দেনার দায়ে কিছু দিন আগে পর্যন্তও গলা অবধি ডুবে ছিল পাকিস্তান। অর্থনৈতিক সঙ্কটে দেশটি দেউলিয়া হয়ে যেতে বসেছিল। কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
চিন এবং উপসাগরীয় মিত্র দেশগুলির কাছ থেকে অর্থসাহায্য পেয়েছে পাকিস্তান। কড়া শর্ত মেনে টাকা নিতে হয়েছে বিশ্ব অর্থভান্ডারের কাছ থেকেও। তবে পাকিস্তানের অর্থনীতি এখনও নড়বড়ে।
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। জ্বালানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পাকিস্তানে মধ্যবিত্তের পকেটে ছ্যাঁকা দিচ্ছে আনাজপাতিও। দেশের নানা প্রান্তে সরকারবিরোধী বিক্ষোভও মাথাচাড়া দিয়েছে।
অর্থনীতি সামাল দিতে যখন সরকার হিমশিম খাচ্ছে, তখনও কিন্তু সামরিক ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা থেমে নেই। বরং আরও বেশি করে পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার সুরক্ষিত করছে ইসলামাবাদ।
ভারতের অনেক পরে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু তার পর থেকে ক্রমাগত এই বিধ্বংসী অস্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে ইসলামাবাদ। তাদের কাছে সংরক্ষিত পরমাণু অস্ত্রের পরিমাণ ভারতের চেয়েও বেশি।
ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েনটিস্টসের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেই চলেছে। এই অস্ত্র নির্মাণ সংক্রান্ত শিল্পও পাকিস্তানে বিস্তার লাভ করেছে।
আমেরিকা কৃত্রিম উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছে, বেশ কয়েকটি নতুন লঞ্চার এবং অন্যান্য পরমাণু অস্ত্র পরিষেবা পাকিস্তানে চালু হয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, দেশটির হাতে এই মুহূর্তে শুধু পরমাণু অস্ত্রই রয়েছে অন্তত ১৭০টি।
আমেরিকার বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান আগামী দিনে প্রতি বছর ১৪ থেকে ২৭টি নতুন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট এই সামরিক তৎপরতায় প্রভাব ফেলে না।
পাকিস্তানে পরমাণু অস্ত্র বহনের জন্য মূলত দু’টি বিশেষ ধরনের বিমান ব্যবহার করা হয়। সেগুলির নাম মিরাজ ৩ এবং মিরাজ ৫ ফাইটার স্কোয়াড্রন।
পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর মিরাজ যুদ্ধবিমানগুলি দু’টি সেনাঘাঁটিতে রাখা হয়। আমেরিকার গোয়েন্দাদের অনুমান, সেখানেই লুকিয়ে আছে দেশের পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার।
করাচিতে পাক সেনার একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে। সেই মসরুর বিমানঘাঁটিতে রয়েছে তিনটি মিরাজ স্কোয়াড্রন— সপ্তম স্কোয়াড্রন ‘ব্যান্ডিটস’, অষ্টম স্কোয়াড্রন ‘হায়দারস্’ এবং ২২ তম স্কোয়াড্রন ‘গাজিজ়’।
মসরুর বিমানঘাঁটি থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পাক সেনার সম্ভাব্য একটি পরমাণু অস্ত্রভান্ডার রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এই অঞ্চলে পাক পরমাণু অস্ত্রের বড় অংশ গচ্ছিত রয়েছে।
পাকিস্তানের কাছে এই মুহূর্তে পরমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সেগুলির মধ্যে আবদালি (এইচএএফটি-২), গাজনবি (এইচএএফটি-৩), শাহিন-আই/এ (এইচএএফটি-৪), এনএএসআর (এইচএএফটি-৯) স্বল্প দূরত্বের। ঘৌরি (এইচএএফটি-৫) এবং শাহিন-২ (এইচএএফটি-৬) মধ্যম দূরত্বের।
এ ছাড়া আরও দু’টি পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে পাকিস্তান। সেগুলি শাহিন-৩ এবং এমআইআর বেদ আবদিল। দু’টিই মধ্যম দূরত্বের।
কৃত্রিম উপগ্রহের নজরদারির মাধ্যমে আমেরিকা পাকিস্তানের অন্তত পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্রঘাঁটির সন্ধান পেয়েছে। সেখানেও পরমাণু অস্ত্রের চালাচালি হতে পারে। এই পাঁচ ক্ষেপণাস্ত্রঘাঁটি রয়েছে আক্রো, গুজরানওয়ালা, খুজ়দার, পানো আকিল এবং সারগোধা শহরে।
পরমাণু শক্তি বাড়িয়েই চলেছে পাকিস্তান। কিন্তু সেই পরমাণু অস্ত্রভান্ডারের নিরাপত্তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ। সেই কারণেই ভারত-সহ সারা বিশ্বের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দেশ।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পাকিস্তানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভয়নাক দেশগুলির মধ্যে অন্যতম’ বলে উল্লেখ করেছেন। পরমাণু শক্তির নিরাপত্তার অভাবের কারণেই এমন মন্তব্য করেন তিনি।
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ লেগেই থাকে। বালুচিস্তান নিয়ে তাদের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ভবিষ্যতে কখনও পরমাণু অস্ত্রভান্ডারের ধারেকাছে কোনও হামলা হলে পাকিস্তান ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে। ক্ষতি হতে পারে পড়শি ভারতেরও।