আশির দশকে সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় পদার্পণ সঞ্জয় দত্তের। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সঞ্জয় যেমন একের পর এক বক্স অফিস কাঁপানো ছবি উপহার দিয়ে গিয়েছেন, ঠিক তেমনই শুটিং হওয়ার পর তিনি বাদও পড়েছেন ছবি থেকে।
বলিউডজগতে এক দশক কাটানোর পর সঞ্জয় ওরফে সকলের প্রিয় ‘মুন্নাভাই’-এর কাছে ‘খুদা গাওয়া’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে। এই ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মুকুল এস আনন্দ।
মুকুল তাঁর ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেছে নেন শ্রীদেবীকে। ক্যামিয়ো চরিত্রের জন্য অমিতাভ বচ্চনকে প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু ইনস্পেক্টরের চরিত্রের জন্য কাউকেই পছন্দ হচ্ছিল না পরিচালকের।
মুকুল শেষ পর্যন্ত সঞ্জয়ের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যান। মুকুলের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান তিনি। সঞ্জয়ের হাতে সেই মুহূর্তে কয়েকটি ছবির কাজ ছিল। যে হেতু ‘খুদা গাওয়া’ ছবির শুটিংয়ের বেশির ভাগ বাইরে হওয়ার কথা ছিল, সেই কারণে এই ছবির কাজই আগে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
‘সাহিবা’ ছবির শুটিংয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বেন বলে সত্তর দিনের মধ্যে সঞ্জয় তাঁর সব দৃশ্য শুট করে নেওয়ার অনুরোধ করেন মুকুলকে। শুটিং শুরু হওয়ার আগে সঞ্জয় জানতেন যে, এই ছবিতে অমিতাভ একটি ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করছেন। কিন্তু সেটে এসে অবাক হয়ে যান সঞ্জয়।
সঞ্জয় লক্ষ করেন, সেটের মধ্যে অমিতাভকে নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন মুকুল। যে নির্ধারিত সময়ের ভিতর অমিতাভের অংশটুকু শুট হয়ে যাওয়ার কথা, তার থেকেও বেশি সময় সেটে থাকছেন অমিতাভ। নতুন নতুন দৃশ্যে অভিনয় করতেও দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
সত্তর দিনের মধ্যে প্রতি দিন সেটে উপস্থিত থাকতেন সঞ্জয়। প্রায় ৮০ শতাংশ শুটিং শেষ করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ছবি মুক্তির পর দেখা যায়, সঞ্জয়ের একটিও দৃশ্য তাতে নেই। বরং ইনস্পেক্টরের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় দক্ষিণী অভিনেতা নাগার্জুনকে।
নায়ক বদলের এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে নায়িকা এবং পরিচালকের শলাপরামর্শ। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সঞ্জয়কে ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করতেন না শ্রীদেবী।
সঞ্জয়কে নিয়ে নানা রকম কটু মন্তব্য কানাঘুষোয় শুনতে পান শ্রীদেবী। তাই সঞ্জয়ের সঙ্গে কাজ করার সময় সেটে সহজ হতে পারতেন না তিনি। তাঁর সমস্যার কথা মুকুলকে সরাসরি জানান অভিনেত্রী।
ছবির অধিকাংশ শুট হয়ে যাওয়ার পর যদি সঞ্জয়কে বাদ দেওয়া হয়, তা হলে বিপদে পড়বেন মুকুল। সে কথা শ্রীদেবীকে জানান পরিচালক। তখন ওই চরিত্রের জন্য নাগার্জুনের নাম প্রস্তাব করেন নায়িকা।
শ্রীদেবী জানান, সঞ্জয়কে ছবি থেকে বাদ দিয়ে নাগার্জুনের সঙ্গে আবার নতুন করে শুটিং করলে মুকুলের কোনও সমস্যা হবে না। নায়িকার প্রস্তাব মনে ধরে মুকুলের। বুঝতে পারেন, নাগার্জুন ‘খুদা গাওয়া’ ছবিতে অভিনয় করলে আদতে লাভ হবে মুকুলেরই।
ছবির পাশাপাশি বিভিন্ন নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনের জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করেছিলেন মুকুল। কিন্তু একাধিক বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি স্টুডিয়ো ভাড়া করতে হত মুকুলকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, হায়দরাবাদে নিজস্ব স্টুডিয়ো রয়েছে নাগার্জুনের। অভিনেতাকে ছবির প্রস্তাব দেওয়ার সময় মুকুল হায়দরাবাদের স্টুডিয়োয় বিজ্ঞাপন শুট করার অনুমতিও চেয়ে নেন।
মুকুলের কাজের জন্য বিনামূল্যে স্টুডিয়ো ভাড়া দিতে রাজি হয়ে যান নাগার্জুন। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, এক ঢিলে দুই পাখি মারেন মুকুল। নাগার্জুনকে নিজের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগও দেন। অন্য দিকে, বিনামূল্যে বহু দিন কাজ করার জন্য ফাঁকা স্টুডিয়োও পেয়ে যান তিনি।
শ্রীদেবীর সঙ্গে নাগার্জুনের সম্পর্কের রসায়নও খুব নিবিড়। তাই নাগার্জুনের বিপরীতে অভিনয় করতে আপত্তি জানাননি তিনি। এ ভাবেই নায়িকা এবং পরিচালকের স্বার্থপূরণের উদ্দেশ্যে ‘খুদা গাওয়া’ ছবি থেকে বাদ পড়েন সঞ্জয়। আবার নাগার্জুনের সঙ্গে নতুন করে সেই বাদ যাওয়া দৃশ্যগুলির শুটিং হয়।
সম্প্রতি ‘খুদা গাওয়া’ ছবির প্রযোজক মনোজ দেসাই এক সাক্ষাৎকারে জানান, সঞ্জয়ের পাশাপাশি এই ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল অভিনেত্রী ফারাহ নাজ়কেও। ফারাহের বদলে অভিনয় করতে দেখা যায় শিল্পা শিরোদকরকে।
মনোজের দাবি, সঞ্জয় এবং ফারাহের দৃশ্যগুলি ছাড়াও একটি গানের দৃশ্য বাদ পড়েছিল ‘খুদা গাওয়া’ ছবিটি থেকে। ছবি মুক্তির পর কানাঘুষো শোনা যায়, সঞ্জয় নাকি মুকুলের সঙ্গে ঝামেলা করে শুটিংয়ের মাঝে বেরিয়ে যান। কিন্তু এ যে পুরোটাই রটনা, তা নিজে থেকেই জানিয়েছিলেন মুকুল।