সম্প্রতি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য রণকৌশল তৈরির প্রস্তাব দেয় কংগ্রেস। আলোচনা অনেক দূর এগোলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
পিকে-র বদলে ভোটকুশলী এসকে ওরফে সুনীল কানুগোলুকে এনে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল তৈরির দায়িত্ব দিলেন সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেসের নতুন তুরুপের তাস সুনীল, পিকে-র পুরনো সতীর্থ।
ইতিমধ্যেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে কংগ্রেস। সেই মর্মে কংগ্রেসের ‘টাস্ক ফোর্স-২০২৪’ গঠন করেছেন সনিয়া। আট জনের এই কমিটিতে পি চিদম্বরম এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার পাশে জায়গা পেয়েছেন সুনীলও।
২০২৩ সালে কর্নাটক এবং তেলঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনে জেতা নিশ্চিত করতে সুনীলকে আগেই প্রচার সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিল কংগ্রেস। কর্নাটক নির্বাচন থেকেই কংগ্রেসের রণকৌশল তৈরি করে সুনীল নিজের দক্ষতা প্রমাণের লড়াইয়ে নামবেন।
কিন্তু কে এই ভোটকুশলী সুনীল? কেনই বা নতুন মুখ সুনীলকে ভরসা করলেন সনিয়া?
আমজনতার কাছে নতুন মুখ হলেও, রাজনীতির ময়দানে ভোটকুশলী হিসাবে সুনীল কিন্তু পুরনো চাল। ২০১৪ সালে পিকে-র পাশাপাশি সুনীলও নরেন্দ্র মোদীর হয়ে রণকৌশল তৈরির কাজ করেছিলেন। তামিলনাড়ুর ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে-র হয়েও কাজ করেছেন সুনীল।
প্রায় এক দশক ধরে ভোটকুশলী হিসাবে কাজ করছেন সুনীল। কাজ করেছেন প্রায় এক ডজনেরও বেশি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির হয়ে কাজ করেন তিনি। এক সময় বিজেপির ভোটকুশলী সংস্থা, ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডস(এবিএম)’-এরও প্রধান ছিলেন সুনীল।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির হয়ে প্রচারের দায়িত্ব সামলাতে আসে পিকে-র আগের সংস্থা ‘সিটিজেনস ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্ন্যান্স (সিএজি)’। কিন্তু তারও আগে থেকে সুনীল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছিলেন।
এর পর প্রায় তিন বছর প্রচারের বাইরে ছিলেন সুনীল। আবার ২০১৬ সালে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসেন ডিএমকে প্রধান এবং বর্তমান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়ে।
যদিও ২০১৬-র তামিননাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনে ডিএমকে-কে শাসকদল বানাতে ব্যর্থ হন সুনীল। তবে সেই বছরই অক্টোবরে, সুনীলকে নতুন ভোটকুশলী সংস্থা তৈরির দায়িত্ব দেয় বিজেপি। কারণ নতুন সংস্থা ‘আইপ্যাক’ তৈরি করে তখন বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়েছেন পিকে। তাই পিকে-র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে সুনীলকে দাঁড় করানোই ছিল বিজেপির মূল লক্ষ্য। সেই মতো ‘রাম রাজ্যে’ গেরুয়া ঝড় তোলার দায়িত্ব এসে পড়ে সুনীলের ঘাড়ে।
তবে তামিলনাড়ুর মতো ব্যর্থতার মুখ দেখতে হয়নি সুনীলকে। ২০১৭-র উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী আদিত্যনাথ। নাম হয় সুনীলের।
এর পরই ভোটকুশলী সতীর্থ হিমাংশু সিংহ এবং গুজরাতের ব্যবসায়ী দীপক পটেলের সঙ্গে যৌথ ভাবে ভোটকুশলী সংস্থা এবিএম শুরু করেন। ২০১৮ সালে এবিএম থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুনীল।
এর পর ২০১৯ সালে আবার ডিএমকে-র সঙ্গে হাত মেলান সুনীল। তাঁর রণকৌশলে ৩৯টির মধ্যে ৩৮টি লোকসভা আসন ইউপিএ জোটের দখলে আসে।
তবে ২০২১-এর তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে জিততে পিকে-র হাত ধরেন ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিন। এর পরই ডিএমকে-মোহ ভেঙে বেরিয়ে আসেন সুনীল।
সুনীল এখনও পর্যন্ত ১৪টি নির্বাচনে ভোটকুশলী হিসাবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে ন’টি নির্বাচনে বিজেপির জন্য, দু’টিতে ডিএমকে-র জন্য এবং আকালি দল, এআইএডিএমকে এবং কংগ্রেসের জন্য একটি করে নির্বাচনে কাজ করেছেন বছর চল্লিশের সুনীল।
চরিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নিরিখেও পিকে-র থেকে বেশ খানিকটা আলাদা সুনীল। অনেকটাই প্রচারবিমুখ। পিকে নেটমাধ্যমে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। অন্যদিকে সুনীল কোনও নেটমাধ্যমেই নেই।
ইন্টারনেট হাতড়ে গুটিকয়েক ছবি ছাড়া বিশেষ কোনও ছবি চোখে পড়বে না সুনীলের। পিকে-কে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হতে দেখা গেলেও সুনীল সংবাদ মাধ্যম থেকে দূরে থাকতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।