Cloud Seeding

বৃষ্টি কমাতে মেঘের বীজ বপন করছে ইন্দোনেশিয়া! কেন ‘ক্লাউড সিডিং’ নিয়ে উল্টো পথে হাঁটছে সেই দেশ?

মেঘের বীজ বপনের বিষয়টি আসলে কী? চাষবাসের জন্য ক্ষেতে যেমন ফসলের বীজ ছড়িয়ে অথবা পুঁতে দেওয়া হয়, বৃষ্টি নামানোর জন্য খানিকটা সে ভাবেই মেঘের উপর কৃত্রিম মেঘ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ ১২:৪৫
Share:
০১ ২২

খরা অধ্যুষিত অঞ্চলে কিংবা কোনও জায়গায় জল সরবরাহ বাড়াতে আশ্রয় নেওয়া হয় কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের। যা করা হয় ‘ক্লাউড সিডিং’ বা মেঘের বীজ বপন করে।

০২ ২২

তবে এ বার নুসেনতারা শহরে অতিবৃষ্টি কমাতেও ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রযুক্তির আশ্রয় নিল ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন।

Advertisement
০৩ ২২

মেঘে বীজ বপনের বিষয়টি আসলে কী? চাষবাসের জন্য ক্ষেতে যেমন ফসলের বীজ ছড়িয়ে অথবা পুঁতে দেওয়া হয়, বৃষ্টি নামানোর জন্য খানিকটা সে ভাবেই মেঘের উপর কৃত্রিম মেঘ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়।

০৪ ২২

কৃত্রিম বৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে আবহাওয়ায় খানিকটা রদলবদল করা হয়। সে জন্য ড্রোনের মাধ্যমে মেঘের উপর সিলভার আইয়োডাইডের মতো রাসায়নিক অথবা ড্রাই আইস কিংবা খাওয়ার নুন ছড়িয়ে দেন গবেষকেরা।

০৫ ২২

মেঘের উপর রাসায়নিক ছড়ানোর জন্য ড্রোন ছাড়াও বিমান অথবা রকেট ব্যবহার করেন গবেষকেরা।

০৬ ২২

বিমানগুলি মেঘের উপর সোডিয়াম ক্লোরাইড অর্থাৎ নুনের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেয়। এর পর ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড এবং ক্যালসিয়াম অক্সাইডের মিশ্রণের প্রলেপ দেওয়া হয় মেঘের গায়ে।

০৭ ২২

এতে শুকনো মেঘের আর্দ্রতা বাড়বে, আয়তনে এবং ওজনেও ভারী হবে। সব শেষে কিছু বরফও রাখা হবে সেই মেঘে। তাতেই শুকনো মেঘগুলি পরিণত হবে জলভরা মেঘে। নামবে বৃষ্টি।

০৮ ২২

পাশাপাশি, বায়ুতে যে যৎসামান্য জল জলীয় বাষ্পের আকারে থাকে তা মেঘে ছড়ানো রাসায়নিকের কণার আশপাশে ঘনীভূত হয়ে স্ফটিকের মতো বরফের দানার আকার নেয়। এর থেকে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই পদ্ধতিকে ‘নিউক্লিয়েশন’ বলা হয়।

০৯ ২২

সাধারণত কৃত্রিম মেঘ তৈরি করতে মেঘের প্রয়োজন হয়। তবে যে মেঘগুলি উল্লম্ব আকৃতির হয়, তার উপরেই মেঘের বীজ বোনা যায়।

১০ ২২

কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টির জন্য যে ধরনের মেঘের সাহায্য নেওয়া হয়, সেগুলিকে পরিবাহী মেঘ বলা হয়। তবে বৃষ্টি নামাতে দিগন্তবিস্তৃত স্তরীভূত মেঘের উপর এই বীজ বোনা হয় না। উল্লেখ্য, ক্লাউড সিডিংয়ে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত তৈরি করা গেলেও তা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়।

১১ ২২

মেঘের বীজ বোনার পদ্ধতি অবশ্য নতুন নয়। ১৯৪৬ সালে প্রথম বার এই পদ্ধতিতে বীজ বুনেছিল আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিক।

১২ ২২

সংস্থার তরফে সে উদ্ভাবন করেছিলেন সে দেশের রসায়নবিদ তথা আবহবিজ্ঞানী ভিনসেন্ট স্যাফার। ভারতেও এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে।

১৩ ২২

ইজ়রায়েল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আমেরিকায় মেঘের বীজ থেকে বৃষ্টির ফসল পেয়েছেন গবেষকেরা। কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশে এবং মহারাষ্ট্রে মূলত খরা রুখতে অথবা বাঁধের জলস্তর বৃদ্ধি করতে এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম মেঘ সঞ্চার করা হয়েছিল।

১৪ ২২

মেঘের গায়ে বৃষ্টি বোনার এই পদ্ধতি ২০১১ সালেই শুরু করেছে চিন। এর পিছনে দেড় হাজার লক্ষ ডলার খরচও করেছে তারা। শুধু খরা পরিস্থিতি মোকাবিলাই নয়, দূষণ রুখতেও এই পদ্ধতি কার্যকরী বলে জানা গিয়েছে চিনের আবহাওয়া দফতরের তরফে।

১৫ ২২

যদি জলাভাব দূর করতেই ক্লাউড সিডিং করা হয়, তা হলে কী ভাবে অতিবৃষ্টি রুখতেও একই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ইন্দোনেশিয়া?

১৬ ২২

জলবায়ু পরিবর্তন এবং উষ্ণায়নের জেরে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে যে সব উপকূলবর্তী এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মধ্যেই অন্যতম ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান রাজধানী জাকার্তা।

১৭ ২২

পাশাপাশি যানবাহনের ভিড়েও জেরবার জাকার্তাবাসী। এই পরিস্থিতিতে নুসেনতারা শহরকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী সে দেশের প্রশাসন।

১৮ ২২

আগামী ১৭ অগস্ট, অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা দিবসে নতুন রাজধানী হিসেবে কাজ শুরু হতে চলেছে নুসেনতারায়। নুসেনতারা শহরকে ইতিমধ্যেই ঢেলে সাজানোর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্মাণকাজে বাধা অতিবৃষ্টি। অগত্যা ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রযুক্তি অবলম্বন।

১৯ ২২

ইন্দোনেশিয়া সরকারের লক্ষ্য, নুসেনতারার আশপাশের অঞ্চলে মেঘে বৃষ্টির বীজ বপন করা। যাতে ভবিষ্যতের রাজধানী থেকে বৃষ্টি সরিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে স্থানান্তর করা যায়। এই অভিনব পরিকল্পনার বাস্তবায়িত করতেই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে ক্লাউড সিডিং করা হচ্ছে। যা এর আগে কখনও হয়নি।

২০ ২২

ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া এবং জলবায়ুগত সংস্থা বিএমকেজি-র পূর্বাভাস, স্বাভাবিক হিসেবে নুসেনতারায় অগস্টের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার কথা। তাই তার আগেই ক্লাউড সিডিং করে বৃষ্টি স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় গত সপ্তাহে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হচ্ছে রবিবার। এর পরেই বোঝা যাবে ফলাফল।

২১ ২২

প্রসঙ্গত, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একাংশ ‘ক্লাউড সিডিং’ করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর পক্ষপাতী নন। এ বছরই অতিবৃষ্টির কারণে দুবাইয়ে বন্যা হয়ে জনজীবন রুদ্ধ হওয়ার নেপথ্যে ‘ক্লাউড সিডিং’ ছিল বলে মনে করা হয়।

২২ ২২

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেঘে বীজ বপনের বিষয়টি এমনিতেই বিতর্কিত। কারণ, এই প্রক্রিয়া বাস্তবে কত কার্যকর, তার কোনও পোক্ত প্রমাণ এখনও মেলেনি। তা ছাড়া, আবহাওয়ার উপরে এর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিও অস্পষ্ট। আর সেই কারণেই পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহারের বিপক্ষে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement