ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানো হয়ে গিয়েছে দুই দশক। প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার দু’বছরের মধ্যে আসল পরিচয়ের পরিবর্তে ‘সিরিয়াল কিসার’ হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বলি অভিনেতা ইমরান হাশমি। কিন্তু ছোট থেকে অভিনয়ে আসার কোনও ইচ্ছা ছিল না তাঁর। স্বজনপোষণের কারণেই স্টার হতে পেরেছিলেন তিনি।
১৯৭৯ সালের ২৪ মার্চ মুম্বইয়ে জন্ম ইমরানের। তাঁর বাবা সইদ আনওয়ার হাশমি পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাহারোঁ কি মঞ্জিল’ ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।
ইমরানের ঠাকুরমা মেহেরবানো মহম্মদ আলিও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও পেশার খাতিরে ভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন তিনি। পূর্ণিমা নামে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত ছিলেন তিনি।
দু’বার বিয়ে করেছিলেন পূর্ণিমা। দ্বিতীয় বার প্রযোজক-পরিচালক ভগবান দাস বর্মার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেত্রী। সেই সূত্রে ইন্ডাস্ট্রির বর্মা পরিবারের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপিত হয় ইমরানের।
ইমরানের ঠাকুরমা মেহেরবানোর বোন শিরিন মহম্মদ আলি ছিলেন ভট্ট পরিবারের পুত্রবধূ। প্রযোজক, পরিচালক মহেশ ভট্ট এবং মুকেশ ভট্টের মা ছিলেন শিরিন। সেই সূত্রে ভট্ট পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় ইমরানের।
মহেশ, মুকেশ এবং রবীন ভট্ট সম্পর্কে ইমরানের কাকা। বলি অভিনেত্রী আলিয়া এবং পূজা ভট্ট ইমরানের তুতো বোন।
বলিপাড়ার অন্যতম পরিচালক সুনীল দর্শন, ধর্মেশ দর্শন এবং মোহিত সুরিও সম্পর্কে ইমরানের তুতো ভাই। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ইমরান হলেন ‘ইন্ডাস্ট্রি চাইল্ড’। শৈশব থেকেই হিন্দি সিনেমার মাঝে বড় হয়েছেন তিনি।
কিন্তু অভিনয় করার মোটেও ইচ্ছা ছিল না ইমরানের। তিনি ভিএফএক্স নিয়ে কাজ করতে চাইতেন। পরিচালনার দিকেও আগ্রহ জন্মায় তাঁর।
একটি ছবির সম্পাদনা যত ভাল হয়, সেই ছবির মানও তত ভাল হয়ে ওঠে— এই ধারণা ছিল ইমরানের। তাই ছবি কাটছাঁটের দিকেও মন দিয়েছিলেন তিনি।
সম্পাদনার ক্ষেত্রেও হাত পাকিয়েছিলেন ইমরান। মহেশ ভট্টের কয়েকটি ছবিতে কাঁচি চালানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্পাদনায় হাতেখড়ি হওয়ার পর সেই কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন ইমরান।
মহেশের সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে সহ-পরিচালক হিসাবে কাজ করার সুযোগ পান ইমরান। ‘রাজ়’ এবং ‘কসুর’ ছবিতে সহ-পরিচালক ছিলেন তিনি। কিন্তু ইমরানের মধ্যে এক জন অভিনেতাকে খুঁজে পান মহেশ।
ইমরান যখন মহেশের কাছ থেকে পরিচালনার কাজ শিখছিলেন, তখন মহেশ তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি অভিনয় নিয়ে এগিয়ে যেতে পারো।’’ কাকার কথা মেনে অভিনয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন ইমরান।
বলি অভিনেত্রী আমিশা পটেলের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল ইমরানের। দু’জনের ট্রায়াল শুটও হয়। কিন্তু তার পর সেই ছবি থেকে বাদ পড়েন তিনি।
২০০১ সালে আমিশা পটেল অভিনীত ছবি ‘ইয়ে জ়িন্দেগি কা সফর’ মুক্তি পায়। যে চরিত্রে ইমরানের অভিনয়ের কথা ছিল, সে চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল জিমি শেরগিলকে।
২০০৩ সালে বিক্রম ভট্ট পরিচালিত ‘ফুটপাত’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে পা রাখেন ইমরান। বিপাশা বসুর বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। প্রথম ছবির পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ইমরানকে।
‘মার্ডার’, ‘আশিক বনায়া আপনে’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘জন্নত’, ‘দ্য ট্রেন’-এর মতো বহু ছবিতে কাজ করতে দেখা গিয়েছে ইমরানকে। কেরিয়ারের শুরুতে ছবির অধিকাংশ দৃশ্যে নায়িকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তাই ‘সিরিয়াল কিসার’ নামে জনপ্রিয়’ হয়ে উঠেছিলেন ইমরান।
এক সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেছেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে স্বজনপোষণ রয়েছে বলেই আমি অভিনয়ে নামতে পেরেছি। মহেশ ভট্ট না থাকলে আমি অভিনেতা হতে পারতাম না।’’