Lok Sabha Election Results 2024

‘ইন্ডিয়া’র শরিক কারা? এনডিএকে টেক্কা দিয়ে কি ভবিষ্যতে সরকার গড়তে পারবে তারা? কী বলছে সমীকরণ?

দেশের মোট ১৮টি বিরোধী দল রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’য়। তাদের হাবেভাবে জোটের অঙ্ক উল্টেপাল্টে দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠকও করছে তারা। কিন্তু অঙ্ক বদলাতে কি সফল হবে ‘ইন্ডিয়া’?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ১০:০০
Share:
০১ ৩১

পাঁকে পড়েছে পদ্ম! একদা দেশের শক্তির কেন্দ্রস্থল এখন পুরোপুরি শরিক নির্ভর। ঠেকনা ছাড়া চলা তো দূর, সরকারও গড়ারও উপায় নেই। বিজেপির এই দুরবস্থা নতুন রসদ জুগিয়েছে দেশের বিরোধী শক্তি ‘ইন্ডিয়া’কে। লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠক করেছে তারা। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’র কি কেন্দ্রে সরকার গড়ার ক্ষমতা আছে? কী বলছে জোট সমীকরণ?

০২ ৩১

লোকসভা ভোটে বিজেপি এ বার দেশে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৭২টি আসনে জিতলে সেটা হত। কিন্তু বিজেপি থমকে গিয়েছে ২৪০-এই। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য এখন এনডিএর শরিক টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু, জেডিইউয়ের নীতীশ কুমার এবং শিবসেনা (শিন্ডে)-র একনাথ শিন্ডেদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে পদ্মকে। কিন্তু শরিকদের পাশে পাওয়ার বিষয়টিও নির্ভর করছে কিছু নতুন এবং পুরনো অঙ্কের উপর।

Advertisement
০৩ ৩১

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র হাবেভাবে এই অঙ্ক উল্টেপাল্টে দেওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠকও করছে তারা। কিন্তু অঙ্ক বদলাতে কি সফল হবে ‘ইন্ডিয়া’? দেশের মোট ১৮টি বিরোধী দল রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’য়। তবে মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে ‘ইন্ডিয়া’ শরিক এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়া’র পরিবার আরও বড় হবে, শক্তিশালীও হবে।

০৪ ৩১

‘ইন্ডিয়া’ জোট তৈরির উদ্যোগ প্রথম নিয়েছিলেন জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার। লোকসভায় তাঁর দল পেয়েছে ১২টি আসন। তবে তাতে ‘ইন্ডিয়া’র কোনও লাভ নেই। কারণ নীতীশ লোকসভা ভোটের আগে জোট বদলেছেন। যোগ দিয়েছেন এনডিএতে। ফলে তাঁর প্রাপ্ত আসন আপাতত এনডিএর হাতে।

০৫ ৩১

ইন্ডিয়া জোটের প্রথম বৈঠকটি নীতীশ করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গেই। ‘ইন্ডিয়া’ নামটিও দিয়েছিলেন মমতা। লোকসভা ভোটের ফলাফল বলছে, তৃণমূল ২৯টি আসন পেয়েছে।

০৬ ৩১

‘ইন্ডিয়া’ জোট যাদের ছাড়া সম্ভব হত না, তারা হল কংগ্রেস। দেশের প্রধান বিরোধী মুখ তারা। দেশের প্রাক্তন শাসকদল। এ বছর কংগ্রেস দেশের বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে লড়েছিল বাছাই করা কিছু আসনে। তা সত্ত্বেও প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা বেড়েছে তাদের। ২০১৯ সালে ৫২টি আসন পাওয়া কংগ্রেস জিতেছে ৯৯টি আসনে।

০৭ ৩১

ইন্ডিয়া জোটের আরও এক বড় শরিক হল অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন শাসকদল এ বারের লোকসভায় জিতেছে ৩৭টি আসন।

০৮ ৩১

তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকেও রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’য়। তারা এ বার লোকসভায় তামিলনাড়ুর ২২টি আসন পেয়েছে।

০৯ ৩১

আর আছে দিল্লি এবং পঞ্জাবের শাসক দল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নেতৃত্বাধীন আপ। যারা এ বারে দিল্লিতে একটি আসন না পেলেও পঞ্জাবে তিনটি আসন জিতেছে। অর্থাৎ এ পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়া’র মোট প্রাপ্ত আসন দাঁড়াল ১৯০-এ। বিজেপির প্রাপ্ত আসনের থেকে ৫০ আসন কম। তবে এই সংখ্যা কেবল ইন্ডিয়ার পাঁচটি দলের প্রাপ্ত আসনের যোগফল।

১০ ৩১

এ ছাড়া রয়েছে মহারাষ্ট্রের মহাগঠবন্ধনের দুই দল উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা (উদ্ধব) এবং শরদ পওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি (শরদ)। এরা পেয়েছে যথাক্রমে ৯টি এবং ৮টি আসন। অর্থাৎ মহারাষ্ট্র থেকে ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ১৭টি আসন।

১১ ৩১

‘ইন্ডিয়া’র শরিক বামফ্রন্টের কিছু দলও। তারা হল সিপিআই, সিপিএম এবং আরএসপি। এর মধ্যে সিপিআই এবং আরএসপি একটি করে আসন পেয়েছে কেরলে। সিপিএম কেরল ছাড়াও রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু মিলিয়ে জিতেছে মোট চারটি আসন। এ ছাড়া বামপন্থী সিপিআইএম লিবারেশনও জিতেছে ২টি আসন। অর্থাৎ বামপন্থী দলগুলির থেকে মোট ৮টি আসন এসেছে ‘ইন্ডিয়া’য়।

