স্কুলের পর বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তবে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। সে দিনের সেই ছাত্রটিই আজ ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-র চেয়ারম্যান পদে আসীন। কে এই মনোজ সোনি?
৫ এপ্রিল ইউপিএসসি-র শীর্ষকর্তা হিসাবে মনোজকে নিয়োগ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আগামী বছরের ২৭ জুন পর্যন্ত মনোজের কার্যকাল। প্রসঙ্গত, দেশের আমলাদের বাছাই করার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভার রয়েছে ওই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার উপর।
ইউপিএসসি-র পূর্বতন চেয়ারম্যান প্রদীপকুমার জোশীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মনোজ। এই পদে আসার আগে দেশের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের নানা স্বীকৃতিও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
গোড়ার দিকে অবশ্য এতটা মসৃণ ছিল না মনোজের জীবন। বরং পড়াশোনা চালাতে এক সময় ধূপকাঠিও বিক্রি করতে হয়েছে তাঁকে।
মনোজের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মুম্বইয়ের ফুটপাতে জামাকাপড়ের হকারি করেই সংসার চালাতেন বাবা। বাবার অকালমৃত্যুর পরে মনোজের ঘাড়েই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। সে সময় তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
সংসার চালাতে এক কালে মুম্বইয়ের ভুলেশ্বর এলাকার বস্তিতে ধূপকাঠি বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন মনোজ। যে এলাকার ফুটপাতে তাঁর বাবা হকারি করতেন। ধূপকাঠি বেচে যা আয় হত, তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
ছাত্রাবস্থায় বাবার মতো স্বামীনারায়ণ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য হয়েছিলেন মনোজ। মুম্বইয়ে ওই সম্প্রদায়ের অনুপম মিশনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মিশনের বিশ্বজোড়া কাজকর্মের দেখাশোনার ভার রয়েছে সাহেব’জি নামে পরিচিত এক ব্যক্তির। মনোজের পড়াশোনার খরচ চালাতে সাহেব’জির মিশনের সাহায্যও কাজে এসেছিল বলে দাবি।
১৯৭৮ সালে মুম্বই থেকে গুজরাতের আনন্দ জেলায় বসবাস করতে শুরু করেন মনোজরা। তত দিনে পড়াশোনাকেই একমাত্র সম্বল হিসাবে আঁকড়ে ধরেছেন মনোজ। তবে গোড়াতেই ঠোক্কর খেয়েছিলেন।
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ফেল করার পর ভেঙে পড়েননি মনোজ। নতুন উদ্যমে এ বার কলা বিভাগে ভর্তি হন রাজরত্ন পিটি পটেল কলেজে।
মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাতে যাওয়ার পর মোগরি এলাকায় সাহেব’জির অনুপম মিশনের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন মনোজ। বছর দুয়েক আগে ওই মিশন থেকেই দীক্ষা নেন তিনি। স্বামীনারায়ণ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে ‘নিষ্কাম কর্মযোগী’ থাকার ব্রতও পালন করতে শুরু করেন বলে দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের।
ইউপিএসসি-র ওয়েবসাইটে মনোজের সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, তিনিই দেশীয় কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মনোজ পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা করেন।
এর পর গুজরাতের বল্লভ বিদ্যানগরের সর্দার পটেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বল্লভ বিদ্যানগরের ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াতেন তিনি।
এর পরেই মনোজের কর্মজীবনের উজ্জ্বল অধ্যায় শুরু হয়। ৪০ বছর বয়সে বডোদরার মহারাজা শিবাজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের দায়িত্ব নেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের দাবি, মনোজই দেশের সর্বকনিষ্ঠ উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের ফাঁকে বই লেখার কাজেও মন দিয়েছিলেন মনোজ। ১৯৯৮ সালে তাঁর লেখা ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য গ্লোবাল পলিটিক্যাল আর্থকোয়েক’ প্রকাশিত হয়।
ইউপিএসসি-র ৩১তম চেয়ারম্যান পদে কার্যভার শুরু করার আগে থেকেই মনোজের নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। নেটমাধ্যমে সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার-সহ প্রাক্তন আমলাদের একাংশ।
মনোজকে ‘চরম হিন্দুত্ববাদী সন্ন্যাসী’ তকমা দিয়ে প্রাক্তন আমলা জহরের কটাক্ষ, ‘ইউপিএসসি-র চেয়ারম্যান পদে এ বার মনোজ সোনি আইএএস, আইপিএস, কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের নির্বাচন করবেন। ঈশ্বর ভারতকে রক্ষা করুন।’ একে বিপদসঙ্কেত বলেও দাবি করেছেন জহর।