ঈশ্বরের হাত বলে কথা। না একটু ভুল হল, গ্রিক দেবতার হাত বলে কথা। সেই হাত ধরে হাঁটছেন মাস্ক পরিহিত, আপাত সাদাসিধে চেহারার ছিপছিপে গড়নের এক তরুণী।
শুক্রবার রাত থেকে সেই দৃশ্যের একখানি ভিডিয়ো ছড়িয়েছে। দানা বেঁধেছে কৌতূহল। কারণ ভিডিয়োয় যাঁকে দেখা যাচ্ছে তিনি হৃতিক রোশন। বলিউডের অভিনেতাদের মধ্যে যিনি সুপুরুষতম বলে গণ্য হন এবং গত বেশ কয়েক বছর ধরেই যিনি ‘একা’। আর যিনি কখনও মাস্ক কখনও বা হৃতিকের কাঁধের আড়ালে মুখ লুকোচ্ছিলেন তাঁকে অনেকেই চেনেন না।
মুম্বইয়ের বান্দ্রায় একটি জাপানি রেস্তরাঁ ইদানীং তারকামহলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। সেখানেই নৈশভোজ সেরে ফিরছিলেন হৃতিক ও তাঁর সঙ্গিনী। গোপন খবরের সৌজন্যে সেখানে পৌঁছে যান ছবি শিকারিরা। ক্যামেরায় ধরা পড়ে যান দু’জনে।
২০১৪ সাল থেকে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হৃতিক। তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী এবং দুই পুত্র সন্তানের মা সুজান খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সম্পর্ক নিয়ে নানা বিতর্কে জড়ালেও প্রকাশ্যে কোনও বিশেষ মহিলা সঙ্গীর পাশে দেখা যায়নি তাঁকে। হাত ধরা তো দূরের কথা।
সেই হৃতিক, যাকে বলিউড এবং ভক্তরা গ্রিক দেবতা জ্ঞানে পুজো করে, আট বছর পর হঠাৎই এক তরুণীর হাত ধরে প্রকাশ্যে। স্বাভাবিক ভাবেই বলিউড তথা গোটা ভারতের বিনোদন জগতের একটাই প্রশ্ন ছিল— কে এই রহস্যময়ী? সে প্রশ্নের জবাব মিলেছে।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা কিছুটা নিশ্চিত ভাবেই জানিয়েছে, মাস্কের আড়ালে থাকা ছিপছিপে ওই তরুণী হৃতিকের সঙ্গিনী। দু’জনে বেশ কিছুদিন হল সম্পর্কে রয়েছেন। পরস্পরের সঙ্গে একান্তে সময়ও কাটাচ্ছেন প্রায়শই।
নাম সাবা আজাদ। পঞ্জাবের এই কন্যা একজন শিল্পী। একাধারে তিনি অভিনেতা। আবার পেশাদার গায়িকাও।
দিল্লিতে জন্ম। পড়াশোনা সেখানেই। অনেক পরে অভিনয় সূত্রেই মুম্বইয়ে আসেন সাবা।
গড়েবাল পরিবারে জন্ম। সাবার আসল নাম সাবা গড়েবাল। যদিও সাবা নিজের ইচ্ছেয় মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। হয়েছেন সাবা আজাদ।
নিজের গানের একটি ব্যান্ড রয়েছে সাবার। আবার তিনি নিয়মিত মঞ্চ অভিনয়ও করেন। থিয়েটার তাঁর নেশা। তবে বলিউডেও অভিনয় করেছেন।
২০০৮ সালে দিল কাব্বাড্ডি ছবিতে বলিউডে প্রবেশ সাবার। ছবিতে তাঁর সহ অভিনেতা ছিলেন রাহুল বোস। পরের ছবিটি কিছুটা জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। ২০১১ সালে অভিনেতা সাকিব সালিমের বিপরীতে মুঝসে ফ্রেন্ডশিপ করোগে ছবিতে অভিনয় করেন সাবা। তবে গত ১৩ বছরে বলিউডে তিনি পাঁচটি মাত্র ছবিতে অভিনয় করেছেন।
এর মধ্যে গত বছর নেটফ্লিক্সের একটি সিরিজ ‘ফিলস লাইক ইশক’-এও অভিনয় করেন সাবা। তাঁর আরও একটি ওটিটি সিরিজ রকেট বয়েজ কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পাওয়ার কথা।
তবে বলিউডে কম দেখা গেলেও থিয়েটার এবং মঞ্চে নিয়মিত হাজির থেকেছেন সাবা। গান বেঁধেছেন, গান গেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান করেছে তাঁর দুই সদস্যের ইলেকট্রনিক মিউজিক ব্যান্ড ‘ম্যাডবয় মিঙ্ক’।
হৃতিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় কীভাবে তা এখনও অজানা। তবে বিনোদন এবং অভিনয়ের সড়কে সাবার অনেকদিনের যাতায়াত। তিনি বিখ্যাত থিয়েটার ব্যক্তিত্ব সফদর হাশমির ভাইঝি।
সাবার পরিবারের অনেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। সাবার থিয়েটার শিক্ষা কাকা সফদরেরই থিয়েটার গ্রুপ জন নাট্য মঞ্চে।
খুব ছোটবেলা থেকেই হাবিব তনবীর, এমকে রায়না, জিপি দেশপাণ্ডের মতো অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন সাবা। পরে প্রচুর স্বল্পদৈর্ঘের ছবিতে মূল চরিত্রেও অভিনয় করেছেন।
২০১০ সালে নিজের থিয়েটার গ্রুপ তৈরি করেন সাবা। ২০১২-এ তৈরি করেন নিজের গানের ব্যান্ড।
নাসিরুদ্দিন শাহ এবং রত্না পাঠক শাহের পুত্র ইমাদ শাহের সঙ্গে দীর্ঘদিন সম্পর্কে ছিলেন সাবা। ইমাদই সাবার ব্যান্ডের দ্বিতীয় সদস্যও। তবে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায় বছর কয়েক আগে।
হৃতিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রসঙ্গে অভিনেতার এক ঘনিষ্ঠ একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘দুগ্গু (হৃতিকের ডাক নাম) ওর ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতেই ভালবাসে। ওই অভিনেত্রীর সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই সম্পর্কে রয়েছে ও। তবে আপাতত এ নিয়ে দু’জনের কারেও তেমন তাড়াহুড়ো নেই। দু’জনেই এই সম্পর্ককে আরও সময় দিয়ে ধীরে ধীরে এগনোর পক্ষপাতী।