ক্রিকেটারের স্ত্রী— বললেই একটা প্রথাগত ধারণা, প্রচলিত ছবি মাথায় আসে কিন্তু রিভাবা জাডেজার জীবনধারা বলছে, তিনি সেই বাঁধাগতে পড়েন না। ‘পদ্মাবত’ সিনেমার বিরোধিতায় পথে নেমেছিলেন তিনি। বিজেপির অনেকে বলেন, রাজপুত নারী রিভাবাও একজন ‘পদ্মাবতী’।
রিভাবা ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার রবীন্দ্র জাডেজার স্ত্রী। তবে তাঁর ‘বায়োডাটা’য় এই পরিচয় প্রাধান্য পায় না। নিজেকে সক্রিয় রাজনীতিবিদ বলে পরিচয় দেন রিভাবা। রাজনীতির প্রয়োজনে মাঠে ময়দানে নেমে পড়তেও দ্বিধা করেননি, করেন না।
ক্রিকেটারদের স্ত্রী আবার স্ব-পরিচয়েও পরিচিত— এমন উদাহরণ কম নেই ভারতীয় ক্রিকেটে। শর্মিলা ঠাকুর, অনুষ্কা শর্মা, সাগরিকা গাটজে, হেজেল কিচ, গীতা বসরারা তেমন উদাহরণ। রিভাবা এঁদের থেকে খানিকটা আলাদা।
স্বামী যখন মাঠে তখন তাঁকে গ্যালারি থেকে উৎসাহ জোগাতে যেমন দেখা যায়, তেমনই অন্য সময়ে তাঁকে দেখা যায় গুজরাতের গ্রামের রাস্তায় সাধারণ শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা টেনে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতে।
নিজেকে রাজপুত নারী বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন রিভাবা। নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর একটা জোরালো আবেগ রয়েছে। রিভাবার রাজনীতিতে পদার্পণ সেই আবেগ থেকেই।
২০১৮ সালে যখন পদ্মাবত নিয়ে প্রবল অশান্তি চলছে দেশজুড়ে। করণী সেনারা প্রবল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে, তখন তাঁদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন রিভাবাও। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজপুতদের প্রতি কোনও অপমান সহ্য করা যাবে না।
রিভাবার বয়স তখন ২৮। তত দিনে জাডেজার সঙ্গে বিয়েও হয়ে গিয়েছে। কোলে বছর খানেকের কন্যাসন্তান। সক্রিয় রাজনীতিতে সেই থেকেই হাঁটা শুরু রিভাবার। যা আজ তাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে এক উন্নততর রাজনৈতিক কেরিয়ারের সামনে।
শোনা যাচ্ছে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পেতে পারেন রিভাবা। যদি সত্যিই তা হয় এবং তিনি ভোটে জিতে বিধায়কও হন, তবে তিনিই হবেন সম্ভবত প্রথম ভারতীয় কোনও ক্রিকেটারের বিধায়ক স্ত্রী। তবে এ সবই সম্ভাবনার কথা।
রিভাবা জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতিতে আসবেন এমন ভাবেনইনি কখনও। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। ঠিক করেছিলেন সরকারি আমলা হওয়ার পরীক্ষায় বসবেন। প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালে যখন জাডেজার সঙ্গে দেখা হল, তার পর সব বদলে গেল।
ব্যবসায়ী বাবা এবং রেলের চাকুরে মায়ের একমাত্র সন্তান রিভাবা। পড়াশোনা করেছিলেন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। তবে পড়াশোনার ফাঁকেই বাবার দু’টি স্কুলের পরিচালনার দায়িত্বও সামলাতেন রিভাবা।
করণী সেনার বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পরই সক্রিয় রাজনীতিতে আগ্রহী হন রিভাবা। করণী সেনার তরফেও তাঁকে গুজরাতের মহিলা শাখার প্রধান পদে বসানো হয়।
মূল ধারার রাজনীতিতে রিভাবার পদার্পণ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গুজরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের ঠিক একদিন আগে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। দিন কয়েকের মাথায় স্বামী জাডেজাকে সঙ্গে নিয়ে মোদীর সঙ্গে তাঁর দিল্লির বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন।
রিভাবা জানিয়েছেন, মোদীই তাঁর রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা। একটি অনুষ্ঠানে মোদীর বক্তৃতা শুনেই রাজনীতিতে আসতে উদ্বুদ্ধ হন রিভাবা। মোদী সেই বক্তৃতায় বলেছিলেন, “রাজনীতিকদের সমালোচনা করার আগে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সমাজ বদলানোর চেষ্টা করা উচিত।”
সেই শুরু তার পর থেকে গত তিন বছর ধরে রাজনীতির কাজ করে গিয়েছেন রিভাবা। বিজেপির নেত্রী হিসাবে জনপ্রিয়ও হয়েছেন।
রাজকোটে স্বামী জাডেজার রেস্তরাঁ দেখাশোনা করেন তিনিই। তার ফাঁকেই মেয়েকে সামলে সময় মতো পৌঁছে যান দলের সমাজসেবামূলক কর্মসূচিতে। গ্রামের মানুষদের বোঝান সরকারি প্রকল্পের উপকারিতা। বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। গুজরাতের গ্রামের রাস্তায় কপালে সিঁদুর, টিপ, মাথায় ঘোমটা টানা সেই রিভাবা তখন ক্রিকেটার জাডেজার স্ত্রী নন। রেস্তরাঁর ব্যবসায়ীও নন। তখন তিনি রাজপুত নারী। যে নিজের সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য পদ্মাবতীর মতো আগুনে ঝাঁপাতে প্রস্তুত।