চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জনগণের উপর ‘বৃষ্টি কর’ চালু করার কথা ভাবছে কানাডার টরন্টো শহরের প্রশাসন। প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই সেই কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তা নিয়ে জনরোষও তৈরি হয়েছে।
টরন্টোর পুর প্রশাসন ‘বৃষ্টি কর’ নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে লাগাতার আলোচনা করে চলেছে।
কর্তৃপক্ষ জনগণকে ‘স্টর্মওয়াটার চার্জ অ্যান্ড ওয়াটার সার্ভিস চার্জ কনসাল্টেশন’ নামক পরামর্শ বৈঠকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু এই ‘বৃষ্টি কর’ কী? প্রস্তাবিত এই কর অনুযায়ী, বৃষ্টির জলের প্রবাহ যে বাড়ি বা কাঠামোয় ব্যাঘাত ঘটাবে বা প্রভাব ফেলবে, তাদের মালিকদের উপর এই কর চাপানো হবে।
ওই বাড়ি বা কাঠামোর কতটা অংশ বৃষ্টির জলের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে, তার উপর নির্ভর করছে মালিকের উপর কতটা কর চাপানো হবে।
টরন্টো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছাদ, গাড়ি বেরোনোর রাস্তা, পার্কিংয়ের জায়গা এবং বাগানে কংক্রিটের রাস্তা-সহ বাড়ি লাগোয়া এলাকার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে কর নির্ধারণ করা হবে।
প্রশাসনের দাবি, সাধারণ মানুষকে তাঁদের সম্পত্তি লাগোয়া জমি ইট-সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানোর পরিবর্তে গাছপালা লাগাতে উৎসাহিত করার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
টরন্টো শহরের সরকারি ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘স্টর্মওয়াটার হল বৃষ্টি এবং তুষারগলা জল। সেই জল মাটি না শুষে নিলে, তা শক্ত পৃষ্ঠের উপর দিয়ে, রাস্তায়, নর্দমায় এবং স্থানীয় জলাশয়ে গিয়ে পড়ে।’’
সেখানে আরও লেখা রয়েছে, ‘‘টরন্টোর মতো শহরের প্রতিটি বাড়িতে কংক্রিটের অপ্রয়োজনীয় কাঠামো রয়েছে। অত্যধিক বৃষ্টি এবং তুষারগলা জল মাটিতে না গেলে শহরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যার ফলে বন্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি তা টরন্টোর নদী, জলাশয় এবং অন্টারিও হ্রদের উপরিভাগের জলের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে।’’
উল্লেখ্য যে, টরন্টোর বাড়ির মালিকেরা বর্তমানে জলের জন্য যে কর সরকারকে দেন, তার মধ্যেই বৃষ্টির জল ব্যবস্থাপনার খরচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে নতুন ‘বৃষ্টি কর’ চালু হলে বর্তমান জলের কর থেকে বৃষ্টির জল ব্যবস্থাপনার খরচ সরিয়ে দেবে সরকার। পরিবর্তে বৃষ্টিপাতের সময় শহরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থায় সম্পত্তির প্রভাবের উল্লেখ করে একটি পৃথক কর তৈরি করা হবে।
টরন্টোর প্রশাসন বর্তমানে ‘বৃষ্টি কর’ নিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছে এবং ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জনগণকে তাদের মতামত জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। পরামর্শের ফলাফল কী হল, তা-ও মে-জুনের মধ্যেই জানানো হবে।
কয়েক বছর আগে আমেরিকার মেরিল্যান্ডের বাসিন্দাদের জন্যও বৃষ্টির জল নিয়ে একই রকম ভাবে টাকা ধার্য করা চালু হয়। তবে তা কোনও ভাবেই কর ছিল না। বৃষ্টি হলে কারও সম্পত্তি থেকে আসা দূষিত জলের ব্যবস্থাপনার জন্য সেই টাকা নিতে শুরু করে প্রশাসন।
ওয়াশিংটন-সহ আমেরিকার বহু শহরে অনুরূপ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তাকে কোনও ভাবেই কর বলা যায় না।
টরন্টো প্রশাসনের সেই প্রস্তাবিত করের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কানাডা এবং আমেরিকার বহু মানুষ। শুরু হয়েছে সমালোচনাও। ভোটকৌশলী সংস্থা ‘ডেইজ়ি কনসাল্টিং গ্রুপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ওয়ারেন কিনসেলা টরন্টো প্রশাসনের বৃষ্টির উপর কর চাপাতে চাওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘পাগলামি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
টরন্টো সরকারের সেই নতুন করের সমালোচনা করেছেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুত্র-সহ আরও অনেকে। তিনি ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে, এরা মানুষের উপর শুধুমাত্র ‘বৃষ্টি কর’ চাপিয়েই থামবে না। অদূর ভবিষ্যতে তারা যা চায়, তা-ই বাজেয়াপ্ত করে নেবে।’’
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ছিদ্রহীন কংক্রিটের কারণে শহরে বন্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কংক্রিটের কারণে বৃষ্টির জল মাটির নীচে পৌঁছতে পারছে না। ফলে বন্যা যেমন হচ্ছে, তেমনই ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণও কমছে। আর সেই কারণেই টরন্টো প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।