ফিল্ম জগতে একটা চালু কথা হল— ড্রিম ডেবিউ। অর্থাৎ এমন স্বপ্নের মতো সূচনা। বলিউডে অভিনেতা শান্তনু মাহেশ্বরীর শুরুটাও ঠিক তেমনই হতে চলেছে। প্রথম উড়ানেই জেটগতির জ্বালানি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। যার নাম আলিয়া ভট্ট।
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ছবি ‘গঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’-তে ‘গঙ্গুবাই’ আলিয়ার বিপরীতে দেখা যাবে শান্তনুকে। ছবিতে তিনি গঙ্গুবাইয়ের প্রেমিক রামনিক লালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
এক দিকে সঞ্জয়ের মতো পরিচালক ,অন্য দিকে আলিয়ার মতো সহ-অভিনেতা। এ সব ক্ষেত্রে ছবি হিট করানোর দায় নতুন অভিনেতার কাঁধে তেমন থাকে না। তাঁকে শুধু নিজের কাজটুকু মন দিয়ে করলেই চলে। শান্তনুর সুযোগ তাই সব দিক থেকেই ঈর্ষণীয় বলে মনে করছে বলিউড। কিন্তু এক জন তুলনামূলক অনভিজ্ঞ অভিনেতা কী ভাবে এই সুযোগ পেলেন?
এক দিকে আলিয়ার মতো অভিনেত্রী। যিনি কর্ণ জোহর ক্যাম্পের দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ত। যাঁর অভিনয়জীবন ঝলমলে ‘হাইওয়ে’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘রাজি’, ‘বদ্রিনাথ কি দুলহনিয়া’র মতো মণিমুক্তোয়। বড় ব্যানার, বড় বাজেটের ছবি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মুক্তির অপেক্ষায়। ভন্সালীর পরিচালনায় সেই আলিয়ার সঙ্গেই পর্দায় রোম্যান্স করবেন শান্তনু। যার একঝলক ইতিমধ্যেই দর্শকের সামনে এসেছে।
ছবির ‘জব সাঁইয়া’ গানের ভিডিয়ো সম্প্রতিই প্রকাশ্যে এসেছে। যাঁরা সেটি দেখেছেন, তাঁদের অনেকেই বলেছেন আলিয়ার সঙ্গে বেশ টক্কর দিয়েই অভিনয় করেছেন শান্তনু। এমনকি রোম্যান্টিক দৃশ্যেও তিনি সাবলীল। অথচ আলিয়ার থেকে বয়সে দু’বছরের বড় শান্তনুর অভিনয় অভিজ্ঞতা আলিয়ার চেয়ে অনেকটাই কম।
২০১২ সালে ১৯ বছর বয়সে বড় পর্দায় নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ আলিয়ার (তার আগে ‘সংঘর্ষ’ ছবিতে শিশুশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করলেও আলিয়া নিজে সেটাকে অভিনয় বলতে রাজি নন। এক বার বলেছিলেন, ‘‘আমি শুধু ভাল খাবার খেতে ছবির সেটে যেতাম।’’)। অন্য দিকে শান্তনু অভিনয় শুরু করেন ২০১১ সালে। টেলিভিশনের একটি ধারাবাহিকে। তখন তাঁর বয়স ২০।
কলকাতার ছেলে শান্তনু। ১৯৯১ সালের ৭ মার্চ কলকাতাতেই জন্ম। পড়াশোনা কলকাতারই একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য মুম্বই যান এবং পাকাপাকি ভাবে সেখানেই থেকে যান।
ভাল নাচতে পারতেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে নাচের রিয়্যালিটি শো ‘কেয়া মস্তি কেয়া ধুম’-এ অংশ নেন। পরের বছর প্রতিযোগী হয়েছিলেন ‘বুগি উগি’তেও। শান্তনুর বয়স যখন ১৭ তখন বাংলা টেলিভিশনের নাচের রিয়্যালিটি শো-এ প্রতিযোগী হয়েছিলেন তিনি।
এর ঠিক তিন বছর পর টিভিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে। তবে তাঁর প্রথম টিভি ধারাবাহিকের মূল বিষয়ও ছিল নাচ। ধারাবাহিকের নাম ‘দিল দোস্তি ডান্স’। এক ঝাঁক টিনএজারকে নিয়ে গল্প। তবে ওই ধারাবাহিকে শান্তনু অভিনীত চরিত্র স্বয়ম এবং তার গল্পের প্রেমিকা স্যারনের জুটি জনপ্রিয় হয়েছিল দর্শক মহলে। চার বছর চলেছিল ওই ধারাবাহিক। তার মধ্যে দু’বার সেরা জুটির পুরষ্কার পেয়েছিলেন স্বয়ম-স্যারন।
পরে আরও বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করলেও সেগুলি প্রথমটির মতো জনপ্রিয় হয়নি। শান্তনুকেও নাচের রিয়্যালিটি শোগুলিতেই বেশি দেখা যেতে থাকে। কখনও প্রতিযোগী, কখনও আবার কোরিওগ্রাফার বা নৃত্য পরিচালকের ভূমিকায়। শান্তুনুর একটি নাচের দলও আছে। নাম ‘দেশি হুপার্স’। ২০১৫ সালে তারা লস অ্যাঞ্জলসে আয়োজিত আন্তর্জাতিক নাচের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নও হন।
এর মধ্যেই ‘খতরোঁ কি খিলাড়ি’র অষ্টম সিজনে বিজয়ী হন শান্তনু। ফাঁকে ফাঁকেই চলছিল, ছোটখাটো ছবি, ওয়েব সিরিজ এবং মিউজিক ভিডিয়োয় অভিনয়ের কাজ। তবে ২০২০ সালের পর কোনও প্রতিযোগিতা বা পর্দায় অভিনয় সূত্রে আর দেখা যায়নি শান্তনুকে।
২০২০ সালের শেষের দিকে ‘গঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ ছবিতে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন শান্তনু। বেশ কিছু দিন পর ভন্সালীর অফিস থেকে ফোন আসে। শান্তনুকে জানানো হয় ওই চরিত্রের জন্য তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। শান্তনু অবশ্য তখনও জানতেন না, পর্দায় তাঁকে অভিনয় করতে হবে আলিয়ার প্রেমিকের ভূমিকায়। সে কথা তিনি অনেক পরে জেনেছিলেন।
আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি ছবিটি হলে মুক্তি পাবে। বলিউডে ‘গঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ই শান্তনুর প্রথম ছবি হতে চলেছে বলা চলে। কারণ এর আগে তিনি দু’টি ছবিতে অভিনয় করলেও তার একটি ছিল শর্ট ফিল্ম। অন্যটির এখনও কাজ শেষ হয়নি।
শান্তনুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভন্সালীর ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া নিয়ে তিনি কী বলতে চান? জবাবে তিনি জানান, তাঁর স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। আর এর পূর্ণ কৃতিত্ব তিনি ভন্সালীকেই দিতে চান।
এমনকি আলিয়ার সঙ্গে তাঁর অভিনয়ের মুহূর্তগুলির কৃতিত্বও পরিচালককেই দিয়েছেন শান্তনু। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেছেন, ‘‘সেরা পরিচালেকের সঙ্গে কাজ করছি। এই অনুভূতিই আমাকে দিয়ে অর্ধেক অভিনয় করিয়ে নিয়েছে। আর বাকি কাজটা হয়েছে কাজের প্রতি ওঁর আবেগ আর নিষ্ঠা থেকে।’’