পাখির চোখে তাকালে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে সাদাকালো দাগ কাটা। কোথাও দুই রঙের মধ্যে ব্যবধান ছোট, কোথাও আবার ব্যবধান বড়। কোনও জিনিস কেনার সময় যেমন বারকোড স্ক্যান করে তার যাবতীয় তথ্য জানা যায়, মাঠ জুড়ে সাদাকালো দাগগুলি দেখলেও এক নজরে বারকোডের মতোই লাগে।
আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার মোজাভে মরুভূমির কাছে রয়েছে এই ‘বারকোড’গুলি। অ্যাসফল্টের উপর সাদা এবং কালো রং ব্যবহার করে এগুলি আঁকা হয়েছে।
মোজাভে মরুভূমির কাছে রয়েছে বায়ুসেনার ঘাঁটিও। কিন্তু বায়ুসেনার কোনও কাজেই সেই বিশালাকৃতি ‘বারকোড’ ব্যবহার করা হয় না।
অনেকের অনুমান, ভিন্গ্রহীদের তথ্য পাঠাতেই নাকি ধু ধু মরুভূমির মাঝে বারকোড তৈরি করেছিল আমেরিকা। একাংশের দাবি এই দাগগুলির নেপথ্যে রয়েছে অন্য রহস্য।
সেন্টার ফর ল্যান্ড ইউজ় ইন্টারপ্রিটেশন (সিএলইউআই)-এর তরফে জানানো হয়েছে, ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে এই ‘দৈত্যাকার বারকোড’গুলি তৈরি করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা এবং তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে যে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল, সে সময়েই তৈরি করা হয়েছিল এই সব ‘বারকোড’।
আমেরিকার বায়ুসেনা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নানা ধরনের ক্যামেরা তৈরি করছিল যার মাধ্যমে অনেক দূর থেকে নিখুঁত ছবি তোলা যায়।
সরকার থেকে জানানো হয়, বিশেষ ধরনের ‘এরিয়্যাল’ ক্যামেরা থেকে শুরু করে মাইক্রোস্কোপ, টেলিস্কোপ, স্যাটেলাইট ক্যামেরার লেন্সের কার্যক্ষমতা নির্ণয় করার জন্যই এই বারকোডগুলি তৈরি করা হয়েছে। সিএলইউআই-এর মতে, ‘আই চার্ট’ হিসাবে ব্যবহৃত হত ‘বারকোড’গুলি।
উচ্চতা এবং গতিবেগের নানা রকম পরিবর্তনের মাঝেও ক্যামেরা থেকে কত স্পষ্ট ‘এরিয়্যাল শট’ আসতে পারে তা পরীক্ষা করার জন্যই ব্যবহার করা হত ‘বারকোড’গুলি।
‘বারকোডের’ ছোট ব্যবধানগুলি যে ক্যামেরার লেন্সে যত পরিষ্কার ভাবে ধরা পড়বে সেই ক্যামেরার ক্ষমতা তত বেশি বলে মেনে নেওয়া হত।
মরুভূমির মধ্যে ‘বারকোড’গুলি যে এলাকা জুড়ে আঁকা হয় তার আয়তন একটি বাস্কেটবল খেলার মাঠের সমান।
এসআর-৭১ ব্ল্যাকবার্ড এবং ইউ-২-এর মতো বিমানের শক্তির পরিমাপও নির্ণয় করা হয়েছিল বারকোডের মাধ্যমে। ক্যালিফর্নিয়ার পাশাপাশি ওহায়ো, ফ্লোরিডা এবং দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঞ্চলে বারকোডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
২০১১ সালে ‘গুগল ম্যাপস’-এর মাধ্যমে চিনের মধ্যভাগে মরুভূমির মাঝেও বর্গাকৃতি অথবা এবড়োখেবড়ো ধরনের বারকোড নজরে পড়েছিল নেট ব্যবহারকারীদের।
তবে বর্তমানে বারকোডের মাধ্যমে ক্যামেরার ক্ষমতা নির্ধারণ প্রক্রিয়া অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। গণনার ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ায় বর্তমানে আরও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএলইউআই।