ব্যস্ততার জন্য সিনেমা দেখার তেমন সময় পান না। তবে কখনও সুযোগ পেলে সেই ছবি থেকে শিক্ষামূলক বার্তা গ্রহণ করার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদীর ওয়েবসাইটেও তেমনই উল্লেখ রয়েছে। এক পুরনো সাক্ষাৎকারেও সেই কথা বলেছিলেন তিনি।
মোদী বলেছিলেন, ‘‘সাধারণত ছবি দেখার প্রতি আমার বিশেষ কোনও ঝোঁক নেই। কিন্তু কম বয়সে আমি সিনেমা দেখতাম, তা-ও কৌতূহলের বশে। তবে শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য আমি কখনও কোনও ছবি দেখিনি। কোনও ছবি থেকে শিক্ষামূলক কিছু খুঁজে নেওয়াই আমার অভ্যাস ছিল।’’
স্মৃতির পাতা থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করে মোদী বলেছিলেন, ‘‘আমার এখনও মনে রয়েছে যে, বহু বছর আগে বন্ধুদের সঙ্গে আমি একটি হিন্দি ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। আমার শিক্ষকেরাও সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছবি দেখা শেষ হয়ে যাওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে আমার তর্ক শুরু হয়ে যায়।’’
মোদী জানিয়েছিলেন, আরকে নারায়ণের লেখা উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ষাটের দশকে ‘গাইড’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষকদের সঙ্গে সেই ছবিটিই দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সাক্ষাৎকারে মোদী জানিয়েছিলেন, ‘গাইড’ ছবির মূল বিষয়বস্তু নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে তর্ক শুরু হয় তাঁর। ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সকলেই নিজেদের অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দেয়, ‘গাইড’ ছবি থেকে আমি এটাই বুঝেছিলাম। কম বয়সে এই ধরনের মন্তব্য করেছিলাম বলে বন্ধুরা কেউ আমার কথায় গুরুত্ব দেয়নি।’’
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে লাদাখ থেকে কয়েক জন শিশুকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কথাপ্রসঙ্গে মোদী তাদের জানিয়েছিলেন, তাঁর প্রিয় ছবি ‘গাইড’।
ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, ‘গাইড’ ছবিটি মোদীর জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। খরার প্রভাব মানুষের জীবনে ঠিক কী ভাবে পড়ে তা এই ছবি দেখেই নাকি বুঝতে পেরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এমনকি ‘গাইড’ ছবিটি মোদীকে এতখানি প্রভাবিত করেছিল যে গুজরাতে জল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পও চালু করেছিলেন তিনি।
১৯৬১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জয় চিতোর’ নামে একটি হিন্দি ছবি। প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে যে এই ছবির একটি গান তাঁর প্রিয়। এই ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘উওহ পবন বেগ সে উড়নেওয়ালে ঘোড়ে’ গানটি ভাল লাগে প্রধানমন্ত্রীর।
১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘গাইড’। এই ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বলি অভিনেতা দেব আনন্দের ভাই বিজয় আনন্দ। এই ছবির চিত্রনাট্যও নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
তবে ভারতে মুক্তির প্রায় এক বছর আগে আমেরিকায় মুক্তি পায় ‘গাইড’। ইংরেজি ভাষায় ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছবিটি আমেরিকায় মুক্তি পেলেও তা সফল হয়নি।
হিন্দি ভাষায় যে ‘গাইড’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল তার মূল চিত্রনাট্য আরকে নারায়ণের লেখা উপন্যাস থেকেই নেওয়া। কিন্তু ইংরেজি ভাষার ছবিটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ইংরেজি ভাষায় মুক্তি পাওয়া ‘গাইড’ ছবিটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ট্যাড ড্যানিয়েলেয়স্কি। এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন নোবেলজয়ী পার্ল এস বাক। কিন্তু ছবিটির মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে আরকে নারায়ণের লেখা উপন্যাসের কোনও মিল ছিল না।
ইংরেজি ভাষায় ‘গাইড’ ছবিটি দেখার পর দর্শক হতাশ হয়। হিন্দি ভাষার ছবিটি নিয়ে বলিপাড়ার ছবিনির্মাতারা তাই বিশেষ আগ্রহ দেখাননি বলে কানাঘুষো শোনা যায়। কোনও প্রযোজকের সন্ধান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত দেব আনন্দ নিজেই খরচ করে ছবিটির প্রযোজনা করেন।
শুধু প্রযোজনাই নয়, হিন্দি ভাষার ‘গাইড’ ছবিতে অভিনয় করতেও দেখা যায় দেব আনন্দকে। বলিপাড়ার একাংশ মনে করেছিলেন যে, এই ছবিটি ইংরেজি ভাষার ছবিটিরই হিন্দি অনুকরণ। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সকলের ভুল ভেঙে যায়। ছবিটি দর্শকের মনে ধরে। এমনকি বক্স অফিসেও বিপুল ব্যবসা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় ছবি ‘গাইড’।