ইডি দাবি করেছে, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ শনিবার সাংবাদিকদের তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্বামীর যে এত সম্পত্তি, তা তিনি জানতেন না। স্থানীয়রা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। এক সময়ে কুন্তলের ‘ছায়াসঙ্গী’ ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। মিছিল, মিটিং থেকে তৃণমূলের কর্মসূচিতে যোগ দিতেন। দলীয় পদও পেয়েছিলেন। সহধর্মিণী থেকে সহকর্মিনীও হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে শান্তনুর গ্রেফতারির পরেই প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার নাম। অভিযোগ, হুগলির চন্দননগরে স্ত্রীর বকলমে প্রোমোটারিতে নাকি বিনিয়োগ করেছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল যুবনেতা! স্থানীয়দের দাবি, প্রিয়াঙ্কার নামে আরও অনেক সম্পত্তি রয়েছে। প্রিয়াঙ্কা মানতে চাননি। চন্দননগরে আবাসন তৈরিতে নিযুক্ত একটি ঠিকাদারি সংস্থার অন্যতম শরিক হিসাবে নাম রয়েছে শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার।
কে এই প্রিয়াঙ্কা? কী ভাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল শান্তনুর? স্বামীর সব কাজে কতটা সহযোগিতা করতেন তিনি? এই নিয়ে স্থানীয়রা একাধিক দাবি করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রিয়াঙ্কার বাড়ি জিরাটে। ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন দু’জন।
স্থানীয়দের দাবি, শান্তনু আর প্রিয়াঙ্কার বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়। অতীতে মোবাইলের সিমকার্ডের দোকান ছিল তাঁর। যে এলাকায় শান্তনুর দোকান ছিল, তার কাছেই ছিল প্রিয়াঙ্কার বাড়ি। সেখান থেকেই দু’জনের পরিচয়।
প্রিয়াঙ্কা জিরাট কবরো হাই স্কুলে পড়াশোনা করতেন। বলাগড় হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ কলেজে পড়াশোনা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খামারগাছি থেকে টেট প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। প্রাথমিক স্কুলে তাঁর জন্য চাকরির চেষ্টা করেছিলেন স্বামী শান্তনু। ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা জানিয়েও ছিলেন। কুন্তলের কাছে এই নিয়ে শান্তনু তদ্বিরও করেছিলেন বলে দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের।
বিয়ের আগে প্রিয়াঙ্কার পদবি ছিল গুপ্ত। তাঁর বাবা কাঞ্চন গুপ্ত অঙ্কন শিক্ষক। প্রিয়াঙ্কা নিজেও আঁকা শেখান। প্রথমে কোবরোতে বাড়ি ছিল প্রিয়াঙ্কাদের। পরে তাঁর বাবা জিরাট আহমদপুর হাসপাতাল রোডে বাড়ি করেন।
বিয়ের পর প্রিয়াঙ্কা বুটিকের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর শান্তনু রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের চাকরি পান। ক্রমে প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতার অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে।
হুগলি জেলায় তৃণমূলের সব কর্মসূচিতেই দেখা যেতে থাকে প্রিয়াঙ্কাকে। স্বামীর সঙ্গে তিনিও উপস্থিত থাকতেন। পরনে থাকত ‘এবি’ লেখা টিশার্ট। যদিও কখনও প্রিয়াঙ্কাকে মঞ্চে থাকতে দেখা যায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা ছিলেন প্রিয়াঙ্কা।
হুগলির একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ব্যান্ডেলের বালির মোড় এবং ব্যান্ডেল চার্চের কাছে দু’টি বাড়ি, বলাগড়ের চাদরার একটি রিসর্টে হানা দেয় তারা। ইডি সূত্রে খবর, এগুলির সঙ্গে যোগ রয়েছে শান্তনু এবং তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার। চুঁচুড়া জগুদাসপাড়ায় শান্তনুর একটি ফ্ল্যাটেও হানা দিয়েছিল ইডি।
সূত্রের খবর, নামে-বেনামে একাধিক বাড়ি, ধাবা, রেস্তোরাঁ, হোম স্টে, বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে, যেগুলির সঙ্গে যোগ রয়েছে শান্তনু এবং প্রিয়াঙ্কার। ইডি দাবি করেছে, একটি সংস্থার ডিরেক্টর পদেও রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।
যদিও প্রিয়াঙ্কা শনিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এত সম্পত্তির কথা তিনি জানতেন না। প্রিয়াঙ্কার কথায়, ‘‘কিছুটা অবশ্যই জানতাম। তবে সবটা জানি না।’’
যদিও কোনও অভিযোগ প্রিয়াঙ্কা মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যাইনি, রয়েছি বাড়িতেই।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘ইডি আমাকে ডাকেনি এক বারও। ডাকলে নিশ্চয়ই সহযোগিতা করব।’’তা হলে কি এই গ্রেফতারির নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’? এই নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি শান্তনুর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ইডি তাদের কাজ করছে। আমাদের কিছু বলার নেই।’’