বাড়িটার দেওয়াল পাথুরে। ঢালু ছাদ। চারপাশ বেয়ে সটান উঠেছে বেশ কয়েকখানা সূচাগ্র মিনার। প্যাঁচানো ঢেউ খেলানো এক ফালি সিঁড়িও রয়েছে তার গায়ে। আর রয়েছে ঝকঝকে কালো লম্বা লোহার দরজা। একনজর দেখলে ছোটখাট দুর্গই মনে হবে। এই ‘দুর্গের’ ভিতরেই আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সংসার।
প্রাচীন একটেরে এই দুর্গের বয়স নয় নয় করে ৯৬ হতে চলল। তবে এর বাইরের রূপ দেখে ভিতরের আন্দাজ করলে মুশকিল। তা হলে বোকা বনতে হবে। কারণ, পুরনো ‘দুর্গের’ ভিতরে রয়েছে এক ঝকঝকে অত্যাধুনিক প্রাসাদ।
কী নেই সেখানে! ১০টি শোওয়ার ঘর। আড্ডা দেওয়ার ঘর, অবসর কাটানোর ঘর, সিনেমা দেখার ঘর, খেলাধুলোর জায়গা, জিম করার ঘর, গ্রন্থাগার, মদ্যপানের ঘর, এমনকি বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকাদের জন্যও সুইট রয়েছে এই বাড়ির এক প্রান্তে।
১৯২৮ সালে তৈরি বাড়িটি ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৮২০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে। সঙ্গে রয়েছে বাড়িটির পিছন দিকে বড় বাগান। বাড়ির প্রবেশপথে রয়েছে লম্বা লন। গাড়ি রাখার দু’টি গ্যারেজ এবং আরও ১০টি গাড়ি পার্ক করার সংলগ্ন এলাকা।
এর আগে বাড়িটি ৫০ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪১ কোটি টাকা)-এ কিনেছিলেন আমেরিকার আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রেস সচিব জো লোখার্ট। তবে জো পরে বাড়িটি ভাড়া দেন। মাসে ২২ হাজার ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রতি মাসে ১৮ লক্ষ টাকা দরে বাড়িটি প্রথমে ভাড়াই নিয়েছিলেন ওবামা।
তবে আমেরিকার এক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সম্প্রতি এই বাড়িটি ৮০ লক্ষ ডলারে অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ৬৫ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছেন ওবামা।
বাড়িটি আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিরই একটি অভিজাত পাড়া কালোরামা ডিস্ট্রিক্টে।
এই পাড়ার বাসিন্দা আরও এক প্রাক্তন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। বিল এবং হিলারি ক্লিন্টনের একটি বাড়ি রয়েছে ওবামার এই বাড়ির খুব কাছেই। এ ছাড়াও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং অ্যামাজ়ন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও ওবামার প্রতিবেশী।
একদা শিকাগোর বাসিন্দা ওবামা তাঁর দু’বারের প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওয়াশিংটন ডিসিতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার পরে প্রায় শতবর্ষের দোরগোড়ায় থাকা এই বাড়িটি পছন্দ হয় তাঁর।
বাড়িটি এক রকম সাজানোই ছিল। তবে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বরাবরই খুঁতখুঁতে। বাড়িটি কেনার পর নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছেন তিনি।
মিশেলের স্নানঘরের ছবি দেখলে বোঝা যায় কতটা মন দিয়ে সব দিক নজরে রেখে সাজানো হয়েছে সব কিছু। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের স্নানঘরে কোনও বাড়তি বিশেষত্ব নেই। যেটুকু দরকার সেটুকু নিয়েই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খোলামেলা জায়গা নিয়ে তৈরি।
তবে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি আরও একটি বাড়ি কিনেছেন। প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় ৯৬ কোটি টাকার কিছু বেশি) কেনা সেই বাড়ি দেখলে গ্রিটিংস কার্ড থেকে উঠে আসা ছবি মনে হতে পারে।
একটি দ্বীপের মাঝ বরাবর প্রায় ৩০ একর জমি নিয়ে তৈরি সেই বাড়ি। সঙ্গে রয়েছে বিস্তৃত আঙুরের বাগিচা। মার্থা’জ আইল্যান্ডের এই বাড়িতে মাঝে মধ্যেই ছুটি কাটাতে আসেন ওবামা। তবে নেহাত ছুটি কাটানোর জন্য তৈরি এই বাড়ির সব কিছুই অন্য রকম।
মার্থা’জ আইল্যান্ড আমেরিকার তারকাদের ছুটি কাটানোর জায়গা হিসাবে বরাবরই জনপ্রিয়। ক্লিনটন, জন এফ কেনেডি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মাঝে মধ্যেই ছুটি কাটাতে হাজির হতেন মার্থা’জে। তবে এই প্রথম কোনও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এই দ্বীপে বাড়ি কিনলেন।
মার্থা’জ বরাবরই ছিল ওবামারও প্রিয় ছুটি কাটানোর ঠিকানা। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তো বটেই, ওবামা যখন ইলিনয়ের সেনেটর ছিলেন তখনও বছরের ছুটির সময়টুকু মার্থা’জেই চলে আসতেন তিনি।
তবে যে বাড়িটি সম্প্রতি ওবামা পরিবার কিনেছে, সেটি সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ মনোরঞ্জনের কথা মাথায় রেখে। অর্থাৎ এখানে ছুটি কাটাতে এলে এক মুহূর্তের জন্যও ‘বোর’ হওয়ার সুযোগ নেই।
সবুজ কার্পেটের মতো ঘাসের জমি পেরিয়েই সমুদ্র। খাবার ঘর আর তার লাগোয়া রান্নাঘরের সমস্ত জানলা থেকেই দেখা যায় সমুদ্র।
হলঘরে রয়েছে পুল খেলার টেবিল। রয়েছে ঘরে বসে খেলার আরও অনেক বিকল্প।
২০০১ সালে তৈরি এই বাড়িটি ২০১৫ সাল থেকে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে এই বাড়ির দর ২ কোটি ২৫ লক্ষ ডলার হলেও পরে দু’বার দাম কমে গত গ্রীষ্মে এসে ঠেকে ১ কোটি ৪৮ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারে। ওবামা বাড়িটি কিনে নেন ১ কোটি ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারে।
এই বাড়িতেও রয়েছে ৯টি শোওয়ার ঘর, ৮টি শৌচাগার। তবে এই বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাটি হল এর ছাদ। ঝকঝকে রোদ্দুর ধোয়া ওই ছাদ থেকে আঙুর বাগিচার সবুজ পেরিয়ে দেখা যায় নীল সমুদ্র।
ওবামার এই অবকাশ বাংলোয় রয়েছে বাড়ির আঙুরক্ষেত লাগোয়া দীর্ঘ সৈকত এমনকি শান্ত সমুদ্রের জলে নৌকা ভাসানোর ব্যবস্থা সম্পন্ন নৌকাবাড়িও।
আর আছে সুইমিং পুল। সব সময়ে সমুদ্রের জলে পা ডোবাতে ভাল না লাগলে আঙুরক্ষেতের সবুজে চোখ রেখে নীল আকাশের নীচে গা ডোবানোর ব্যবস্থা রয়েছে বাড়ির পিছন দিকের সাজানো বাগানে।