দেশকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তবে প্রবল জনবিক্ষোভ ও চাপের মুখে পড়ে সেই আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয় সরকার।
গত মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার মদতপুষ্ট বিরোধীদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে সারা দেশে সামরিক আইন বা জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নেন ইউন।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় এক ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। সামরিক আইন জারি করার কারণ হিসাবে তিনি দাবি করেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিরোধীরা।
এই বিদ্রোহ আটকাতেই সামরিক আইন জারির মধ্যে দিয়ে দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ইওল। প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পর দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে এর প্রতিবাদ শুরু হয়। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে অশান্ত হয়ে ওঠে অ্যাসেম্বলি ভবন চত্বর। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে নামানো হয় সেনা।
সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানকার পার্লামেন্ট এর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় সামরিক আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। ৩০০ সদস্যের মধ্যে সামরিক আইন প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেন ১৯০ জন।
দেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলেই রাষ্ট্রনায়কেরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বার বার সামরিক আইন প্রয়োগ করে থাকেন। এই সামরিক আইন বা ‘মার্শাল ল’ কী?
দেশের নিরাপত্তা সঙ্কটের মুখে পড়লে সামরিক আইন দেশের নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি অন্যতম অস্ত্র বলে মনে করা হয়। যে দেশে সামরিক আইন ঘোষণা করা হয়, সেখানে সামরিক বাহিনী সরকারের বকলমে সমস্ত দায়িত্বভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়।
সামরিক আইন জারি করা হলে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। অসামরিক প্রশাসন কাজ করতে না পারলে জরুরি অবস্থার সময় ‘মার্শাল ল’ জারি করা হয়। এই অবস্থাকে সামরিক কর্তৃপক্ষের অস্থায়ী শাসন বলা হয়।
সামরিক বাহিনীর অধিকারে শাসনভার তুলে দেওয়া হলে মিটিং-মিছিলের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সমাজমাধ্যম, ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণও চলে যায় সরকারের হাতে।
কোনও পরোয়ানা ছাড়াই ইচ্ছামতো নাগরিকদের বাড়ির তল্লাশি নেওয়া যায়। সরকারের বিরোধিতা করলে আটক, গ্রেফতারও করা যায় সাধারণ মানুষকে। এক কথায় নাগরিক অধিকার খর্ব হয়ে যায় সামরিক শাসন জারি হলে।
আইনটিকে প্রায় সব দেশেই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও অসাংবিধানিক বলে ধরা হয়। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিরোধিতার কণ্ঠরোধ করতেই এই আইন জারি করা হয়। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অবক্ষয় ঘটিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী শক্তির উত্থানকে দমন করতেই সাধারণত এই আইন জারি করে শাসক।
জননিরাপত্তা এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা এই শাসনের মূল দায়িত্ব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা দমনপীড়ন ও নাগরিকদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করা হয়ে থাকে বলে বিরোধীদের মত।
‘মার্শাল ল’র অধীনে সামরিক বাহিনীর হাতে চলে যায় অতিরিক্ত ক্ষমতা। সেখানে প্রায়শই মৌলিক অধিকার, নাগরিক সুরক্ষা এবং আইনের শাসনের অবক্ষয় ঘটে।
রাষ্ট্রের সংবিধান স্থগিত করে সামরিক আইন বলবৎ হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘতম সামরিক শাসনের অধীনে যে দেশটি ছিল সেটি হল সিরিয়া। ১৯৬৩ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত এই দেশটিতে সামরিক আইন বলবৎ ছিল।