মঙ্গলবার হয়ে গেল আইপিএলের বহু প্রতীক্ষিত নিলামপর্ব। তবে সেই নিলাম ছিল ছোট দরের। প্রতিটি দলের কাছেই কিছু না কিছু পরিকল্পনা ছিল নিলাম নিয়ে। তবে সব দলের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তার মধ্যেও ক্রিকেটারদের দরাদরিতে দেখা গেল দলের মালিক পক্ষের লড়াই। পরের বছরের প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সব দলই যে যার মতো ঘর গুছিয়ে নিল।
তবে সব দলের মধ্যে নজর কেড়েছে শাহরুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আইপিএল প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সব থেকে দামি ক্রিকেটার কিনে নজির গড়েছে তারা। নিলামে অস্ট্রেলিয়ার বোলার মিচেল স্টার্ককে ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় কিনেছে কেকেআর।
মিচেল কলকাতার দলে যাওয়ার আগে প্যাট কামিন্সকে ২০ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকায় কিনেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। কিন্তু সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে কেকেআর।
মিচেলকে কেনার জন্য হাত বাড়িয়েছিলেন গুজরাত টাইটান্সের মালিকরাও। কিন্তু টাকার অঙ্কে কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি তারা।
নিলামে নামার আগে কলকাতার হাতে ৩২.৭০ কোটি টাকা ছিল। লক্ষ্য ছিল অন্তত দু’জন ভাল মানের জোরে বোলার। তাই দরাদরিতে যাওয়ার আগে থেকেই তাদের নজর ছিল মিচেলের দিকে। তাঁর নাম নিলামে উঠতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন কেকেআর কর্তারা।
নিলাম শুরু হওয়ার আগে ১২ জন ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিলামে ঢেলে দল সাজানোর পরিকল্পনাও করেছিলেন কর্তৃপক্ষ।
গৌতম গম্ভীর এ বার কেকেআরের মেন্টর হওয়ায় অনেকেই মনে করেছিলেন, বুদ্ধির ছাপ থাকবে ক্রিকেটার কেনার ক্ষেত্রে। কিন্তু চমক দিতে পারল না কলকাতা।
ক্রিকেট নিয়ে নিয়মিত চর্চা রয়েছে, এমন বিশেষজ্ঞদেরও মত, দামি ক্রিকেটার কিনে নজির গড়লেও সে ভাবে ঘর গোছাতে পারেননি কেকেআর।
আইপিএলের নিলামের শেষে তাই পাওয়া, না-পাওয়ার মধ্যে ফারাক থেকে গেল কেকেআরের ক্রিকেটপ্রেমীদের। যে দল হল, তাতে অনেক জায়গায় প্রত্যাশামতো ক্রিকেটার পাওয়া গেল না। মিচেলের পিছনে কলকাতা এতটাই টাকা খরচ করে ফেলল যে, বাকি ভাল দেশীয় ক্রিকেটার নেওয়া গেল না।
তা হলে শেষমেশ কোন কোন ক্রিকেটারদের উপর ভরসা রেখে আইপিএল খেলতে নামছে কেকেআর? কে নতুন, কে পুরনো? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
দলের ব্যাটারদের নিয়ে প্রথম থেকেই খুব একটা চিন্তায় ছিলেন না শাহরুখ-গম্ভীররা। কলকাতার ব্যাটারদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন ক্যাপ্টেন শ্রেয়স আইয়ার। এ ছাড়াও রয়েছেন নীতীশ রানা, রিঙ্কু সিংহ, রামানুল্লাহ গুরবাজ, শেরফানে রাদারফোর্ড, কেএস ভরত, মণীশ পাণ্ডে, জেসন রয়, অঙ্গকৃশ রঘুবংশী।
এঁদের মধ্যে মিনি নিলামে রাদারফোর্ডকে দেড় কোটি, ভরতকে পঞ্চাশ লক্ষ, মণীশকে পঞ্চাশ লক্ষ এবং রঘুবংশীকে কুড়ি লক্ষ লাখ টাকায় কিনেছে কেকেআর। মণীশ আগে কলকাতাতেই খেলতেন। সেই অর্থে তিনি নতুন না। ‘ঘরওয়াপসি’ হয়েছে তাঁর।
ব্যাটিং বিভাগে মিডল অর্ডার মজবুত করতে রাদারফোর্ডকে কিনেছে কলকাতা। কিন্তু বিদেশি হওয়ায় ক’টি ম্যাচে সুযোগ পাবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মণীশকে নেওয়া হয়েছে মিডল অর্ডারের কথা ভেবেই। বিকল্প উইকেটকিপার হিসাবে ভরতকে ভেবে রাখা হয়েছে।
কেকেআরের বড় অপ্রাপ্তির জায়গা অলরাউন্ডার। আন্দ্রে রাসেল, বেঙ্কটেশ আয়ার এবং অনুকূল রায় ছাড়া কেউ ছিলেন না। নিলামে রাচিন রবীন্দ্র, ড্যারিল মিচেল, হর্ষল পটেল, জেরাল্ড কোয়েৎজির মতো অলরাউন্ডার ছিলেন। কারও দিকেই ঝাঁপায়নি তাঁরা। পরে রমনদীপ সিংহকে ২০ লাখ টাকায় কেনে কলকাতার দল।
নিলামে অলরাউন্ডার নিয়ে অপ্রাপ্তি থাকলেও কলকাতার প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে স্টার্ক। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার তিনি। কেকেআরের বোলিং বিভাগের মুখও হতে পারেন তিনি।
তবে দলে ভাল কোনও ভারতীয় পেসার নেই। হর্ষিত রানা, বৈভব অরোরারা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেললেও, আইপিএলের মতো মঞ্চে এখনও যথেষ্ট পরীক্ষিত নন।
বাকি বোলারদের মধ্যে রয়েছেন সুযশ শর্মা, মুজিব উর রহমান, গাস অ্যাটকিনসন, সাকিব হুসেন, সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী, চেতন সাকারিয়া।
মিচেল ছাড়া বোলিংয়ে কেকেআর-এর আরেক প্রাপ্তি মুজিব। নারাইনের বিকল্প হিসাবে নিয়ে রাখা হল তাঁকে। মিনি নিলামে দু’কোটি টাকা দিয়ে তাঁকে কিনেছে কলকাতা। একমাত্র কলকাতাই আফগানিস্তানের এই ক্রিকেটারের জন্য দর হাঁকিয়েছিল।
বোলারদের মধ্যে অ্যাটকিনসনকে এক কোটি টাকা, চেতনকে ৫০ লক্ষ এবং সাকিবকে কুড়ি লক্ষ টাকায় মিনি নিলামে কিনেছে কলকাতা।
ব্যাটার-বোলার-অলরাউন্ডার মিলিয়ে মোট ২৩ জন ক্রিকেটার এখনও কেকেআরের ঘরে রয়েছে। খালি রয়েছে দু’টি জায়গা।