ধর্ম এবং নাম পরিবর্তন হতেই না কি বদলে গিয়েছিলেন সুরকার এ আর রহমান। এক বার তেমনটাই জানিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় বন্ধু তথা বাদ্যকার শিবমণি।
বন্ধুদের মধ্যে রহমান আধ্যাত্মিক মানুষ হিসাবে পরিচিত। তিনি না কি ঘনিষ্ঠমহলে প্রায়ই নিজের বিশ্বাস এবং চেতনার কথা বলেন।
রহমানের পিতৃদত্ত নাম দিলীপ কুমার। ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি তামিলনাড়ুতে তাঁর জন্ম। রহমানের বাবা আরকে শেখর দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মাত্র চার বছর বয়সে রহমান পিয়ানো শেখা শুরু করেন। খুব অল্প বয়স থেকেই বাবাকে স্টুডিয়োতে কিবোর্ড বাজাতে সাহায্য করতেন তিনি।
রহমানের যখন ৯ বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর রহমানের পরিবারকে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল।
বাবাকে হারানোর পর এক জন সুফি সাধককে অনুসরণ শুরু করেন রহমান। তাঁর যখন ২০ বছর বয়স, তখন তিনি ধর্ম পরিবর্তন করে নেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। রহমানের পরিবারও তাঁর সঙ্গে ধর্ম পরিবর্তন করেছিল।
রহমান তখন সঙ্গীত জগতে নিজের জমি শক্তি করতে শুরু করে দিয়েছেন। সেই সময় তাঁর বিশেষ বন্ধু ছিলেন শিবমণি।
শিবমণি জানান, ধর্ম পরিবর্তনের পর থেকেই রহমানের জীবনে পরিবর্তন আসে। বদল আসে তাঁর কথাবার্তা এবং চিন্তাভাবনায়। সেই অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নিয়েছেন শিবমণি।
‘ও২ ইন্ডিয়া’র সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে শিবমণি জানান, রহমান ধর্ম পরিবর্তনের পর তিনি তাঁর সঙ্গে এক বার সুফি সাধকের মাজারে গিয়েছিলেন।
সেই মাজারে রহমান পড়াশোনা করতেন এবং তাঁর মা মানুষের সেবা করতেন বলেও শিবমণি জানান। শিবমণি বলেন, ‘সুফি সাধক ধর্মগ্রন্থ পড়াতেন। সেই ক্লাস মন দিয়ে করতেন রহমান।’’
শিবমণির মতে, তখন থেকেই রহমানের ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। আধ্যাত্মিকতা নিয়ে চর্চা শুরু করেন তিনি। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি দিলীপকে অন্য রকম দেখেছিলাম। কিন্তু রহমান হওয়ার পর সে পুরোপুরি বদলে যায়।’’
শিবমণি জানান, রহমান আধ্যাত্মিক পথে হাঁটতে শুরু করার পর খুব ধীরস্থির হয়ে যান। স্টুডিয়োতে সঙ্গীতচর্চার সময়ও তিনি বিশেষ কথা বলতেন না।
সেই সময় রহমান বিশেষ ঠাট্টা করতেন না বলেও জানিয়েছেন শিবমণি। স্টুডিয়োর ভিতরে বাকিদেরও না কি ঠাট্টা করতে সাফ মানা করেছিলেন রহমান। রহমানের এই সিদ্ধান্ত তাঁর জীবনে শৃঙ্খলা এনেছিল বলেও শিবমণি জানান।
শিবমণি এ-ও জানিয়েছিলেন, রহমানের উদ্যোগে স্টুডিয়োর ভিতরের পরিবেশ আধ্যাত্মিক হয়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, ‘‘স্টুডিয়োতে কাজ শুরুর আগে আমরা আজান শুনতাম। সন্ধ্যায় স্টুডিয়োতে ধূপ জ্বালানো হত। আধ্যাত্মিক চর্চার পরই রহমান কাজ শুরু করত।’’
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রহমানও জানিয়েছেন যে, আধ্যাত্মিক পথ তাঁর জীবনে শান্তি এনে দিয়েছে। নাম পরিবর্তনের বিষয়ে রহমান এক বার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘অভিনেতা দিলীপ কুমারের প্রতি অসম্মান না জানিয়েই বলছি, সত্যিই দিলীপ কুমার নামটা আমার পছন্দ ছিল না। এই নাম আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যেত না।’’