মায়ানগরীতে আবার বেজে উঠেছিল বিয়ের সানাই। ১৮ জুন মুম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেল ফুল এবং আলোর সজ্জায় সেজে উঠেছিল। উপলক্ষ বলিপাড়ার বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্রের পৌত্র, সানি দেওলের পুত্র কর্ণ দেওলের বিয়ের অনুষ্ঠান। দীর্ঘ কালের বান্ধবী দৃশা আচার্যের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন দেওল পরিবারের পুত্র।
মেহন্দি থেকে সঙ্গীত, কর্ণ-দৃশার বিয়েতে বাদ পড়েনি কোনও উদ্যাপনই। সমাজমাধ্যমের পাতায় দেখা গিয়েছে সেই সব অনুষ্ঠানের ছবিও। ঘোড়ায় চেপে পাগড়ি বেঁধে সাদা শেরওয়ানিতে সেজে এসেছিলেন কর্ণ। অভিনেতার বরযাত্রী দলে শামিল হন ধর্মেন্দ্র, সানি এবং ববি।
লাল রঙের লেহঙ্গায় সেজেছিলেন দৃশা। হাসিমুখে ছাঁদনাতলায় উপস্থিত হন তিনি। সকালে বিয়ে এবং রাতে ছিল রিসেপশনের অনুষ্ঠান। ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হতেই লাড্ডুর থালা হাতে বাইরে এসেছিলেন সানি এবং তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র রাজবীর।
কর্ণ-দৃশার বিয়ে উপলক্ষে মুম্বইয়ের হোটেলে বসেছিল চাঁদের হাট। দীপিকা পাড়ুকোন, রণবীর সিংহ, সলমন খান, আমির খান-সহ বলিউডের নামজাদা বহু তারকা উপস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।
বলি গায়ক সোনু নিগম তাঁর গানের জাদুতে বিয়ের অনুষ্ঠান জমিয়েছিলেন। কিন্তু কর্ণের বিয়ের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন বলিপা়ড়ার বহু নামকরা তারকা। অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও।
ধর্মেন্দ্রের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী হেমা মালিনী এবং তাঁদের দুই কন্যা এষা এবং অহনা দেওলকে বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। বলিপা়ড়া সূত্রে খবর, এষা এবং অহনাকে নিজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সানি। জীবনসঙ্গীদের নিয়ে দেওল পরিবারের দুই কন্যা কর্ণের বিয়েতে আসবেন বলেই আশা করেছিলেন সানি।
কিন্তু এষা এবং অহনার মধ্যে কাউকেই দেখা যায়নি কর্ণের বিয়েতে। উপস্থিত ছিলেন না তাঁদের মা হেমাও। কানাঘুষো শোনা যায়, হেমাকে বিয়ে করার পর ধর্মেন্দ্রের পরিবার কখনও দেওল পরিবারের পুত্রবধূ হিসাবে হেমাকে মেনে নেননি।
এমনকি বাড়ির চৌকাঠ পেরোনোর অনুমতিও দেওয়া হয়নি হেমাকে। সেই কারণেই বিয়েতে অনুপস্থিত ছিলেন হেমা। মা যাননি বলে অনুষ্ঠানে শামিল হননি দুই কন্যাও।
ধর্মেন্দ্রের কাছের বন্ধু এবং দেওল পরিবারের প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও নিমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন না অমিতাভ বচ্চন। মুম্বইয়ের যে কলোনিতে দেওল পরিবারের বাংলো রয়েছে, সেই কলোনিতেই থাকেন অমিতাভ। ধর্মেন্দ্রের ভাল বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও অমিতাভকে বিশেষ পছন্দ করেন না সানি।
সানি এবং অমিতাভের মধ্যে দেওয়াল তৈরি হয় প্রায় তিন দশক আগে। ১৯৯৪ সালে টোনি জুনেজার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘ইনসানিয়ত’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সানি। অতিথিশিল্পী হিসাবে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ।
কিন্তু ‘ইনসানিয়াত’ ছবির প্রচারের সময় অবাক হয়ে যান সানি। ছবির পোস্টার যখন প্রকাশ্যে আসে, সানি লক্ষ করেন তাঁর ছবি অমিতাভের ছবির পিছনে নয় তো অমিতাভের পাশে রয়েছে। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেও পোস্টারে অতিথিশিল্পীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দেখে সানি ভাবেন তাঁকে প্রতারিত করা হয়েছে।
তার পর থেকেই ‘ইনসানিয়ত’ ছবির প্রযোজক, পরিচালকের পাশাপাশি অমিতাভের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন সানি। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, এই কারণেই বচ্চন পরিবারের কাউকে পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে নিমন্ত্রণ করেননি সানি।
কর্ণের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি শাহরুখ খানকেও। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডর’ ছবির শুটিংয়ের সময় শাহরুখের সঙ্গে সানির অশান্তি হয়।
‘ডর’ ছবির পর আর শাহরুখের সঙ্গে কোনও ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি সানিকে। বলি সূত্রে খবর, ওই একই কারণে নিমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ছিলেন না শাহরুখ।
পেশাগত কারণে বলি অভিনেতা অনিল কপূরের সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই সানির। ‘রাম অবতার’ এবং ‘জোশিলে’ ছবির শুটিংয়ের সময় সানি এবং অনিলের বনিবনা না হওয়ার কারণে দুই অভিনেতার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, অনিলের সঙ্গে সানির মতের অমিল হওয়ায় দুই অভিনেতা একে অপরের জামার কলার পর্যন্ত ধরে ফেলেছিলেন। এত বছর দুই তারকা ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন কিন্তু কেউ কখনও একে অপরের বাড়ির কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। তাই কর্ণের বিয়েতেও অনিলকে দেখা যায়নি।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ডিম্পল কপাডিয়ার সঙ্গে সানির ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থাকলেও পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি ডিম্পলকে। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ডিম্পলের সঙ্গে নাকি সানির পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে।
কয়েক মাস আগে সমাজমাধ্যমে সানি এবং ডিম্পলের একটি অন্তরঙ্গ ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ডিম্পলের বোনের পুত্র কর্ণ কপাডিয়াকেও হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন সানি। কিন্তু এত গভীর বন্ধুত্ব থাকা সত্ত্বেও ডিম্পলকে পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে নিমন্ত্রণ করেননি সানি।
সম্প্রতি কর্ণ জোহর পরিচালিত ‘রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে রণবীর সিংহ এবং আলিয়া ভট্টের পাশাপাশি অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ধর্মেন্দ্রকেও। কিন্তু পুত্রের বিয়েতে অতিথিদের তালিকায় ছিলেন না পরিচালক কর্ণ।
বলিপাড়ার দাবি, টিনসেল নগরীর এমন পার্টি খুব কম রয়েছে যেখানে কর্ণকে দেখা যায় না। অন্য দিকে কর্ণও দাবি করেন যে সকল বলি তারকার সঙ্গেই তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাই সানির পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে কর্ণকে কেন দেখা গেল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ছাড়া অজয় দেবগন, কাজল, আদিত্য চোপড়া, রানি মুখোপাধ্যায়ের মতো তারকাদেরকেও সানির পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। সকলেই দেওল পরিবারের প্রতিবেশী। কিন্তু পেশাগত কারণে সকলের সঙ্গে সমস্যা থাকায় কাউকেই পুত্র কর্ণের বিয়ে উপলক্ষে নিমন্ত্রণ করেননি সানি।