নান হাউসার। জীবনের বেশির ভাগ সময় আমেরিকার ব্রান্সউইক এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কুক দ্বীপপুঞ্জে কাটিয়েছেন এই সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী। সমুদ্রের গবেষণা করতে গিয়ে এক বার এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখিও হন তিনি। প্রাণে বাঁচেন এক ‘বন্ধু’র সহায়তায়।
হাউসার ‘নিউ ইংল্যান্ড ডলফিন আউটরিচ প্রজেক্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক। অনেকগুলি ডলফিন, তিমি এবং সমুদ্র সংক্রান্ত গবেষণাকেন্দ্রে অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন তিনি। যুক্ত রয়েছেন বেশ কয়েকটি অসরকারি সংস্থার সঙ্গেও।
বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার এক গবেষণা সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক ‘আর্থ অ্যাম্বাসাডর’-এর খেতাবও পেয়েছেন হাউসার।
এক জন তিমি গবেষক হওয়ার আগে হাউসার বেশ কয়েক বছর নার্স হিসাবেও কাজ করেছেন। সেই সমুদ্রবিজ্ঞানী হাউসারই এক বার সমুদ্রে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েন।
২০১৭ সালে কুক আইল্যান্ডের রারোটোঙ্গায় ‘হাম্পব্যাক’ তিমি নিয়ে গবেষণা করছিলেন হাউসার। বেশ কয়েকটি তিমির সঙ্গে তিনি বন্ধুত্বও জমিয়েছিলেন।
ওই বছরেরই ১৪ সেপ্টেম্বর একটি বোটে চেপে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে পাড়ি দিয়েছিলেন হাউসার। তিমি নিয়ে একটি গবেষণার কাজেই তাঁকে সমুদ্রে পাড়ি দিতে হয়েছিল।
দু’টি হাম্পব্যাক তিমির ভিডিয়ো সংগ্রহ করতে তিনি সমুদ্রে গিয়েছিলেন। আর সে দিনই ঘটে যায় এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।
হাউসার যে তিমিদের পাশে সাঁতার কাটছিলেন হঠাৎ তাদের মধ্যে একটি তিমি তাঁকে দেখে অদ্ভুত সঙ্কেত দিতে শুরু করে। হঠাৎ আরও একটি তিমি তাঁর দিকে তেড়ে আসে।
আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হাউসার। তাঁর দিকে তেড়ে আসা তিমিটি নিজের পাখনা দিয়ে এক ঝাপটা দেয় হাউসারকে।
তিমির ঝাপটায় একবারে অনেকখানি ভেসে যান হাউসার। পৌঁছে যান বোটের কাছাকাছি।
পরিচিত বন্ধুদের অদ্ভুত আচরণে হাউসার হতভম্ব হয়ে যান। এর পর তিনি যা দেখেন তা তাঁকে আরও অবাক করে দেয়।
যেখান থেকে তিমিটি তাঁকে তাড়া করেছিল, সেখানে একটি বড় হিংস্র হাঙর দেখতে পান হাউসার।
হাউসার বুঝতে পারেন আসলে হাঙরের হাত থেকে তাঁর প্রাণ বাঁচাতেই একটি তিমি সঙ্কেত দিয়েছিল। কিন্তু তিনি সঙ্কেত বুঝতে না পারায় তাঁর দিকে তেড়ে এসেছিল অন্য তিমিটি। আসল লক্ষ্য ছিল হাউসারের প্রাণ বাঁচানো।
হাউসার জানিয়েছিলেন, হাঙরটি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর তিনি মনে মনে বন্ধুদের ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
বোটে চেপে হাউসার তিমিদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, ‘‘ধন্যবাদ বন্ধুরা। আমি তোমাদের ভালবাসি।’’
হাউসার এক সাক্ষাৎকারে জানান, এর প্রায় এক বছর পরে তিনি কুক আইল্যান্ডের স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে জানতে পারেন বন্দরে একটি তিমিকে দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছন হাউসার। বোটে চেপে গন্তব্যে পৌঁছে তিনি একটি তিমি দেখতে পান। বন্ধুকে চিনতে ভুল হয়নি হাউসারের। এই তিমিই যে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিল। যদিও অপর তিমি বন্ধুর দেখা পাননি তিনি।
সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’কে একটি সাক্ষাৎকারে হাউসার জানিয়েছেন, ওই দু’টি তিমি না থাকলে তিনি প্রাণে বাঁচতেন না। তিনি তিমি দু’টির কাছে চিরকৃতজ্ঞ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।