৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর উপত্যকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছিলেন বিশ্বের সামনে। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ রুজিরুটি হারিয়ে কেমন ভাবে টিকে আছেন, সেই ছবি তুলে ধরে পুলিৎজার পেয়েছিলেন কাশ্মীরের চিত্রসাংবাদিক সানা ইরশাদ মাট্টুর। বস্তুত, ২০২২ সালে তিনিই ছিলেন পুলিৎজারজয়ীদের মধ্যে কনিষ্ঠ। সেই সানাকে আটকানো হল বিদেশে যেতে। বাধা দেওয়া হল বিমানবন্দরে। কেন? কে এই সানা?
শনিবার পুলিৎজারজয়ী কাশ্মীরি চিত্রসাংবাদিককে দিল্লি আটকে দেয় অভিবাসন দফতর। বিমান ধরা হয়নি কাশ্মীরের চিত্রসাংবাদিক সানার। কেন তাঁকে আটকানো হয়েছে, সে বিষয়ে নাকি কিছুই জানানো হয়নি। শুধু অভিবাসন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, সানা ইরশাদ বিদেশ যেতে পারবেন না।
এর অব্যবহিত পর বাতিল হওয়া বোর্ডিং পাসের ছবি টুইটারে পোস্ট করে সানা লেখেন, ‘একটি বইপ্রকাশের অনুষ্ঠান ও চিত্রপ্রদর্শনীতে যোগ দিতে শনিবার দিল্লি থেকে প্যারিস যাচ্ছিলাম। ২০২০ সালে এরিজ গ্রান্ট পুরস্কার জিতেছিলেন যে ১০ জন, তাঁদের মধ্যে আমিও রয়েছি। ফরাসি ভিসা থাকা সত্ত্বেও আমাকে দিল্লি বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। কোনও কারণ জানানো হয়নি। তবে বলা হয়েছে আমি বিদেশে যেতে পারব না।’
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কাশ্মীরের কয়েক জন সাংবাদিকের বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। সেই তালিকায় সানার নামও রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানি যাওয়ার পথে দিল্লি বিমানবন্দরে আটকানো হয় কাশ্মীরি সাংবাদিক গওহর গিলানিকে। গত বছর আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক-অধ্যাপক জাহিদ রাফিক। সে বার তাঁকেও বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি।
২৮ বছরের সানা একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার চিত্রসাংবাদিক। কোভিডকালে ভারতের ছবি তুলে ধরে ২০২২ সালে পুলিৎজার পান তিনি।
সানার সঙ্গে পুলিৎজার পেয়েছিলেন রয়টার্সের আরও তিন সাংবাদিক। যাঁদের মধ্যে ছিলেন দানিশ সিদ্দিকি, অমিত দাভে এবং আদনান আবিদি। কন্দহরে নিহত হন পুলিৎজারজয়ী ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি।
কন্দহরের অশান্ত পরিস্থিতির ছবি তুলতে সেখানে গিয়েছিলেন দানিশ। আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে কাজ করছিলেন তিনি। তখন সবে তালিবান ক্ষমতা দখলের পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, কন্দহরের স্পিন বোলডাক জেলায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন দানিশ। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রধান চিত্রসাংবাদিক ছিলেন দানিশ।
সানা ছিলেন সেই ১১ জনের মধ্যে যাঁরা ম্যাগনাম ফাউন্ডেশনের ‘২০২১ ফটোগ্রাফি অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস ফেলোশিপ’-এর জন্য নির্বাচিত হন।
সানার জন্ম উপত্যকায়। বেড়ে ওঠাও সেখানে। ছোট থেকে পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিলেন। সানা জানান, তাঁর অনুসন্ধিৎসু মনই তাঁকে এই পেশায় এনেছে।
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব কাশ্মীর থেকে ‘কনভার্জেন্ট জার্নালিজম’ নিয়ে এমএ করেন। এর পর বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় কাজের সুযোগ পান কাশ্মীর-কন্যা।
আল-জাজিরা, টাইম, টিআরটি ওয়ার্ল্ডের মতো সংবাদমাধ্যমে প্রায় নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে সানার তোলা ছবি।
পুলিৎজার পুরস্কার তুলে দেওয়ার সময় সানা সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এমন এক জন চিত্রসাংবাদিক এবং ডকুমেন্টরি চিত্রগ্রাহক, যিনি ছবি দিয়ে কাহিনি বলে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
সানা সম্পর্কে এ-ও বলা হয়, তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনের খণ্ডচিত্র, তাঁদের লড়াই, সংগ্রামকে উপস্থাপিত করেন।
এক সময় অশান্ত কাশ্মীরের ছবি তুলে ধরে সুনাম যেমন কুড়িয়েছেন, তেমনি সমালোচনার মুখেও পড়েছেন। বস্তুত, সানার কাজের প্রশংসা এবং সমালোচনা হাত ধরাধরি করে চলে। তাই পুলিৎজারজয়ী চিত্রসাংবাদিকও শুনেছেন ‘দেশবিরোধী’ কটাক্ষ।