চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘অ্যানিম্যাল’। রণবীর কপূরের বিপরীতে এই ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যাবে দক্ষিণী অভিনেত্রী রশ্মিকা মন্দনাকে।
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে রশ্মিকার একটি ‘ডিপফেক’ ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তা নিয়ে সমালোচনা-বিতর্কের ঝড় উঠেছে চারদিকে। আসলে যাঁর ভিডিয়োর উপর কারসাজি করে অভিনেত্রীর মুখ বসানো হয়েছে, তাঁরও যে অনুরাগীর সংখ্যা আকাশছোঁয়া। ‘ডিপফেক’ ভিডিয়োয় কালো পোশাক পরিহিত সেই মহিলার আসল পরিচয় জানেন কি?
খোলামেলা পোশাকে রশ্মিকার ভিডিয়ো নেটে ছড়িয়ে পড়তেই তার সত্যতা নিয়ে অভিনেত্রীর অনুরাগীদের মনে সন্দেহ জাগে। পরে তাঁদের সন্দেহই সত্য হিসাবে প্রমাণিত হয়। কালো পোশাকে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তিনি রশ্মিকা নন, তাঁর নাম জ়ারা পটেল।
সমাজমাধ্যমের জনপ্রিয় প্রভাবী জ়ারা। ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান এই প্রভাবীর অনুরাগীমহল কোনও অভিনেত্রীর চেয়ে কম নয়। ইনস্টাগ্রামে ইতিমধ্যেই তাঁর অনুরাগী সংখ্যা সাড়ে চার লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
সমাজমাধ্যমে প্রভাবী হয়েই কি জীবনযাপন করেন জ়ারা? তা নয়। ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে জ়ারা নিজের পরিচয় দিয়েছেন ডেটা ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। অর্থাৎ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তিনি।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি এক জন ‘মেন্টাল হেল্থ অ্যাডভোকেট’ জ়ারা।
সমাজমাধ্যমের পাতায় অধিকাংশ সময় খোলামেলা, সাহসী পোশাকে ধরা দেন জ়ারা।
এমনকি সাহসী ‘কনটেন্ট’ অর্থাৎ বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করেন বলেই নেটদুনিয়ায় জ়ারার পরিচিতি আরও বেশি।
শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি জ়ারা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অন্য এক সমাজমাধ্যমে তৈরি করা দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টের লিঙ্ক দিয়ে রেখেছেন তিনি।
অনুরাগীদের সঙ্গে চ্যাট করার জন্য দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করেন জ়ারা। অনুরাগীদের সঙ্গে বিশেষ ভাবে ব্যবহারও করেন তিনি।
দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টে নাকি নিজের আরও সাহসী ছবি পোস্ট করেন জ়ারা। আরও খোলামেলা ভাবে অনুরাগীদের কাছে ধরা দেন তিনি।
রশ্মিকার ‘ডিপফেক’ ভিডিয়ো ছড়িয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার নিজের ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতে জ়ারা দুঃখপ্রকাশ করে জানান, এই ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত এবং মর্মাহত।
জ়ারা লেখেন, ‘‘আমার শরীরের উপর কেউ এক অভিনেত্রীর মুখ বসিয়ে কারসাজি করে ‘ডিপফেক’ ভিডিয়ো তৈরি করেছেন। সবেমাত্র এই ঘটনাটি আমার গোচরে এসেছে। সব শোনার পর আমি আতঙ্কিত এবং মর্মাহত।’’
জ়ারার মন্তব্য, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও যোগসূত্র নেই। সম্পূর্ণ ঘটনা নিয়ে আমি নিজেও খুব অশান্তির মধ্যে রয়েছি। মহিলা এবং তরুণীদের নিয়ে আমি গভীর ভাবে চিন্তিত। এই ঘটনার পর তাঁরা সমাজমাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে আরও ভয় পাবেন।’’
অনুরাগীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন জ়ারা। তিনি লেখেন, ‘‘ইন্টারনেটে যা দেখা যায় তা সব সত্য নয়। একটু সময় নিন। কোনটা সত্য, কোনটা অসত্য, তা নিজে ভাল করে খতিয়ে দেখে বিচার করুন।’’
আসল ভিডিয়োটি ৯ অক্টোবর নিজের ইনস্টাগ্রামের পাতায় পোস্ট করেছিলেন জ়ারা। কালো পোশাক পরে লিফ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় তাঁকে। কালো পোশাকে জ়ারার বক্ষবিভাজিকা স্পষ্ট।
জ়ারার এই ভিডিয়োয় কারসাজি করে রশ্মিকার মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়। সমাজমাধ্যমের রশ্মিকার ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে জানতে পারা যায়, ওই ভিডিয়ো আসলে কৃত্রিম মেধা তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে বিকৃত করা হয়েছে।
রশ্মিকা নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে বিবৃতি দিয়ে লেখেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে আমার যে ডিপফেক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে কথা বলতে গেলেও ভীষণ খারাপ লাগছে। আমি ব্যথিত। এই ঘটনা আমার কাছে খুবই ভয়ের। শুধু আমার একার জন্য নয়, যাঁরা সারা ক্ষণ ক্যামেরার সামনে রয়েছেন, তাঁদের কথা ভেবেও ভয় লাগছে। কী ভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার করা হচ্ছে, তা ভেবে আরও ভীত হয়ে পড়ছি।’’
রশ্মিকা আরও লেখেন, ‘‘এক জন নারী এবং অভিনেত্রী হিসাবে আমি আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের কাছে কৃতজ্ঞ, যাঁরা এই সময় আমার পাশে রয়েছেন। কিন্তু ভাবুন, যদি আমি একজন স্কুল-কলেজে পড়া ছাত্রী হতাম! আমার তো মাথা কাজ করত না। আমাদের সকলের প্রয়োজন সমষ্টিগত ভাবে এগিয়ে এসে এই ধরনের সমস্যা নিয়ে কথা বলা।’’
গোটা ঘটনাটি আসল ভিডিয়ো সমেত সমাজমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করা হলে তা রিপোস্ট করে বলি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অপরাধীর শাস্তি চেয়ে রশ্মিকার পাশে দাঁড়ান তিনি।