তিনি রাহুল গাঁধীর বান্ধবী! নাম সুমনিমা উদাস। বাড়ি নেপালে।
দিন কয়েক আগে কংগ্রেস জানিয়েছিল রাহুলের এই বন্ধুর কথা। বলেছিল, বন্ধুর বিয়েতে যোগ দিতে কাঠমাণ্ডু গিয়েছেন কংগ্রেস নেতা।
আগ বাড়িয়ে রাহুলের বিয়েবাড়ি যাওয়ার খবর প্রকাশ করার কারণ আসলে একটি ভাইরাল ভিডিয়ো। যে ভিডিয়োটি নেটমাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন বিজেপির অমিত মালবীয়। তাতে রাহুলকে দেখা গিয়েছিল একটি নাইট ক্লাবের আলো আঁধারিতে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন এক মহিলা।
ভাইরাল ভিডিয়োর বিবরণে অমিত লিখেছিলেন, দেশে যখন কংগ্রেসের ভঙ্গুর দশা, রাহুল তখন নাইট ক্লাবে। দলের ব্যাপারে তাঁর নিরাসক্তির জবাব নেই!
তবে ওই ভিডিয়ো এবং তৎপরবর্তী কংগ্রেসের ব্যাখ্যার পর যাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, তিনি ওই সুমনিমা। যাঁর বিয়েতে যোগ দিতে নেপালে গিয়েছিলেন রাহুল। এমনকি, ছোট্ট সফরে নাইট ক্লাবেও ঘুরে এসেছিলেন।
রাহুল যে নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন, তার নাম ‘লর্ড অব দ্য ড্রিঙ্কস’। কাঠমাণ্ডুর ক্লাবটি ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, রাহুল সেখানে গিয়েছিলেন।
নেপালের দৈনিক পত্রিকা ‘কাঠমাণ্ডু পোস্ট’ জানিয়েছে, ২ মে নেপালের রাজধানীতে এসে পৌঁছন রাহুল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও তিন জন। তবে তাঁরা বিমানবন্দরে নেমেই সোজা চলে গিয়েছিলেন ম্যারিয়ট হোটেল।
সংবাদপত্রটি এ কথাও জানিয়েছে, সুমনিমার বিয়ের নিমন্ত্রণরক্ষা করতেই নেপালে গিয়েছিলেন রাহুল। কে এই সুমনিমা? তিনি নেপালের কূটনীতিবিদ ভিম উদাসের কন্যা। এবং পেশায় সাংবাদিক।
সিএনএনের রিপোর্টার ছিলেন সুমনিমা। ভারতের বহু রাজনৈতিক ঘটনার রিপোর্ট করেছেন। এমনকি, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ভারতে ছিলেন সুমনিমা। সে বছর কংগ্রেসকে হারিয়ে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। তখন মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেব রাহুলকে সামনে রেখে লড়েছিল কংগ্রেস। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের খবর করছিলেন সুমনিমা।
সাংবাদিক হিসেবে নাম রয়েছে সুমনিমার। তাঁর প্রোফাইল বলছে, সাংবাদিকতার জন্য বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে বিশেষ সম্মানজনক সাইনে গোল্ডেন ইগল পুরস্কারও রয়েছে।
সুমনিমা দিল্লিতে ছিলেন ২০১২ সালেও। দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট করেছিলেন তিনি।
রাহুলের সঙ্গে তাঁর আলাপ এবং বন্ধুত্ব কি তখন থেকেই? এ ব্যাপারে কংগ্রেস কিছু বলেনি।
সুমনিমার বাবা ভীম এক সময়ে মায়ানমারে নেপালের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনিও দু’জনের বন্ধুত্ব নিয়ে কিছু বলতে চাননি। শুধু স্বীকার করেছেন, তাঁরা রাহুলকে সুমনিমার বিয়েতে অতিথি হয়ে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন।
রাহুলকে ভারতের অন্যতম এলিজিবল ব্যাচেলর বলা চলে। কংগ্রেসের সম্রাজ্যের (তার অবস্থা যেমনই হোক না কেন) একমাত্র উত্তরসূরি তিনি। যদিও নিজের মুকুট আপাতত সরিয়ে রেখেছেন তবু তাঁর মহিলা অনুরাগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু রাহুলের মহিলা বন্ধুর কথা খুব কমই প্রকাশ্যে এসেছে। সুমনিমার কথা শুনে তাই উৎসাহিত হয়েছিলেন অনেকেই। রাজনৈতিক আক্রমণ চালাতে শুরু করেছিল বিজেপিও।
পরে জানা যায় নাইট ক্লাবে যে মহিলার সঙ্গে রাহুলকে দেখা গিয়েছে তিনি সুমনিমাও নন।
ওই মহিলা নেপালে চিনের রাষ্ট্রদূত। নাম হু ইয়াংকি। বয়স ৫২। সুমনিমার বিয়েতে সম্ভবত আমন্ত্রণ ছিল তাঁরও। একসঙ্গেই তাঁরা নাইটক্লাবে আসেন।
তবে ঘটনাটি জানার পরও থামানো যায়নি বিরোধীদের। তারা এখন আক্রমণের অভিমুখ বদলে বলছে, ‘যে নেপাল ভারতকে ভাঙতে চাইছে, উত্তরাখণ্ডকে নিজের বলে দাবি করছে, সেই নেপালের এক সরকারি কর্মীর মেয়ের বিয়েতে গেলেন রাহুল! উনিও কি ভারত বিরোধিতাকে সমর্থন জানাচ্ছেন?’ কংগ্রেস অবশ্য এই আক্রমণের কোনও জবাব দেয়নি।