Cricket Betting

অধিনায়কের রহস্যমৃত্যু, দুর্নীতি! ক্রিকেট বেটিং চক্র প্রকাশ্যে আসে সাদামাটা পুলিশি অভিযোগের পর

দিল্লির এক ব্যবসায়ী থানায় অভিযোগ করেছিলেন তাঁর থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই প্রকাশ্যে এসেছিল ক্রিকেট বেটিংয়ের অন্ধকার জগৎ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৯
Share:
০১ ১৯

শুরুটা হয়েছিল ২০০০ সালে। দিল্লির এক ব্যবসায়ী থানায় অভিযোগ করেছিলেন তাঁর থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই প্রকাশ্যে এসেছিল ক্রিকেট বেটিংয়ের অন্ধকার জগৎ। খুলে গিয়েছিল হ্যান্সি ক্রোনিয়ের মতো বিখ্যাত ক্রিকেটারের ‘মুখোশ’। এই সময়েই নাম উঠে আসে সঞ্জীব চাওলার। কে এই সঞ্জীব যাঁর অঙ্গুলিনির্দেশে উঠত-বসত ক্রিকেটের বেটিং দুনিয়া?

০২ ১৯

সময়টা ২০০০ সাল। দিল্লির প্রবীণ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছিলেন, দুবাইয়ের শাহিন হাইথেলি তাঁর থেকে পাঁচ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। ওই শাহিনের সঙ্গে দাউদ-ঘনিষ্ঠ ছোটা শাকিলের যোগ ছিল বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।

Advertisement
০৩ ১৯

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে শহিনের সঙ্গে যোগ রয়েছে বলিউডের এক জনের। তিনি টি-সিরিজ সংস্থার মালিক তথা গায়ক গুলশন কুমারের ভাই কিসান কুমার। যদিও গুলশনের মতো খ্যাতি পাননি তিনি।

০৪ ১৯

কিসানের ফোনে আড়ি পাতে দিল্লি পুলিশ। কিন্তু তেমন কিছুই খুঁজে পায় না। পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়, কিসানের বন্ধু রাজেশ কালরা, সুনীল দারা, মনমোহন খট্টরের উপর নজর রাখবে তারা।

০৫ ১৯

২০০০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রবাসী বন্ধু সঞ্জীব চাওলার হাতে নিজের ফোনটি তুলে দিয়েছিলেন কিসান। সঞ্জীব লন্ডন থেকে মুম্বইয়ে ফিরেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে তাঁর কাছে ফোন ছিল না।

০৬ ১৯

তাজমহল হোটেলে উঠেছিলেন সঞ্জীব। সেখানেই উঠেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। তারা ভারতে খেলতে এসেছিল। সঞ্জীবের উপর নজর রাখা শুরু করে পুলিশ। জানতে চেষ্টা করে, কেন তাঁর হাতে ফোন তুলে দিয়েছিলেন কিসান।

০৭ ১৯

পুলিশ জানতে পারে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়েকে একটি মোবাইল দিয়েছিলেন সঞ্জীব। সেই মোবাইলটি ছিল রাজেশের। পুলিশ কল তালিকা খতিয়ে জানতে পারে, যখন ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা চলত, তখন ক্রোনিয়ের সঙ্গে আরও বেশি করে কথা বলতেন সঞ্জীব।

০৮ ১৯

পুলিশ এ-ও জানতে পেরেছিল, সঞ্জীবের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গী কিসান, রাজেশ, সুনীলের সঙ্গেও ম্যাচ চলাকালীন অনেক বার ফোনে কথা বলতেন ক্রোনিয়ে।

০৯ ১৯

পুলিশ আড়ি পেতে শোনে, রাজেশের কাছে রোমিংয়ের ব্যবস্থা-সহ একটি মোবাইল চেয়েছিলেন অভিযুক্ত কিসান। নির্দিষ্ট করে জানানো হয়েছিল যেন শারজায় কথা বলা যায় সেই ফোন দিয়ে। দু’জনে বার বার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার আগের ম্যাচগুলি নিয়ে কথা বলেছিলেন বলেও দাবি করে পুলিশ।

১০ ১৯

অভিযোগ ক্রোনিয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সঞ্জীব। সেই নিয়ে আবার ফোনে রাজেশ এবং কিসান আলোচনাও করেছিলেন। সে বার দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরের সময় ক্রোনিয়ের সঙ্গে নিয়মিতই কথা বলতেন সঞ্জীব। সেই কথোপকথন হাতে এসেছিল পুলিশের। তার পরেই প্রকাশ্যে এসেছিল ক্রিকেট বেটিং চক্র।

১১ ১৯

পুলিশ তদন্তে আরও জেনেছিল, ২০০০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রোনিয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় সঞ্জীবের। তিনিই ক্রোনিয়েকে বুঝিয়েছিলেন যে, বেটিংয়ে অংশ নিলে অনেক রোজগার করা যায়।

১২ ১৯

সঞ্জীবের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন ক্রোনিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরে ওই ক্রিকেটার প্রচুর রোজগার করেছিলেন বলেও অভিযোগ।

১৩ ১৯

২০০০ সালের এপ্রিলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এফআইআর করে পুলিশ। তার পরেই লন্ডনে পালিয়ে যান সঞ্জীব। ক্রিকেট বেটিং চক্রে তদন্ত করে ৭০ পাতার চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। সেখানে নাম ছিল ক্রোনিয়ে এবং সঞ্জীবের।

১৪ ১৯

পুলিশের আরও অভিযোগ, ১৯৯৯ সালের অগস্টে ইংল্যান্ড দলের দু’জন ক্রিকেটারকেও টাকা দিতে চেয়েছিলেন সঞ্জীব।

১৫ ১৯

১৯৯৬ সালে বিজনেস ভিসায় সঞ্জীব লন্ডন গিয়েছিলেন। ২০০০ সালে তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্ট পেয়ে যান।

১৬ ১৯

বেটিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৬ সালের জুনে লন্ডনেই গ্রেফতার হন সঞ্জীব। তাঁকে দেশে ফেরানোর আবেদন করে ভারত। সঞ্জীব আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ভারতের জেলে তাঁর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

১৭ ১৯

দীর্ঘ দিন সওয়াল, শুনানির পর ২০২০ সালে সঞ্জীবকে লন্ডন থেকে ভারতে নিয়ে আসা হয়। তাঁর আগে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে মাত্র এক জন অভিযুক্তকেই ব্রিটেন থেকে দেশে ফেরাতে পেরেছিল ভারত। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ক্রোনিয়ে ২০০২ সালের জুনে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।

১৮ ১৯

তদন্তকারীদের একটি অংশের তরফে জানা গিয়েছিল, বছরের পর বছর ক্রিকেটারদের হাতে নিয়ে যে বেটিং করছিলেন সঞ্জীব, তার নেপথ্যে ছিল দাউদের ডি কোম্পানি। হাওয়ালার মাধ্যমে হত টাকার লেনদেন।

১৯ ১৯

সেই বেটিং চক্রের অনেক রহস্য আজও রয়ে গিয়েছে। অনেক অভিযুক্তই বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছেন প্রমাণের অভাবে। অনেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। সঞ্জীব এখনও তিহাড় জেলে রয়েছেন। চলছে মামলা। তবে যে ভাবে সঞ্জীব বেটিং চক্র চালিয়েছিলেন, তা দেখে তাজ্জব হয়ে যান তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement