এক প্রধানমন্ত্রী, যিনি দেশের মানুষের জন্য বাতিল করে দিলেন নিজের বিয়ে! অথচ এই বিয়ের জন্য তিনি অপেক্ষা করে ছিলেন গত চার বছর ধরে।
নানা রাজনৈতিক কারণে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়ে ওঠেনি। পাত্র-পাত্রী রাজি হলেও প্রতিবার কোনও না কোনও বাধা এসেছে সামনে।
২০২০ সালে বিপুল ভোটে জিতে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন জাসিন্ডা আর্ডেন। দল লেবার পার্টিও তাঁর নেতৃত্বে প্রচুর আসন পায়। তার পর সম্ভবত তাঁর দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে বিয়ের আয়োজনের সময় পাননি জাসিন্ডা।
বিশ্বের কনিষ্ঠতম মহিলা প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা। ২০১৭ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।
তার আগে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ারের দফতরে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন জাসিন্ডা।
২০০৮ সালে প্রথম নিউজিল্যান্ডের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস-এর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে রাজনীতিতে জাসিন্ডার যোগদান তারও অনেক আগে থেকে। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি লেবার পার্টির সঙ্গে কাজ করছেন। তখন তাঁর বয়স ১৭।
তার পর ২০০১ সালে যোগাযোগ নিয়ে স্নাতক হন। বিদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রধানের দফতরে কাজ করতে শুরু করেন জাসিন্ডা। দেশে ফিরে বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারমূলক কাজ এবং সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করেন নিজেকে।
জাসিন্ডা তাঁর সঙ্গী চয়ন করেন ২০১২ সালে। তখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি। তবে দেশের প্রধান বিরোধী দলের এমপি। এক সাংবাদিককে পছন্দ হয় হবু প্রধানমন্ত্রীর। নাম ক্লার্ক গেফোর্ড।
ছ’বছরের মাথায় ২০১৮ সালে ক্লার্কের সন্তানের জন্মও দেন জসিন্ডা। এখন তিনি একটি চার বছরের কন্যা সন্তানের মা।
জাসিন্ডা দ্বিতীয় রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি প্রধান পদে থাকাকালীন অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন এবং সন্তানের জন্মও দিয়েছেন।
২০১৮ সালে জাসিন্ডা মা হওয়ার পরই তাঁর বিয়ে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে ব্যস্ত জাসিন্ডা বিয়ে করার সময় পাননি।
এঁর মধ্যেই লেবার পার্টির প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাসিন্ডাকে। কোলের মেয়েকে সামলে এক দিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ, আর এক দিকে দলের দায়িত্ব সামলেছেন জাসিন্ডা। ২০২০ সালে তাঁর নেতৃত্বেই নিউজিল্যান্ডে জয়ী হয় লেবার পার্টি। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন জাসিন্ডা।
সবাই ভেবেছিল এর পর হয়তো বিয়ে করবেন জাসিন্ডা আর তাঁর প্রেমিক ক্লার্ক। কিন্তু এর পর আসে কোভিড।
গত দু’বছরে শিশুদের অপুষ্টি, দারিদ্র, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কাজ করে চলেছে নিউজিল্যান্ডের জাসিন্ডার সরকার। ঠিক ছিল ২০২২ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিয়ে করবেন। বিয়ের তারিখও ঠিক করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এ বার এল ওমিক্রন।
করোনা প্রতিরোধে ফের কড়া হল নিউজিল্যান্ড। দেশে এখন মাস্ক বাধ্যতামূলক। বন্ধ যে কোনও রকমের জমায়েতও। এর মধ্যেই বিয়ের তারিখ ছিল জাসিন্ডার।
জাসিন্ডা সেই বিয়ে আপাতত বাতিল করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমি আহামরি কিছু করিনি। করোনা পরিস্থিতিতে নিউজিল্যান্ডের অনেককেই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমি তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলাম মাত্র।’’