ইউক্রেনের মাটিতে রাশিয়ার পরাজয় অনিবার্য। ইউক্রেনীয়দের পরাস্ত করতে সমস্ত পন্থা ব্যর্থ হলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন ব্রিটেনের এক প্রাক্তন সেনাকর্তা।
সংবাদমাধ্যমে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর-জেনারেল জোনাথন শ’র দাবি, ‘‘পুতিনের আর কোথাও পালাবার পথ নেই। এই যুদ্ধে তাঁর পরাজয় নিশ্চিত।’’
ওই প্রাক্তন সেনাকর্তার মতো একই কথা মনে করছে নেটোও। এ দাবি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একাংশের। তাদের নানা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীঘ্রই একটি পারমাণবিক ওয়ারহেড (যার সাহায্যে পরমাণু অস্ত্র ছোড়া হয়)-এর মহড়া শুরু করতে পারে রাশিয়া। এ নিয়ে সদস্য দেশগুলিকেও সতর্ক করেছে নেটো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের আরও দাবি, ইউক্রেনের একের পর এক গ্রাম-শহরে পিছু হঠছে রাশিয়া। চলতি মাসের গোড়ায় রুশদের হঠিয়ে নাকি ডজনখানেক গ্রাম-শহরের দখল নিয়ে নিয়েছেন ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সেনারা।
যুযুধান দু’পক্ষের সূত্রের দাবি, ৩ অক্টোবর ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে খারসন শহরের কাছে এগিয়েছেন ইউক্রেনীয় সেনারা।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে নাকি রুশ বাহিনীর কোনও কৌশলই কাজে আসেনি। এমনকি, রুশদের রসদ সরবরাহকারী পথও নাকি বন্ধ করে দিয়েছেন ইউক্রেনীয়রা।
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সমর্থনকারী ব্লগারদের দাবি, খারসনের কাছ থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে রুশ সেনা।
এই যুদ্ধের মাঝে বাল্টিক সাগরের তলায় পাইপলাইনে হামলার আশঙ্কা করছে করছে ব্রিটেন। ব্রিটিশ নৌবাহিনী সূত্রে খবর, ব্রিটেন এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় অর্থাৎ উত্তর ইউরোপীয় দেশগুলিতে তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী ওই পাইপলাইনগুলি পাহারা দিতে উত্তর সমুদ্রে একটি রণতরী পাঠানো হয়েছে।
এই যুদ্ধের মাঝে নাকি মস্কোর কাছে একটি ‘নিউক্লিয়ার ট্রেন’ দেখা গিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দাবি, ওই ট্রেনটি ১২তম মুখ্য অধিদফতর নামে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গোপন ইউনিটের মালিকানাধীন।
রুশ সেনাবাহিনীর ওই ইউনিটটি সে দেশের পরমাণু অস্ত্রের দায়িত্বে রয়েছে। যদিও এটি রুশ সেনার কৌশলের অঙ্গ হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই ট্রেনটিতে একটি কামান-সহ অস্ত্রবোঝাই গাড়ি উঠতে দেখা গিয়েছে। ট্রেনটিকে ক্রেমলিনের উত্তর দিকে এগোতে দেখা গিয়েছে বলেও দাবি। যদিও তার গন্তব্য নিয়ে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।
যুদ্ধবিশারদদের আশঙ্কা, ডুবোজাহাজ থেকে ‘পোসেইডন’ উৎক্ষেপণ করতে পারে রাশিয়া। ওই টর্পেডো ড্রোনটি পারমাণবিক অস্ত্র ছুড়তে সক্ষম। যুদ্ধের সময় সাইবেরিয়া এবং উত্তর মেরুর অঞ্চলের মাঝে কারা সাগরে ওই টর্পেডোর মহ়ড়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া কেন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করছেন ব্রিটিশ সেনাকর্তা শ? ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে পারমাণবিক প্রতিরোধকারী সামরিক রসদ দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। শ বলেন, ‘‘পুতিনের পালাবার পথ নেই। ফলে এই যুদ্ধে আমরা পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার দেখতে পারি।’’
যদিও পুতিন পরমাণু যুদ্ধের কৌশল বদলে ফেলেছেন বলেই মনে করেন শ। তাঁর কথায়, ‘‘পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিরোধ তত্ত্বের বদলে আক্রমণাত্মক ভাবে ব্ল্যাকমেল করায় নেমেছেন তিনি (পুতিন) অর্থাৎ হয় যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করো নয়তো পরমাণু অস্ত্র সামলাও। এর প্রভাব খুবই গভীর।’’
শ’র মন্তব্য, ‘‘আমি শুধু আশা করি, চিনারা যদি পুতিনের পায়ের তলা থেকে কার্পেটে টান দেন। কারণ ইউরেশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধে তো তাঁরাও ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। পুতিনের কাছে একটাই রাস্তা খোলা রয়েছে। সেটা হল পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ।’’