দু’জনেই জেলবন্দি। ২,৩০০ কিলোমিটার দূরে দুই ভিন্ন জেলে রয়েছেন তাঁরা। এক জন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। অন্য জন খলিস্তানপন্থী ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’ প্রধান অমৃতপাল সিংহ। চলতি লোকসভা ভোট কোথাও তাঁদের দু’জনকেই জুড়ে দিয়েছে।
অসমের ডিব্রুগড়ের জেলে রয়েছেন অমৃতপাল। দিল্লির তিহাড় জেলে কেজরীওয়াল।
ডিব্রুগড়ের জেলে বসেই লোকসভা নির্বাচনে লড়ছেন খলিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল। অথচ তিহাড়-বন্দি কেজরীওয়াল নিজের ভোটটুকুও দিতে পারবেন না। কারণ, ভারতে জেলবন্দিরা ভোটে লড়তে পারলেও ভোট দিতে পারেন না।
২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে জেলে রয়েছেন অমৃতপাল। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন তিনি। পঞ্জাবের খাদুর সাহিব লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ছেন তিনি। নির্দল প্রার্থী হিসাবে।
অমৃতপালের আইনজীবী রাজদেব সিংহ খালসা বলেন, ‘‘ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেলে গিয়ে ভাই সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি অনুরোধ করেছিলাম তাঁকে, খালসা পন্থের স্বার্থে তাঁর লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা উচিত। ভাই সাহেব রাজি হয়েছেন। তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন লোকসভা ভোটে।’’
প্রায় এক মাস ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েছিলেন অমৃতপাল। শেষে পঞ্জাবের মোগা জেলার রোডে গ্রাম থেকে গ্রেফতার হন তিনি। অভিযোগ, অমৃতসরের এক থানায় সমর্থকদের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন অমৃতপাল। তার পর থেকেই তাঁর খোঁজ করছিল পুলিশ।
থানার সামনে দাঁড়িয়ে সঙ্গী লভপ্রীত সিংহ তুফানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে দেশের পূর্বে অসমের ডিব্রুগড়ের জেলে পাঠানো হয়।
অতীতে অমৃতপাল জানিয়েছিলেন, ভারতীয় সংবিধানে তিনি বিশ্বাসী নন। সেই অমৃতপালই এখন ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির দিকে এগিয়ে চলেছেন। এর আগে জেলে বসে অনেকেই ভোটে লড়েছেন।
১৯৯৬ সালে মুখতার আব্বাস আনসারি বিএসপির টিকিটে উত্তরপ্রদেশের মৌ থেকে বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন। জেলে বসে। জিতেওছিলেন সেই ভোটে। গত মাসে জেলে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
২০০৫ সালে আবার গ্রেফতার হন আব্বাস। জেলে বসে ২০০৭, ২০১২, ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মৌ আসন থেকেই জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলে গিয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনে জেলে বসেই বিহারের মাধেপুর আসন থেকে লড়েছিলেন। জিতেওছিলেন।
অপরাধী বা অভিযুক্তেরা জেলে বসে ভোটে লড়তে পারেন। কিন্তু বিচারাধীন বন্দি বা দোষীরা জেলে বসে ভোট দিতে পারেন না। যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হননি, তাঁরাও ভোট দিতে পারেন না।
২০১৯ সালে প্রবীণ চৌধুরী এবং নির্বাচন কমিশনের মামলায় দিল্লি হাই কোর্ট আবার রায় দিয়ে জানায় যে, বন্দিদের ভোটাধিকার নেই। কেজরীওয়ালের ক্ষেত্রেও এটাই সত্য।
দিল্লিতে ভোট রয়েছে ২৫ মে। তার আগে ২৯ এপ্রিল কেজরীওয়ালের মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই জানা যাবে তিনি আদৌ ভোট দিতে পারবেন কি না!
কেজরীর মতো ভারতে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। তাঁরাও ভোট দিতে পারবেন না। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন জেলে বন্দি। জমি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছে ইডি। সু্প্রিম কোর্টে মামলা চলছে। জামিন না পেলে তিনিও লোকসভা ভোট দিতে পারবেন না।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনআরসিবি)-র ২০২১ সালের রিপোর্ট জানিয়েছে, ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দির সংখ্যা ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৪ জন।
অমৃতপাল যে হেতু দোষী সাব্যস্ত হননি, তাই তিনি ভোটে লড়তে পারবেন। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ছ’বছর পর ভোটে লড়তে পারবেন।
প্রতিনিধিদের সাহায্যে জেলে বসে মনোনয়ন দাখিল করতে পারবেন অমৃতপাল। জেলে বসে ভোটে জিতলে শপথ নেওয়ার জন্য অভিযুক্তকে ছুটিও দেওয়া হবে। তবে জেলে বসে শপথ নেওয়ার ব্যবস্থা নেই।
১৯৫১ সালের জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইনের ৬২(৫) ধারা বলছে, পুলিশের আইনি হেফাজতে বা কোনও জেলে থাকলে সেই ব্যক্তি ভোট দিতে পারবেন না। অর্থাৎ জেলে থাকলে ভোটে লড়া যাবে কিন্তু ভোট দেওয়া যাবে না।