ইউক্রেনের হাতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দিলে তার ফল ভয়ঙ্কর হবে, এই মর্মেই নেটো অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিকে কড়া ভাষায় সতর্ক করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে এক বক্তৃতায় রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি না দিতে সতর্ক করেছেন পুতিন।
নেটো জোটের নেতাদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন পুতিন। জানিয়ে দিয়েছেন, যদি পশ্চিমি দেশগুলি ইউক্রেনের উপর থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তা হলে ছেড়ে কথা বলবে না রাশিয়াও।
ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়া হলে সরাসরি নেটো দেশগুলির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া।
পুতিনের এই হুমকির পর থেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কালো মেঘ দেখতে শুরু করছেন সমর বিশারদদের একাংশ। বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে গোট বিশ্বে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে আর যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকবে না। ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও। কারণ পশ্চিমি দেশগুলি যদি ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি প্রদান করে তবে নেটো দেশগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণ হিসাবেই দেখবে মস্কো।
ইউক্রেনের উপর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে তা নেটো, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ার শামিল হবে। এর ফলে রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাতে বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানান পুতিন।
নেটোর পক্ষ থেকে যেমন পদক্ষেপ করা হবে তার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
২০২২ সাল থেকে চলা ইউক্রেন-রাশিয়ার সম্মুখসমরে জ়েলেনস্কি সরকার মূলত রুশ হামলা প্রতিহত করছিল। এত দিন ধরে রক্ষণাত্মক ভূমিকাই পালন করে আসছে তারা। কখনও যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে, কখনও কমেছে। তবে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই।
জুন মাসের পর থেকেই রাশিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। যদিও যুদ্ধে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পায়নি ইউক্রেন। রাশিয়ার ক্রমাগত হামলার পর এ বার সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চলেছে নেটো। এমনটাই খবর পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম সূত্রে।
ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, এমনটাই সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
পশ্চিমা দেশগুলো এই শর্ত তুলে নিলে ইউক্রেন দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে বিমানঘাঁটি, অস্ত্র-গোলা বারুদের গুদাম ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারবে বলে অনুমান করছে রাশিয়া।
নেটো অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্রের জোগান দিয়ে আসছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জামের জন্য প্রতি বছর প্রায় চার হাজার কোটি ইউরো বরাদ্দ করেছে নেটোর ৩২ সদস্য দেশগুলি। এমনটাই জানিয়েছেন নেটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
রাশিয়ার হামলার প্রতিরোধের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবারই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি চেয়ে তদ্বির করেছেন আমেরিকা-সহ নেটোর অন্যান্য দেশগুলির কাছে। ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীর হামলার জন্য আমেরিকা নির্মিত ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম’ মোতায়েন করার অনুমোদনের জন্য একাধিক বার দরবার করেছে নেটোর কাছে।
কিভ-মস্কোর মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য প্রদানকারী দু’টি প্রধান শক্তি ছিল আমেরিকা এবং জার্মানি। এ ছাড়া ক্ষেপনাস্ত্র দিয়েও ইউক্রেনকে সাহায্য করেছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স। যদিও শর্ত দেওয়া হয় নিজেদের সীমার বাইরে এর ব্যবহার করা যাবে না।
আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর আগে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় আঘাত করার জন্য ইউক্রেনকে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রাশিয়ার ভূখণ্ডে তা ব্যবহার করা নিয়ে কঠোর শর্ত আরোপ করেছিল ওয়াশিংটন।
কিভ একাই দূরপাল্লার হামলা চালাতে পারে কি না তা নিয়ে পুতিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী নেটোর সহায়তা ছাড়া নির্ভুল লক্ষ্যে অত্যাধুনিক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে সক্ষম নয়।
গত জুন মাসে রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইউক্রেন। ক্রিমিয়া ছাড়াও ইউক্রেনের প্রায় ১৭.৫ শতাংশ জমি এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। রাশিয়ার দাবি, সেই জমি তাদের দেশেরই অংশ।
সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে আর আঞ্চলিক যুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও।