Buddhadev Sau

যাদবপুরের মহাসঙ্কটকালে কাকে উপাচার্য করলেন রাজ্যপাল, কে এই বুদ্ধদেব সাউ?

প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে বিতর্কের আবহে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ১৫:২১
Share:
০১ ২০

প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে বিতর্কের আবহে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউ। শনিবারই রাজভবনের তরফে এই খবর জানানো হয়।

০২ ২০

রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস অবিলম্বে বুদ্ধদেবকে কার্যভার গ্রহণ করতে বলেছেন। রাজভবনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement
০৩ ২০

নতুন উপাচার্যের ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক এবং পড়ুয়াদের একাংশ। বুদ্ধদেবের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

০৪ ২০

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বুদ্ধদেব জাতীয়তাবাদী শিক্ষক এবং অধ্যাপকদের সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শিক্ষক মহাসঙ্ঘ’-এর সভাপতি। সংগঠনটি ‘বিজেপিপন্থী’ অধ্যাপক সংগঠন বলেই পরিচিত। যদিও এই সংগঠনের কোনও অস্তিত্ব নেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

০৫ ২০

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, যাদবপুরে অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (আবুটা)-র হিসাবরক্ষক (ট্রেজ়ারার) পদে রয়েছেন বুদ্ধদেব। ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ ইউনিভার্সিটি প্রফেসর্স অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েবকুপা)-এরও হিসাবরক্ষক পদে ছিলেন তিনি। এখন অবশ্য ততটা সক্রিয় নন।

০৬ ২০

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন বুদ্ধদেব। এর পর ২০০০ সালে তিনি এমটেক পাশ করেন ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট’ থেকে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই পিএইচডি করেছেন বুদ্ধদেব। তা শেষ হয় ২০১২ সালে।

০৭ ২০

এর মধ্যেই ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লেকচারার’ ছিলেন তিনি। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি সিনিয়র লেকচারার ছিলেন। পরের তিন বছর রিডার হিসাবে ছিলেন যাদবপুরে। এর পর ২০১২ সালে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হন বুদ্ধদেব।

০৮ ২০

২০১৫ সালে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর থেকে প্রফেসর পদে উন্নীত হন বুদ্ধদেব। যাদবপুরের অধ্যাপক এবং পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, ‘অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার’ দুর্বল হওয়ার কারণেই প্রফেসর সিলেকশন কমিটি তাঁর নামে অনুমোদন দিচ্ছিল না।

০৯ ২০

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘বুদ্ধদেববাবুর এইচ ইনডেক্স পয়েন্ট নয়। আই-তেন ইনডেক্সও নয়। অ্যাকাডেমিক্সের দিক দিয়ে যা খুবই দুর্বল। বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দিন ধরেই উপাচার্যহীন। আমাদের সত্যিই এক জন অভিভাবকের দরকার ছিল। কিন্তু এমন এক জনকে নিয়োগ না করা হলেই ভাল হত বলে মনে হয়। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে যাঁরাই ওই পদে বসেছেন, সেই ভাবে দেখলে তাঁরা সকলেই অনেক এগিয়ে।’’

১০ ২০

বুদ্ধদেবকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করার পক্ষেও যুক্তি রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁদের মত, এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এবং ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এক জন কঠোর প্রশাসকের দরকার বিশ্ববিদ্যালয়।

১১ ২০

বুদ্ধদেব দক্ষ হাতে সেই কাজটি করতে পারবেন মনে করেই তাঁকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছে রাজভবন। উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পরেই রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বুদ্ধদেব।

১২ ২০

বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে দেখতে হবে। সব জায়গাতেই উন্নতির পরিসর থাকে।’’ তাঁর মত, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিনটি স্তম্ভ রয়েছে— প্রশাসন, ফ্যাকাল্টি (বিভিন্ন বিভাগ) এবং পড়ুয়ারা। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য প্রতিটি স্তম্ভেই সমান জোর দিতে হবে। এর মধ্যে একটি স্তম্ভ নড়ে গেলেই বিপদ। উন্নতির জন্য প্রতিটি স্তম্ভকে দায়িত্ব নিতে হবে। রিসোর্স ইউটিলাইজেশন অত্যন্ত জরুরি।’’

১৩ ২০

ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার আবহে বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে কেন সিসি ক্যামেরা নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার প্রেক্ষিতে বুদ্ধদেব বলেছেন, ‘‘আলাদা করে সিসিটিভি নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সিকিউরিটি (নিরাপত্তা)-র বিষয়টি ভাল করে দেখতে হবে। সিসিটিভি তো প্রযুক্তি মাত্র। পরিবর্তে আরও অনেক ব্যবস্থা আছে। দেখতে হবে কোনটা করলে আমাদের সুস্থ মানের চিন্তাভাবনা ব্যাহত হবে না এবং সিকিউরিটিও বজায় থাকবে।’’

১৪ ২০

যাদবপুরের হস্টেলকে পূর্ণ আবাসিক করে তোলা যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন নতুন উপাচার্য।

১৫ ২০

গত ৩১ মে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সুরঞ্জন দাস। আচার্য বোসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। পরে ওই পদে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে যাদবপুরেরই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অমিতাভ দত্তকে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল।

১৬ ২০

কিন্তু গত ৪ অগস্ট অমিতাভও ইস্তফা দেন। রাজ্যপাল বোস তাঁকে বলেছিলেন ইস্তফা দিতে। এর পর আর নতুন করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। ফলত, উপাচার্যহীন হয়েই ছিল যাদবপুর।

১৭ ২০

তার মধ্যেই গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে প্রথম বর্ষের এক নবাগত পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য।

১৮ ২০

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, রাজ্যপালের কাছে অমিতাভের নামে ‘নালিশ’ করেছিলেন বুদ্ধদেব-সহ কয়েক জন শিক্ষক। অমিতাভের ইস্তফার পর বুদ্ধদেব বলেছিলেন, ‘‘কাউকে না জানিয়েই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন অমিতাভবাবু। আচার্যকে আমরা সে কথাই জানিয়েছিলাম।’’ সেই বুদ্ধদেবকেই এ বার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসানো হল।

১৯ ২০

বুদ্ধদেবের নিয়োগকে ‘রাজনৈতিক নিয়োগ’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের পথ অনুসরণ করে বিজেপিকে খুশি করার বর্তমান রাজ্যপাল সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছেন। যে ভাবে উনি স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে উপাচার্যহীন করে দিচ্ছেন, তারই খেসারত দিতে হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে।’’

২০ ২০

পাল্টা বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যা অবস্থা, তাতে উপাচার্যের প্রয়োজন ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের রাজ্যপালের উপর আস্থা আছে। তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলার কোনও নৈতিক কিংবা রাজনৈতিক অধিকার তৃণমূলের নেই। কারণ, তারা গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement