Hawala

Hawala: ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার টাকার পাহাড়ে হাওয়ালার ছায়া! কী ভাবে চলে হাওয়ালায় লেনদেন?

হাওয়ালার মাধ্যমে অর্থ পাচারে মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে লেনদেন হওয়ায় ব্যাঙ্ক বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে এর প্রমাণ থাকে না।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২২ ১৫:১২
Share:
০১ ১৭

মোটা কাগজে মোড়া হাজারো প্যাকেটের মুখে সেলোটেপ আঁটা। তাতে থরে থরে সাজানো ৫০০ ও ২,০০০ টাকার বান্ডিল। ইডি জানিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে। সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, সোনাদানা তো রয়েইছে।

০২ ১৭

কোথা থেকে এল এই টাকার পাহাড়? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এর পিছনে হাওয়ালার কালো ছায়া দেখতে পাচ্ছেন ইডি আধিকারিকেরা।

Advertisement
০৩ ১৭

বিশেষ পদ্ধতিতে রাখা এই বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস কী? ওই টাকা কি হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছিল? শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমে গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ এবং অর্পিতা। তার পরই এ ধরনের অসংখ্য প্রশ্ন উঠে আসছে।

০৪ ১৭

পার্থ এবং অর্পিতার গ্রেফতারির আগেও এ দেশে বার বারই নানা দুর্নীতিতে হাওয়ালার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। কখনও জৈন ডায়েরি মামলা, কখনও বা লালুপ্রসাদ যাদবের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি অথবা সুরতে ১০ হাজার কোটির হাওয়ালা চক্র— একের পর এক বড়সড় দুর্নীতিতে আমজনতার কানে বেজেছে প্রায় দুর্বোধ্য ‘হাওয়ালা’ শব্দটি। এমনকি, গত পুরভোটের আগে খাস কলকাতায় উদ্ধার হওয়া এক কোটি টাকাতেও ছিল সেই গন্ধ। কী ভাবে চলে হাওয়ালায় লেনদেন?

০৫ ১৭

ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে বিশ্বস্ত লোক মারফত অর্থ পাচার, লেনদেনের সহজ পথই হল হাওয়ালা। তবে এই পদ্ধতিতে এক হাত থেকে অন্য হাতে অর্থ বিনিময়ে থাকে না কোনও সরকারি নথির ফাঁস। ফলে সহজেই বিপুল পথে অর্থ হাতবদল হলেও তাতে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়। কোষাগারে সে রাজস্ব না ঢোকায় লোকসান হয় সরকারের।

০৬ ১৭

কাগুজে লেখাপড়া ছাড়া পুরোপুরি বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে চলে হাওয়ালার গোটা প্রক্রিয়াটি। এমনটাই মত অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। মোদ্দা কথায়, বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য দালাল বা হাওয়ালাদারের হাত ধরে বিদেশে বসে থাকা এজেন্টদের হাতে চলে যায় বিপুল কালো টাকা।

০৭ ১৭

হাওয়ালার ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছে এমন কয়েকটি ওয়েবসাইটের দাবি, এ দেশে হাওয়ালার সূত্রপাত অষ্টম শতকে। সে সময় বিশেষত ইসলামিক দেশগুলিতে এই পদ্ধতিতে অর্থের লেনদেন বিকল্প পথ হয়ে ওঠে।

০৮ ১৭

খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত ‘সিল্ক রুট’ ধরে ভারত, চিন, পারস্য, গ্রিস, ইটালি-সহ বিভিন্ন আরব দেশে অর্থ লেনদেনেও নাকি হাওয়ালার ছায়া পাওয়া যায়। গত শতকে এই পদ্ধতিটি অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে বলেও দাবি। বিংশ শতকে পশ্চিমী দেশগুলিতে এই পদ্ধতিতে অর্থ পাচারের চলনও বেড়েছে বলে দাবি নানা বিশেষজ্ঞদের।

০৯ ১৭

হাওয়ালা শব্দটি আদতে আরবি। আক্ষরিক অর্থে লেনদেন বোঝালেও এটি বিশ্বাসেরও অপর নাম। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই কোটি কোটি টাকা পাচার হয়।

১০ ১৭

বেআইনি ভাবে বিদেশে কী ভাবে পাচার হয় অর্থ? অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দাবি, কালো টাকা বিদেশে সরানোর প্রয়োজন হলে প্রথমে হাওয়ালাদারের কাছে সে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। সঙ্গে জানানো হয় একটি পাসওয়ার্ড বা সাঙ্কেতিক শব্দ এবং যার কাছে ওই টাকা পৌঁছনোর প্রয়োজন তার নামধাম।

১১ ১৭

কালো টাকার মালিক যে দেশে সেই টাকা পাঠাতে বলে, সেই দেশের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাওয়ালাদার। তার বার্তা পাওয়ার পরে ভিন্ দেশে থাকা এজেন্ট ওই আর্থিক মূল্যের টাকা পৌঁছে দেয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে। সবটাই প্রথমে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে করে এজেন্ট। পরে তার অ্যাকাউন্টে সে টাকা ঢুকে যায়।

১২ ১৭

ভিন্‌ দেশে কালো টাকা হাতবদলের সময় ওই পাসওয়ার্ড বা সাঙ্কেতিক শব্দ যাচাই করে নেওয়া হয়। এর পরিবর্তে গোটা লেনদেনের অংশীদার মোটা ‘কমিশন’ রোজগার করে।

১৩ ১৭

এ বিষয়টি আরও সরল ভাবে বলা যেতে পারে। ধরা যাক, আনন্দ নামে নিউ ইয়র্কবাসী এক ব্যক্তি ভারতে তাঁর তুতো ভাই অমিতকে এক কোটি কালো টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে পাঠাতে চান।

১৪ ১৭

কালো টাকা পাচারে আনন্দ যোগাযোগ করেন অনন্ত নামে নিজের শহরের এক হাওলাদারের সঙ্গে। সে সময় অমিতের নামধাম, ওই এক কোটি টাকা এবং একটি ‘পাসওয়ার্ড’ দেয় অনন্তকে। এরই মধ্যে আনন্দ তাঁর ভাইকেও গোটা বিষয়-সহ ওই ‘পাসওয়ার্ড’টি জানিয়ে দেয়।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

১৫ ১৭

এ বার আনন্দের নির্দেশ পেয়ে অনন্তের শহরে সিরিন নামে এক এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অনন্ত। তিনি ওই টাকা নিয়ে পৌঁছন অমিতের কাছে। নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি টাকা দিয়ে দেন তিনি। পরে নিজের অ্যাকাউন্টে কমিশন পেয়ে যান সিরিন। তবে অর্থ হাতবদলের সময় ওই ‘পাসওয়ার্ড’ না জানালে এই লেনদেন হবে না।

১৬ ১৭

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই আধিকারিকেরা বহু দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে হাওয়ালা যোগ পেয়েছেন। তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে, ‘স্টার’, ‘পান খায়া’ ইত্যাদি শব্দ ‘পাসওয়ার্ড’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

১৭ ১৭

গোটা পদ্ধতিতে মুখের কথাই বড় ভরসা। মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে লেনদেন হওয়ায় ব্যাঙ্ক বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে এর প্রমাণ থাকে না। ফলে সরকারের যেমন বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হয়, তেমনই বেআইনি আয়ের তথ্যও এ ভাবে মুছে ফেলা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement