২৮ মে, রবিবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন। প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমে এই নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করেছেন যা বর্তমানে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তার আগেই সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিতর্ক জন্ম নিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছে ১৯টি বিরোধী দল। তার মধ্যেই দেশবাসীর মনে উঠে আসছে নতুন আর একটি প্রশ্ন।
প্রশ্ন উঠছে, কী লেখা রয়েছে বর্তমান সংসদ ভবনের ভাগ্যে? কী হতে চলেছে এই ঐতিহাসিক ইমারতের ভবিষ্যৎ?
শাসক-বিরোধী সাংসদদের তরজা, আইন পাশ, প্রতিবাদ, অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী বর্তমান সংসদ ভবন। সেই ইমারত যে ভেঙে ফেলা হবে না, তা বলাই বাহুল্য। সরকারের তরফেও এমনটাই জানানো হয়েছে।
সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমান সংসদ ভবন অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে জীর্ণ এবং সুযোগ-সুবিধা আর প্রযুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম নয়। আর সেই কারণেই নতুন ভবনের প্রয়োজন ছিল বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।
তবে নতুন সংসদ ভবন তৈরি হলেও সগৌরবে এবং স্বমহিমাতেই দাঁড়িয়ে থাকবে বর্তমান সংসদ ভবনটি। বহন করবে ভারতীয় ইতিহাসের সাক্ষী।
বর্তমান সংসদ ভবন, স্বাধীন ভারতের প্রথম সংসদ। যা ভারতের সংবিধান গ্রহণের সাক্ষীও ছিল। সরকারের মতে, নতুন ভবন তৈরি হলেও বর্তমান ভবনের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা জাতীয় গুরুত্বের বিষয়।
অতীতে ‘কাউন্সিল হাউস’ নামে পরিচিত বর্তমান সংসদ ভবনটি ব্রিটিশ আমলে ‘ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল’ ছিল।
ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স এবং হার্বার্ট বেকার বর্তমান সংসদ ভবনের নকশা তৈরি করেছিলেন। ভবনটি নির্মাণে সময় লেগেছিল ছ’বছর। ১৯২৭ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।
প্রাথমিক ভাবে ভবনটি একতলা ছিল। ১৯৫৬ সালে সংসদ ভবনটিতে আরও দু’তলা বাড়ানো হয়।
২০০৬ সালে, ভারতের আড়াই হাজার বছরের পুরনো গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংসদে একটি জাদুঘরের উদ্বোধনও করা হয়।
সরকার জানিয়েছে, নতুন ভবন ব্যবহার শুরু হলে বর্তমান সংসদ ভবন সংরক্ষণ করা হবে, কারণ এটি দেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ।
সরকার জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সরকারের তরফে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে নতুন ভবনের পাশাপাশি বর্তমান ভবনেও তা অনুষ্ঠিত হবে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে, কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী রাজ্যসভায় জানিয়েছিলেন, নতুন সংসদ ভবন তৈরি হয়ে গেলে, বর্তমান সংসদ ভবনের মেরামত শুরু হবে।
জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসাবে যাতে আবার এই ভবন ব্যবহার করা যায়, সে দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে। তবে এখনও তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে চিন্তাভাবনা হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ভারতের অনেক চিত্রকলা, ভাস্কর্য, পাণ্ডুলিপি, সংগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন জাতীয় জাদুঘর, ন্যাশনাল আর্কাইভস অফ ইন্ডিয়া এবং ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য আর্টস-এ রাখা আছে। বর্তমান সংসদ ভবন মেরামতের পরে সেগুলি ওই ভবনে জায়গা পেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
২০২২ সালের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান সংসদ ভবনের একটি অংশকে জাদুঘরেও রূপান্তরিত করা হতে পারে।
যদি এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ বর্তমান লোকসভা কক্ষে বসতে পারবেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।