিয়ামস, গিনেথ প্যাল্ট্রো, কেটি পেরি, জেসিকা বিয়েল— স্ফীতোদরের ছবি পোস্ট কে করেননি! কেউ খুব সাহসী হয়েছেন। কেউ আবার রেখেঢেকে পোস্ট দিয়েছেন।
হলিউড থেকে সে হাওয়া যে বলিউডে আসবে, এক প্রকার নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু শুধুই কি অনুপ্রেরণা! হলিউডি সেলেবরা করছেন বলেই আমাদেরও করতে হবে! না বোধ হয়। এর নেপথ্যে রয়েছে টাকার অঙ্ক।
শুধু সিনেমা, ওটিপি প্লাটফর্মে অভিনয় করেই নয়, নেটমাধ্যম থেকেও এখন বিপুল টাকা রোজগার করেন সেলেবরা। নিজেদের ছবি বা ভিডিয়ো পোস্ট করে। সেই টাকার অঙ্ক কখনও টপকে যায় কোটির অঙ্ক।
নেটমাধ্যম থেকে কী ভাবে রোজগার করেন এই সেলেবরা? যে সেলেব যত অন্য রকম ছবি বা ভিডিয়ো পোস্ট করেন, তাঁর তত ফলোয়ার। আর সেই ফলোয়ারের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে টাকার অঙ্ক। ফলোয়ারের সংখ্যা বেশি হলে এক একটি পোস্ট থেকে ততটাই টাকা।
আবার কোনও সেলেব চাইলে কোনও পণ্য বা পরিষেবার হয়ে প্রচারও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওই পণ্য উৎপাদনকারী বা পরিষেবা সংস্থার থেকে কমিশনের ভিত্তিতে টাকা পেয়ে থাকেন। সেলেবরা আবার অনেক সময় নিজেদের ছবির স্বত্ব কোনও পিআর সংস্থাকে বিক্রি করে দেন। পিআর সংস্থা ওই ছবি নেটমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে প্রচার করে ঘুরপথে টাকা আয় করে।
নেটমাধ্যমে এই তারকাদের এক একটি পোস্ট দিয়ে যা আয় হয়, শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে আয়ের নিরিখে শীর্ষে রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। সেখানে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় সাত কোটি ৩০ লক্ষ। সূত্র বলছে, একটি পোস্ট দিয়ে তাঁর আয় হয় এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকা।
মা হতে চলেছেন আলিয়া ভট্ট। ইতিমধ্যেই তাঁর স্ফীতোদরের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। ইনস্টাগ্রামে আলিয়ার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লক্ষ। সূত্রের খবর, এক একটি পোস্ট থেকে তাঁর আয় এক কোটি টাকা।
ইনস্টাগ্রামে দীপিকা পাড়ুকোনের ফলোয়ারের সংখ্যা ছ’কোটি ৪০ লক্ষ। কোনও পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন করে একটি পোস্ট দিয়ে দীপিকা নেন দেড় কোটি টাকা।
এই ফলোয়ার ধরে রাখারও রয়েছে অনেক ঝক্কিও কিন্তু কম নয়। নিত্যনতুন পোস্ট। সে বেড়ানোর হোক, কঠিন যোগাভ্যাসের হোক বা স্ফীতোদরের। পিছিয়ে নেই পুরুষ সেলেবরাও। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো থেকে লিওনেল মেসি, এ দেশের বিরাট কোহলী থেকে সইফ আলি খান— সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে পাশে নিয়ে একের পর এক ছবি পোস্ট করে গিয়েছেন।
ভারতীয়দের মধ্যে ইনস্টাগ্রামে সব থেকে বেশি ফলোয়ারের সংখ্যা বিরাট কোহলীর। ২০ কোটি ফলোয়ার রয়েছে তাঁর। সূত্র বলছে, ইনস্টাগ্রামে এক একটি পোস্ট করে বিরাটে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন।
স্ত্রী অনুষ্কা যখন মেয়ে ভামিকাকে গর্ভে ধরেছিলেন, তখন তাঁকে নিয়ে একাধিক ছবি পোস্ট করতেন বিরাট। কম যাননি অনুষ্কাও। স্ফীতোদরে তাঁর শীর্ষাসনের ছবি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
তৈমুর যখন গর্ভে, তখন ফ্যাশন র্যাম্প থেকে বিজ্ঞাপন হয়ে ছবি— করিনা কপূর ছিলেন সর্বত্র। ছোট ছেলে জে যখন গর্ভে, তখন দেশে লকডাউন। বাড়ির বাইরে সে ভাবে দেখা যায়নি করিনাকে। তবে ঘরে বসেই একের পর এক সাহসী ছবি দিয়ে গিয়েছেন। ইনস্টাগ্রামে করিনার ফলোয়ারের সংখ্যা ৫১ লক্ষ ২৪ হাজার ১৭৫। আয়টা অনুমান করে নেওয়াই যায়।
ইনস্টাগ্রামে সোনম কপূরের ফলোয়ারের সংখ্যা তিন কোটি ৩২ লক্ষেরও বেশি। যবে থেকে গর্ভধারণ করেছেন, একের পর এক ছবি দিয়েছেন ফ্যাশনিস্তা সোনম। নিজের বেবি শাওয়ারের ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। সূত্র বলছে, এ সব থেকে তিনি আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা।
গুঞ্জন ছিল অনেক দিন ধরেই। শেষে রীতিমতো ফটোশ্যুট করে সন্তানধারণের কথা ঘোষণা করলেন বঙ্গতনয়া বিপাশা বসু। সাদা শার্টের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে তাঁর স্ফীতোদর। পাশে রয়েছেন হবু বাবা কর্ণ। ইনস্টাগ্রামে সেই গত বছরের শেষেই বিপাশার ফলোয়ারের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। সুতরাং এই পোস্ট থেকে তাঁর লক্ষ্মীলাভের পরিমাণও আন্দাজ করেই নেওয়া যায়।
মাস চারেক হল কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন, এর মধ্যেই আবার স্বামী গুরমিত এবং মেয়ে লিয়ানা সহ সোনোগ্র্যাফি রিপোর্টের ছবি নেটমাধ্যমে পোস্ট করে দ্বিতীয় বার মা হওয়ার সুখবর দিয়েছেন অভিনেত্রী দেবিনা বন্দ্যোপাধ্যায়।