খাদ্যপ্রেমীরা কি জানেন খাদ্য দি ‘বস’ থুড়ি খাদ্য দিবস কবে?
দিন বেছে খাওয়াদাওয়ায় তাঁরা বিশ্বাসী নন— জানা কথা। কিন্তু যে খাবারকে তাঁরা স্রেফ ভালবেসে খান, সেই খাবারের অস্তিত্বকে উদ্যাপন করবেন না!
ফি বছর খাদ্য দিবস পালন করে বিশ্বের দেড়শোর বেশি দেশ। ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। বস্তুত ভারত খাদ্য দিবস পালন করে আসছে প্রায় ৪০ বছর ধরে।
১৯৭৯ সালে প্রথম বার রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পায় খাদ্য দিবস। ১৯৮১ সাল থেকে তা পালন করতে শুরু করে আমেরিকা। ধীরে ধীরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য দেশগুলিও খাদ্য দিবসের তাৎপর্য বুঝতে পেরে এই উদ্যাপনে যোগ দেয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, গোটা পৃথিবীতে যেখানে কোটি কোটি মানুষ দু’বেলা স্বাস্থ্যকর খাবার আর স্বচ্ছ পানীয় জলের আশায় হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন, সেখানে খাবারের জন্য একটি দিন উদ্যাপনের ‘বিলাসিতা’র কি সত্যিই কোনও প্রয়োজন আছে?
দ্য ইউনাইটেড নেশনস ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ইউএনএফএও) মনে করে, আছে। তাদের মতে এই দিনটি জরুরি। কারণ ওই কোটি কোটি মানুষের কথা মাথায় রেখেই এই দিনটি পালন করার কথা ভেবেছিল তারা।
বিশ্ব জুড়ে এখন বহু দেশই খাদ্য দিবসে খাদ্যোৎসবের আয়োজন করে। ভারতেও এমন হয় না তা নয়। আবার এই দিন অনেকে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণেরও ব্যবস্থা করেন।
ইউএনএফএও মনে করে, খাদ্য দিবস এই দ্বিতীয় শ্রেণির উদ্যাপনকেই উৎসাহ দেয়। কারণ তাতে অন্তত কিছু মানুষ উপকৃত হন।
কিন্তু সারা বছর অনাহারে থাকা মানুষগুলো এক দিন পেট ভরে খাওয়াদাওয়া করে কী করবেন?
ইউএনএফএও অবশ্য মনে করে, স্রেফ এক দিনের খাওয়াদাওয়াটা আসলে শুরু। এই যে অনাহারে থাকা মানুষগুলোর জন্য ভাবনা, তাতে নাড়া দেয় এই দিনটা।
প্রতি বছর এই দিনে কিছু মানুষ তো জানতে পারেন, এই অনাহারী মানুষগুলোর কথা। তার মধ্যে কয়েক জন তো মনে করেন, কিছু করা দরকার এঁদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য। এই ভাবনাটাই তো আদতে ভাল কাজের শুরু।
খাদ্য দিবসের লক্ষ্য এই সচেতনতাটাই তৈরি করা। রাষ্ট্রসঙ্ঘ চায়, যাঁদের কাছে অতিরিক্ত আছে, তাঁরা এই কিছু না থাকা মানুষগুলোর কথা জানতে পারুন। তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। তাই তো খাদ্য দিবসের উদযাপনে মাঝে মধ্যেই ঘুরেফিরে আসে একটি ট্যাগলাইন।
‘‘কেউ যেন বাকি না থেকে যায় বা কারও পাত ফাঁকা না থাকে।’’ একান্নবর্তী পরিবারের সবাইকে খেতে বসিয়ে হেঁশেল ঠেলে খাবার পরিবেশন করতে আসা মা-জেঠিমাদের মতোই ভূমিকা ইউএনএফএও-র।
তাই প্রতি বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করা হয় ইউএনফএওয়ের জন্মদিনেই।
১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইউএনএফএও। ১৯৭৯ সালের পর থেকে ওই দিনই পালন করা হয় বিশ্ব খাদ্য দিবস। সোমবার সেই দিন।
প্রতি বছরই বিশেষ একটি ভাবনাকে কেন্দ্র করে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে এফএও। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি।
২০২৩ সালের বিশ্ব খাদ্য দিবসের মূল বিষয় হল জল। জল আবার খাবার না কি— এই বলে প্রশ্ন তুলবেন যাঁরা, তাঁদের উত্তর আগে থেকেই দেওয়া হয়েছে খাদ্য দিবসের এ বছরের ট্যাগলাইনে।
বিশ্ব খাদ্য দিবসের এ বছরের ট্যাগলাইন হল— ‘জল জীবন, জল খাদ্যও। কেউ যেন বঞ্চিত না থাকে।’
কেন খাবারের বদলে জল? ইউএনএফএও তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে জল জরুরি। আমাদের শরীরের ৫০ শতাংশই জল। সেটা ভুললে একেবারেই চলবে না।
একই সঙ্গে এফএও মনে করিয়ে দিয়েছেন, জল ছাড়া খাবার তৈরি করা সম্ভবই নয়। কৃষিকাজ জল ছাড়া চলবে কী করে? মানুষই বা কী ভাবে বাঁচবে জল না থাকলে!
তাই এফএও মনে করে, খাবারের সমস্যার মূলে পৌঁছতে হলে আগে জলের বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। সেই ভাবনা থেকেই জলকে এ বারের খাদ্য দিবস উদ্যাপনের মূল বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
তাদের বার্তা স্পষ্ট— খাবার নিয়ে উৎসবের বদলে বরং পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা দিয়েই হোক এ বছরের খাদ্য দিবসের উদযাপন।