নব্বইয়ের দশকে অ্যাকশন ঘরানার ছবি মানেই পর্দা জুড়ে সঞ্জয় দত্ত, সুনীল শেট্টি, অজয় দেবগনদের মাতামাতি। এই অভিনেতাদের অভিনয় এবং অ্যাকশনের জোরেই যেন বলিউডের অ্যাকশন ঘরানার ছবিগুলি অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়।
বলিপাড়ার দুই অভিনেতা— সুনীল শেট্টি এবং অক্ষয় কুমার একই সঙ্গে অ্যাকশন ঘরানার ছবিতে অভিনয় করা শুরু করেছিলেন। তাঁদের দু’জনের অ্যাকশনে হাতেখড়ি হয়েছিল বলিপাড়ার অন্যতম অ্যাকশন ডিরেক্টর তিনু বর্মার হাত ধরে।
কিন্তু একই সঙ্গে এই ঘরানায় পা রাখলেও কেরিয়ারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন অক্ষয় কুমার। আজও দাপিয়ে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কিন্তু সুনীলকে বড় পর্দায় বিশেষ দেখা যায় না। দুই অভিনেতাকে নিজের হাতে গড়েছেন বলে দুই অভিনেতার সাফল্য নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন পরিচালক তিনু বর্মা।
সুনীল এবং অক্ষয়ের সঙ্গে যখন তিনু কাজ শুরু করেছিলেন তখন অক্ষয়ের থেকে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন সুনীল। এমনটাই জানিয়েছেন পরিচালক। কাজের প্রতি অক্ষয়ের আগ্রহই তাঁকে এত দূর নিয়ে এসেছে বলে দাবি তিনুর।
অক্ষয়ের সঙ্গে তিনু বহু ছবিতে কাজ করলেও তিনটি ছবি অভিনেতাকে অ্যাকশন ঘরানার অভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় সুনীল দর্শন পরিচালিত ‘জানোয়ার’ ছবিটি। করিশ্মা কপূর এবং শিল্পা শেট্টির সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল অক্ষয়কে। অ্যাকশন ঘরানার এই ছবিতে অক্ষয়ের অভিনয় ছিল দুর্দান্ত।
২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘খাকী’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন এবং অজয় দেবগনের পাশাপাশি আলাদা ভাবে নজর কাড়ে অক্ষয়ের অভিনয়। চরিত্রে অ্যাকশন ফুটিয়ে তুলতে অক্ষয় ধীরে ধীরে পটু হয়ে উঠছিলেন বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনু।
শুধু অভিনয় চর্চাই নয়, মানুষ হিসাবে নিজেকে কড়া নিয়মকানুনেও বেঁধে রাখতেন অক্ষয়। অ্যাকশন ঘরানার ছবিতে যেন আরও ভাল করে নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারেন তার জন্য মার্শাল আর্ট শিখেছিলেন বলিউডের ‘খিলাড়ি’।
ভোর ৪টের সময় ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং শরীরচর্চা করতেন তিনি। শরীরচর্চার পরে কাজের জন্য শুটিং ফ্লোরে ছুটতেন অক্ষয়।
পরিচালক তিনু জানিয়েছেন যে, শুটিং যখনই শুরু হওয়ার কথা থাক না কেন, প্রযোজক, পরিচালক-সহ শুটিং দলের সঙ্গে জড়িত বাকি কর্মীরাও জানতেন যে, অক্ষয় ঠিক সময়ে সেটে এসে পৌঁছে যাবেন।
তিনুর মন্তব্য, শুটিং থাকলে সকাল পৌনে ৭টাতেও সেটে পৌঁছে যেতেন অক্ষয়। অক্ষয়ের সঙ্গে তাল রাখতে ভোর ৬টায় সেটে পৌঁছে যেতেন অন্যরাও।
তিনু সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ৪০-৪৫ দিন টানা শুটিং করতে আসতেন অক্ষয়। শুটিংয়ের কাজ যেন তাঁর জন্য কখনও পিছিয়ে না যায়, সেই চেষ্টাই করতেন তিনি।
সময়ের কদর করতে জানেন অক্ষয়, এমনটাই দাবি তিনুর। যে সময়ে আসার কথা জানাতেন, ঠিক সেই সময়েই সেটে চলে আসতেন তিনি। কথার খেলাপ করতেন না বলে অক্ষয়ের প্রশংসা করেছেন তিনু।
পরিচালকের দাবি, তিনি নাকি প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে অক্ষয় লম্বা রেসের ঘোড়া। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, সব সময় সেই চেষ্টাই করতেনঅক্ষয়।
সুনীলের মধ্যেও কেরিয়ারের সিঁড়ি চড়ার খিদে ছিল। কিন্তু অক্ষয় তাঁকে ছাপিয়ে যান। তিনুর মতে, ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের মুখ দেখে বড় হয়েছেন অক্ষয়। তাই তাঁর ভিতরে কেরিয়ারে সফল হওয়ার একটা জেদ কাজ করত। বর্তমানে অক্ষয় বলিপাড়ায় নিজের পরিচয় এমন ভাবে তৈরি করে নিয়েছেন যে, উপার্জনের দিক থেকে এগিয়ে থাকা অভিনেতাদের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে রয়েছেন বলিউডের ‘খিলাড়ি’।