দুই দশকের বেশি সময় ধরে বলি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন শরমন জোশী। কখনও ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর রাজু রস্তোগি, কখনও বা ‘রং দে বসন্তি’র সুখি— দর্শকের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন শরমন। কিন্তু বেশি কাজ করার তাগিদে একাধিক বি গ্রেড ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে কেরিয়ার নষ্ট করে ফেললেন অভিনেতা।
১৯৭৯ সালের ২৮ এপ্রিল নাগপুরের এক গুজরাতি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম শরমনের। তাঁর বাবা অরবিন্দ জোশী, কাকিমা সরিতা জোশী থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় শরমনের।
পড়াশোনা শেষ করার পর থিয়েটারের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েন শরমন। একই সঙ্গে থিয়েটারে অভিনয়, প্রযোজনা এবং পরিচালনার কাজ সামলাতেন তিনি। হিন্দি, মরাঠি এবং গুজরাতি থিয়েটারে অভিনয় করতেন শরমন।
একটি গুজরাতি নাটকে বধিরের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন শরমন। সেই নাটক তিন বছর ধরে চলেছিল। সাড়ে পাঁচশোর বেশি শো করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন নাটকে কমেডি চরিত্রে কাজ করেছিলেন শরমন।
১৯৯৯ সালে বড় পর্দায় প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় শরমনকে। ‘গডমাদার’ ছবিতে শাবানা আজমির মতো তারকার সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি। তার পর ‘স্টাইল’, ‘এক্সকিউজ মি’, ‘শাদি নম্বর ১’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার এক বছর পর প্রেম চোপড়ার কন্যা প্রেরণার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন শরমন। বিয়ের ছ’বছর পর তার কেরিয়ারে নতুন মোড় আসে। একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।
২০০৬ সালে ‘রং দে বসন্তি’ এবং ‘গোলমাল’ ছবিদু’টি মুক্তি পায়। এই দু’টি ছবিতে শরমনের অভিনয় দর্শকের মনে ধরে। তার পর ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’ এবং ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন শরমন।
২০০৯ সালে টেলিভিশনে একটি গেম শোয়ের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শরমন। ‘তরক মেহতা কা উল্টা চশমা’ ধারাবাহিকে অতিথি শিল্পী হিসাবেও কাজ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
‘গোলমাল’ ছবিতে কাজ করে প্রশংসা পাওয়ার পর আবার শরমনের কেরিয়ারে ছন্দপতন ঘটে। কখনও কম বাজেটের কমেডি ছবিতে কখনও বা বি গ্রে়ড ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। ‘গোলমাল’ ছবির পরবর্তী পর্বগুলিতেও তাঁকে আর দেখা যায়নি।
এক সাক্ষাৎকারে শরমন বলেন, ‘‘আমি সত্যিই ‘গোলমাল’ ছবিতে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়। আমার ম্যানেজার কথা বলার সময় আমার জন্য যে পারিশ্রমিক দাবি করেছিলেন, তা দিতে প্রযোজক রাজি হননি। তাই পরের ছবিগুলিতে আমাকে অভিনয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি।’’
পরে একাধিক বি গ্রেড ছবিতে কাজ করেন শরমন। ‘হেট স্টোরি ৩’, ‘ওয়াজা তুম হো’, ‘১৯২০ লন্ডন’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু সবক’টি ছবিই ফ্লপ করে।
‘বারিশ’ এবং ‘পবন অ্যান্ড পূজা’ নামে দু’টি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে শরমনকে। কিন্তু দু’টির মধ্যে একটিও জনপ্রিয় হয়নি।
বর্তমানে বলিপাড়া থেকে হারিয়ে গিয়েছেন শরমন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘দশ বছরের উপর হয়ে গেল আমি বলিপাড়া থেকে দূরে সরে গিয়েছি। জানি না কেন আমি সকলের সঙ্গে মিশতে পারি না। এখনও আমার নিজেকে বহিরাগত মনে হয়।’’
চলতি বছরে ‘কনগ্রাচুলেশনস’ নামে একটি গুজরাতি ছবি মুক্তি পেতে চলেছে, এই ছবিতে অভিনয় করবেন শরমন। তা ছাড়া নেটমাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার প্রচারের কাজ করেন তিনি।
বলিপাড়া থেকে সরে এলেও ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। নয় লক্ষের বেশি অনুরাগী রয়েছে অভিনেতার।