১২ ৩১

বিহারের লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক। শুরুর দিন থেকে লালু এবং তাঁর পুত্র তেজস্বী যাদব রয়েছেন ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে। বিহারে এ বার তাদের আসনসংখ্যাও বেড়েছে। গত লোকসভায় বিহারে একটিও আসন না জেতা আরজেডি এ বার জিতেছে ৪টি আসন।

১৩ ৩১

ঝাড়খণ্ডের শাসকদল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। হেমন্ত সোরেনের দল ‘ইন্ডিয়া’কে এই লোকসভায় দিয়েছে ৩টি আসন।

১৪ ৩১

এ ছাড়া রাজস্থানের আরএলপি এবং আরএলটিপিও রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’য়। দুই দলই রাজস্থানে দু’টি আসন জিততে পেরেছে।

১৫ ৩১

জম্মু এবং কাশ্মীরের জেকেএনসি পেয়েছে ২টি আসন। তবে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক পিডিপি কোনও আসন পায়নি।

১৬ ৩১

দক্ষিণের আরও চারটি দল— তামিলনাড়ুর ভিসিকে, এমডিএমকে এবং কেরলের কেইসিএম এবং মুসলিম লিগ পেয়েছে যথাক্রমে ২টি, ১টি, ১টি এবং ৩টি আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আরও ৭টি আসন ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে।

১৭ ৩১

এই সব মিলিয়ে মোট ২৩৩টি আসন নিজেদের বিরোধী জোটে টানতে পেরেছে ‘ইন্ডিয়া’। যেখানে নীতীশ, নায়ডু এবং শিন্ডের মতো বড় তিনটি দল নিয়ে বিজেপি এনডিএর ছাতার তলায় আনতে পেরেছে ২৯২টি আসন।

১৮ ৩১

যে হেতু কেন্দ্রে সরকার গড়ার জাদুসংখ্যা ২৭২, তাই ‘ইন্ডিয়া’র সরকার গড়তে হলে শুধু এনডিএ ভাঙালেই চলবে না, আরও ৩৯টি আসন জোটাতেও হবে।

১৯ ৩১

এই পরিস্থিতিতে যদি বা একদা ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকা নীতীশকে এবং কয়েক মাস আগে বিজেপির পুরনো সমঝোতা-সঙ্গী জগন মোহন রেড্ডির জন্য জেলে যাওয়া চন্দ্রবাবুকে নিজেদের দিকে টানতে পারে, তাতেও কার্যসিদ্ধি হবে না। সে ক্ষেত্রে নীতীশদের ১২ এবং নায়ডুর ১৬ আসন মিলে ইন্ডিয়ার হাতে আসতে পারে ২৮টি আসন। বাকি থেকে যাবা আরও ১১।

২০ ৩১

এই ১১টি আসন জোটাতে হলে সাত জন নির্দল এবং জগনের পার্টির চার সাংসদকে প্রয়োজন ‘ইন্ডিয়া’র। অথবা অন্যান্য আঞ্চলিক দলের জয় করা আরও ৭টি আসনকে নিজেদের দিকে আনতে হবে।

২১ ৩১

কিন্তু এত হিসাব মিলিয়ে এতগুলি ছোট ছোট দলকে এক জায়গায় এনে দেশ শাসন করা কি আদৌ সম্ভব?

২২ ৩১

রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু হয় না। তবে ‘ইন্ডিয়া’ও সম্ভবত এই মুহূর্তে এত দূর ভাবছে না। বুধবারের বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তারা সর্বসমক্ষে জানিয়েছে, তার মূল বক্তব্য হল, আপাতত ঐক্যবদ্ধ বিরোধী হিসাবেই সংসদে থাকতে চায় তারা।

২৩ ৩১

অন্য দিকে, এনডিএর বৈঠকেও নীতীশ-নায়ডু মোদীকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

২৪ ৩১

তবে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছে, আসলে ‘ইন্ডিয়া’ ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ রাজনৈতিক অবস্থান নিতে চাইছে। যার ইঙ্গিত বুধবার সকালে পাওয়া গিয়েছে তেজস্বী যাদবের কথায়।

২৫ ৩১

তেজস্বী দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন যে বিমানে, সেই বিমানে ছিলেন নীতীশ কুমারও। এ ব্যাপারে তেজস্বীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ধৈর্য ধরে দেখতে থাকুন আগামী দিনে কী কী হয়।’’

২৬ ৩১

রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, এখনই জোট বেঁধে সরকার গড়ার কথা বলে বিজেপি এবং এনডিএ শরিকদের সতর্ক করে তুলতেও চাইছে না তারা। সে জন্যই সরকার গড়ার ব্যাপারে এখনই আলাদা ভাবে উদ্যোগী হচ্ছে না বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’।

২৭ ৩১

অনেকেরই মত, শরিক নির্ভর বিজেপির অবস্থা খুব শীঘ্রই কঠিন হয়ে উঠতে চলেছে।

২৮ ৩১

তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় শরিকদের চাহিদা মেনে নিতে বাধ্য হতে পারে তারা।

২৯ ৩১

সেই সময়ে ‘ইন্ডিয়া’র ভূমিকা হবে এনডিএ শরিকদের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফয়দা তোলা। তবে এ সবই রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশের অনুমান। ‘ইন্ডিয়া’ বা কোনও বিরোধী নেতা এ বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত দেননি।

৩০ ৩১

আপাতত সব ঠিক থাকলে এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শনিবার শপথ নিতে পারেন মোদী।

৩১ ৩১

তবে তার পরে ‘ইন্ডিয়া’ খেলা ঘোরানোর নতুন কোনও পরিকল্পনা করবে কি না, সেটা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement