নব্বইয়ের দশকে হিন্দি ফিল্মজগতে উপার্জনের ভিত্তিতে বলিপাড়ার যে অভিনেতারা এগিয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাহরুখ খান, আমির খান এবং সলমন খান। বলিজগতের তিন খান ছাড়াও সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় কুমার, সানি দেওল-সহ অন্য অভিনেতারা কোনও অংশে কম ছিলেন না। সকলেই নিজেদের অভিনয়গুণে দর্শকমনে নিজের জায়গা করেছেন।
তবে বলিপাড়ায় অন্দরমহলে মাঝেমধ্যেই কানাঘুষো শোনা যায়, অভিনেতারা তাঁদের নিজস্ব পরিসরে যতই সফল হন না কেন তাঁদের ব্যক্তিগত অশান্তি ফিল্মজগতেও প্রভাব ফেলে। আমির খান এবং সানি দেওলের মধ্যে অশান্তিও বলিপাড়ায় ছাপ ফেলেছিল।
আমির এবং সানির ঝামেলার সূত্রপাত শাহরুখের একটি ছবিকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৩ সালে যশ চোপড়া পরিচালিত ‘ডর’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার বক্স অফিস থেকে ব্যাপক সাড়া পায়। এই ছবিকে ঘিরেই অশান্তি শুরু হয় দু’জনের।
‘ডর’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন শাহরুখ। কিন্তু এই চরিত্রের জন্য যশের প্রথম পছন্দ ছিলেন বলিপাড়ার অন্য খান। আমিরকে এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন যশ।
যশের প্রস্তাবে ‘ডর’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজিও হয়ে যান আমির। পরিচালক যখন আমিরকে চিত্রনাট্যের খসড়া পড়ে শোনাচ্ছিলেন, সেই সময় থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত।
‘ডর’ ছবির একটি দৃশ্য আমিরকে বর্ণনা করছিলেন যশ। ছবিতে সানিকে ছুরি দিয়ে দু’বার কোপ মারার কথা ছিল আমিরের। আহত হয়ে তার পর সেখান থেকে পালিয়ে যেতেন সানি। পরে আহত অবস্থাতেই আবার ফিরে এসে আমিরের সঙ্গে মারপিট করতে হত সানিকে। এই দৃশ্যটি শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন আমির।
যশকে উদ্দেশ করে আমির বলেন, ‘‘সানির মধ্যে এত দম রয়েছে যে দু’বার ছুরির কোপ খাওয়ার পরেও আবার মারপিট করতে আসবে?’’ নেহাত মজার ছলেই যশকে এই কথা বলেছিলেন আমির।
আমিরের পর সানির সঙ্গে দেখা করতে যান যশ। একই দৃশ্যের বর্ণনা সানিকেও করেন পরিচালক। তার পর আমিরের মন্তব্যও উল্লেখ করেন তিনি। যশের মুখে সেই মন্তব্য শুনে তির্যক ভাবেহাসেন সানি।
আমিরকে জবাব দেওয়ার ভঙ্গিতে সানি বলেন, ‘‘আমার শরীরে এতটাই জোর রয়েছে যে এর চেয়েও বেশি আহত হওয়ার পরে আমি আমিরকে মারতে পারব।’’
সানির মন্তব্য আমিরের কানে পৌঁছতে দেরি হয়নি। এর পরই ‘ডর’ ছবির কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন তিনি। পুরনো এক সাক্ষাৎকারে আমির এই প্রসঙ্গে খোলসা করেন।
আমির বলেন, ‘‘সেই সময় আমার ‘ইমেজ’ বাঁচাতে চেয়েছিলাম আমি। সানি আমাকে এত বার মারুক তা চাইনি। যশজি আমায় জানিয়েছিলেন যে, ছবিতে অ্যাকশন দৃশ্যের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করা হয়নি। সানি যত বার আমার গায়ে হাত তুলবে, আমিও তত বার তুলব। তবুও কেন জানি না আমার মন সায় দিল না। নিজের ‘স্ক্রিন ইমেজ’ বাঁচানোর চেষ্টা করা কোনও ভুল নয়।’’
আমির অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর শাহরুখ খলনায়কের চরিত্রে কাজ করার জন্য রাজি হন এবং সকলের নজর কাড়েন। তাঁর মুখে ‘ক...ক...কিরণ’ ডাক শুনলে এখনও শিহরণ জাগে দর্শকের।
১৯৯৩ সালে যশ পরিচালিত ‘পরম্পরা’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল আমিরকে। বক্স অফিসে সেই ছবি মুখ থুবড়ে পড়ে।
‘ডর’ ছবির প্রস্তাব ফেরানোর ১৩ বছর পর আবার যশরাজ ফিল্মস প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছিলেন আমির। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফনা’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
তবে যশরাজ ফিল্ম প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করলেও কেরিয়ার জীবনে সানির সঙ্গে জুটি বেঁধে কোনও ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি আমিরকে।
বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, ‘ডর’ ছবিকে ঘিরে দুই অভিনেতার মধ্যে যে অশান্তি শুরু হয় তার সমাধান হয়নি। সেই কারণে সানির সঙ্গেও কখনও কাজ করেননি আমির। তবে এই নিয়ে আমির এবং সানির মধ্যে কেউই কোনও মন্তব্য করেননি।