ভারতে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। পরিসংখ্যানগত তথ্য দেখলে মনে হতে পারে আয় বাড়ছে ভারতীয়দের। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এক কোটি টাকার জমা সম্পদ নিয়ে অবসর নেওয়াকে যথেষ্ট মনে হতে পারে। কিন্তু ১০ বা ২০ বছর পর এই জমা পুঁজি যথেষ্ট না-ও মনে হতে পারে।
কারণ, বাস্তব ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকার মূল্যকে হ্রাস করে। আজকে যদি কোটি টাকা মোটা অঙ্ক বলে মনে হয়, ভবিষ্যতে সেই টাকা অবসর-পরবর্তী প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট না-ও হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি গাড়ির দাম বর্তমানে ১০ লক্ষ টাকা হয়, তা হলে ১৫ বছর পরে এর দাম অনেক বেশি হবে। আরও ভাল ভাবে বুঝতে গেলে, আগে যে টাকায় একটি পরিবারের সারা মাসের খরচ চলত তা এখন কয়েক দিনের বাজার খরচের সমান।
মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে সঞ্চয়ের ক্রয়ক্ষমতাকে হ্রাস করে। সহজ ভাবে বলতে গেলে মুদ্রাস্ফীতি বিনিয়োগ বা সঞ্চয়কে গ্রাস করে ফেলে।
মুদ্রাস্ফীতির ফাঁস থেকে বাঁচতে তাই দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
অনেকেই সারা জীবন ধরে অর্থ উপার্জন করেও সামান্য কিছু টাকা জমাতে পারেন। সঠিক ভাবে টাকা উপার্জন করার পাশাপাশি টাকা সঞ্চয় করাও জরুরি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা বলেন, আজকের দিনে উপার্জিত অর্থ সঠিক ভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে কোটি টাকার মালিক হওয়া সম্ভব।
এই মুদ্রাস্ফীতির বাজারে ১০, ২০ বা ৩০ বছর পর এক কোটি টাকার মূল্য কত হতে পারে? আজ যে কোটি টাকা নিরাপদ মনে হচ্ছে তার ভবিষ্যৎ বাজারদর কত হতে পারে?
মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ ধরে চললেও, ১০ বছর পরে এক কোটি টাকার মূল্য কমে ৫৫.৮৪ লক্ষ টাকা হবে। ২০ বছর পরে এক কোটি টাকার মূল্য ৩১.১৮ লক্ষ টাকায় নেমে আসবে। ৩০ বছর পর তা ১৭.১৪ লক্ষ টাকার সমান হবে।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কেউ যদি ৬ শতাংশ হারে ফেরত পাওয়ার আশায় বিনিয়োগ করেন, তা হলে বাস্তবে তিনি কোনও লাভই করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি সেই লাভের আশায় জল ঢেলে দেবে।
এক কোটি জমাতে কত টাকা প্রতি মাসে বিনিয়োগ করতে হবে?
কেউ যদি জাতীয় পেনশন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬০ বছরে কোটি টাকা পেতে চান, প্রতি মাসে বিনিয়োগ করতে হবে ৩ হাজার টাকা। অবসরের পর এই পরিমাণ টাকা পেতে ২৫ বছর বয়স থেকেই বিনিয়োগ করা জরুরি।
মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপিতে যদি সঠিক ভাবে বিনিয়োগ করা যায় তবে ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই কোটি টাকার মালিক হওয়া সম্ভব।
আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মাসে লাখ টাকা উপার্জন করেন এমন এক জন ব্যক্তি তাঁর মাসিক আয়ের ১৫ -২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন।
শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ ২০ বছর যদি মাসে ১৫ হাজার করে বিনিয়োগ করতে পারেন তবে সেই বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৬ লক্ষ টাকা। এর পর সুদসমেত ফেরত আসতে পারে ১ কোটির বেশি অর্থরাশি।
৩০ বছর বয়সে বিনিয়োগ শুরু করলে মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা জমানোই যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে আগামী ৩০ বছরে সঞ্চয় হবে ১৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি।
সুদ মিলিয়ে হাতে আসতে পারে ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬১২ টাকা। এমনটাই জানিয়েছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বেশি লাভজনক।