ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালায় রাশিয়া। ইউক্রেন-রাশিয়া নিয়ে বিতর্কের মাঝে মস্কো আক্রমণ চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এই হামলা। এক দিনের আক্রমণেই বিপর্যস্ত ইউক্রেন। আর এই আক্রমণের পিছনে যাঁর হাত, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ছোট্ট বিরতি নিয়ে বাড়ি ফেরেন রাশিয়া সেনাবাহিনীর সদস্য ভ্লাদিমির স্পিরিদোনোভিচ পুতিন। বাড়ি ঢোকার মুখে তিনি দেখেন বাড়ির সামনে একাধিক মৃতদেহ পড়ে আছে এবং সেগুলি ট্রাকে তোলার কাজ চলছে।
সামনে যেতেই নজরে পড়ে এক মহিলা দেহের পায়ে থাকা একটি জুতোর দিকে। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন, এ জুতো আর কারও না, তাঁরই স্ত্রী মারিয়া পুতিনার। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্পিরিদোনোভিচ। নিজে হাতে শেষকৃত্য সারবেন বলে দেহটি কোলে তুলে নিয়ে বুঝতে পারেন এখনও বেঁচে আছে স্ত্রী। তার পরই আনন্দে আত্মহারা হন তিনি। এই ঘটনা কেটে যাওয়ার ৮ বছর পর একটি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম হয় স্পিরিদোনোভিচ এবং মারিয়ার ঘরে। নাম ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন।
ছোটবেলা থেকে খুবই দুরন্ত ছিলেন ভ্লাদিমির। ছাত্রাবস্থা থেকে তাঁর বয়সি অন্য ছেলেদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে মারপিটে জড়িয়ে পড়তেন তিনি। এমনকি স্কুলের সময় থেকেই তাঁর নিজের ‘গ্যাং’ ছিল, যা তিনি নি়জের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন।
এমনকি ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের দিকেও পা বাড়াচ্ছিলেন কিশোর পুতিন।
তবে তাঁর অপরাধ জগতে ঢোকার হাত থেকে বাঁচার বিকল্প হয়ে ওঠে খেলাধুলো। প্রশিক্ষকের কাছে তালিম নিয়ে জুডোয় হাত পাকাতে শুরু করেন তিনি। খুব কম বয়সেই অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে পারদর্শী করে তোলেন সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ভ্লাদিমির।
সেই সময় জুডো-ক্যারাটে খেলোয়াড়দের দিকে নজর রাখছিল রুশ গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি। তবে ছোটবেলা থেকে রাশিয়ার গোয়েন্দা চরিত্র স্টিয়ারলিটজের দ্বারা অনুপ্রাণিত ভ্লাদিমিরের নিজেরও গুপ্তচর সংস্থায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল।
স্টিয়ারলিটজের গল্প দিয়ে তৈরি সিনেমা ‘সেভেনটিন মোমেন্টস্ অব স্প্রিং’ সিনেমাটি ভ্লাদিমিরকে গুপ্তচর সংস্থায় যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে। এ ছাড়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা বিভিন্ন সিনেমাও তাঁকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল গুপ্তচর সংস্থায় যোগ দিতে।
১৯৭৩ সালে ‘সেভেনটিন মোমেন্টস্ অব স্প্রিং’ মুক্তি পাওয়ার সময় ভ্লাদিমিরের বয়স ছিল ২১। এর দুবছর পরই ১৯৭৫ সালে তিনি কেজিবি-তে যোগ দেন।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করতেন আজকের রুশ প্রেসিডেন্ট। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তিনি ক্রেমলিনের কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হন।
তবে গুপ্তচরদের পক্ষে একজন যে কোন সাধারণ মানুষকে বিয়ে করে সংসার করা মুখের কথা না। গুপ্তচরদের সব সময়ই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। নিজের কাজ সম্পর্কে বলা যায় না পরিবারের সদস্যদেরও। গুপ্তচরদের সন্দেহের তালিকায় থাকেন সকলেই। নিজের সঙ্গী বা সঙ্গিনীকেও বিশ্বাস করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
এমনটাই ঘটেছিল ভ্লাদিমিরের সঙ্গেও। কিন্তু তাঁর সেই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন তাঁর স্ত্রী লুদমিলা পুতিনা।
প্রেম করার সময়ে লুদমিলাকে নিজের কর্মজীবন সম্পর্কে কিছুই জানাননি ভ্লাদিমির। কেজিবি-র বিষয়ে লুকিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি পুলিশে কাজ করেন। এমনকি লুদমিলা-র চরিত্রও পরখ করে দেখেন তিনি।
প্রেমিকার চরিত্র যাচাই করতে লুদমিলা-র কাছে নিজের এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন ভ্লাদিমির। নিজেকে বড়লোক বলে জাহির করা ওই বন্ধু ভ্লাদিমিরের কথায় লুদমিলাকে প্রেমের প্রস্তাবও দেন। তবে লুদমিলা সাফ জানিয়ে দেন, তাঁর এক জন ‘পুলিশ’ প্রেমিক আছে এবং তিনি তাঁকেই বিয়ে করতে চান।
এর পরই আর দেরি করেননি পুতিন। বুঝে গিয়েছিলেন, লুদমিলাই সঠিক জীবনসঙ্গী। ১৯৮৩ সালে বিয়ে করে নিজেদের দাম্পত্য জীবন শুরু করেন ভ্লাদিমির- লুদমিলা।