হাউয়াই দ্বীপের মাউনা লোয়া, ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট সেমেরু, চিলির লাসকারের পর এ বার গুয়াতেমালার ফুয়েগো। লাভা উদ্গীরণ শুরু করল বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে একটি। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে এই নিয়ে চারটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠল।
ফুয়েগো মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যেও একটি। শনিবার রাত থেকে এই জীবন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে।
অগ্ন্যুৎপাতের কারণে রবিবার থেকে বাড়তে শুরু করেছে লাভা প্রবাহ। ফুয়েগোর মুখ থেকে গলগল করে লাভা এবং ধোঁয়া বেরনোর বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে।
গুয়াতেমালা সিটি কর্তৃপক্ষের তরফে রবিবার দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দর লা অরোরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং একটি প্রধান জাতীয় সড়ক সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়।
রবিবার থেকে লাভা এবং গলা পাথর আগ্নেয়গিরির ঢাল বেয়ে নেমে আসতে শুরু করে। অগ্ন্যুৎপাতের কারণে কেন্দ্রস্থল থেকে ছাই প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী জানা গিয়েছে।
রবিবার সকালে গুয়েতামালার রাজধানী গুয়েতামালা সিটি থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে থাকা লা অরোরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাইয়ে ঢেকে যাওয়ার কারণে সাময়িকভাবে বিমান উড়ান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’টি বাইরে থেকে আসা বিমানকেও মাঝপথ থেকেই অন্য দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের মুখপাত্র কার্লোস অ্যাকুইনো জানিয়েছেন, লাভা থেকে সৃষ্ট ছাইয়ের কারণে রবিবার সকালে দক্ষিণ এবং মধ্য গুয়াতেমালাকে সংযুক্তকারী জাতীয় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও বিকেলে আবার ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
গড়ে প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরে ফুয়েগো থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। ২০১৮ সালে শেষ বার এই আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছিল।
২০১৮-র অগ্ন্যুৎপাতে ‘সান মিগুয়েল লস লোটেস’ নামে একটি গ্রাম পুরোপুরি ভাবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০।
২০১৮ সালের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে কারণে প্রশাসনের তরফে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। আগ্নেয়গিরির কাছের গ্রামগুলি থকে এখনও কাউকে সরিয়ে না নিয়ে যাওয়া হলেও গ্রামের সাধারণ মানুষকে খাবার, ওষুধ-সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
স্প্যানিশ ভাষায় ‘ফুয়েগো’ শব্দের অর্থ আগুন। ফুয়েগো আগ্নেয়গিরি গুয়াতেমালার আগের রাজধানী অ্যান্টিগুয়া থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে এবং অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ।
গুয়াতেমালায় আরও দু’টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে—দেশের পশ্চিমে সান্তিয়াগুইটো আগ্নেয়গিরি এবং দক্ষিণে প্যাকায়া আগ্নেয়গিরি। ফুয়েগোর তিন কিলোমিটারের মধ্যে নিষ্ক্রিয় আগ্নেয়গিরি অ্যাকেটেনাঙ্গো রয়েছে।
মধ্য আমেরিকায় ১০০ টিরও বেশি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তবে মাঝে মাঝে এই আগ্নেয়গিরিগুলি মৃত্যু এবং ধ্বংসের কারণ হয়।
প্রসঙ্গত ২৭ নভেম্বর পৃথিবীর সবথেকে বড় জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়ায় অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। হাওয়াই দ্বীপের একদম উত্তর-পূর্ব দিকে এই আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
মাউনা লোয়া জেগে ওঠার দু’সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর বুকে জেগে উঠেছে আরও এক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার মাউন্ট সেমেরু।
শনিবার মাঝ রাতে, গুয়াতেমালার ফুয়েগোর পাশাপাশি চিলির আন্দিজের লাসকার আগ্নেয়গিরিও জেগে উঠেছে।