চোদ্দো বছরে সাত-সাতটি ছবি করলেও নির্দেশক হিসাবে বলিউডের প্রথমসারিতে উঠে আসতে পারেননি। তবে তাঁকে আজকাল অনেকেই একডাকে চেনেন। সৌজন্যে, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। বক্স অফিসে এ ছবির সাফল্যের দৌড় থামানো যাচ্ছে না। এই একটি ছবিতেই আমজনতার নজর কেড়ে নিয়েছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী।
বিবেকের অষ্টম ছবিটি যে বক্স অফিসে এতটা সাফল্য কুড়োবে, তা নাকি বলিউডের বহু পণ্ডিতই আঁচ করতে পারেননি। বক্সঅফিসইন্ডিয়া ডট কম নামে একটি ওয়েবসাইটের দাবি, ১১ মার্চ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ মুক্তির পর থেকে সাত দিনেই তা ১০০ কোটির ক্লাবে ঢুকে পড়েছে।
মুক্তির দ্বিতীয় শুক্রবারে মুনাফার নিরিখে নাকি আমির খানের ‘দঙ্গল’-কেও ছাপিয়ে গিয়েছে বিবেকের এ ছবি। দু’সপ্তাহে ব্যবসার নিরিখে এই মুহূর্তে তা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফাকারী বলিউডি সিনেমা।
বক্স অফিসে বিবেকের ছবির এই দৌড় অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই ২০০ কোটিরও লক্ষ্য ছোঁয়া অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।
অথচ এমনধারা স্বপ্নের দৌড়ের আগে তেমন সাফল্যের স্বাদ পাননি বিবেক। যদিও বছর তিনেক আগে ‘দ্য তাসখন্দ ফাইলস— হু কিলড শাস্ত্রী?’-এর জন্য দর্শকদের তারিফ কুড়িয়েছিলেন তিনি।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ‘মৃত্যুরহস্য’ নিয়ে তৈরি ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৯ সালে। মিঠুন চক্রবর্তী, নাসিরুদ্দিন শাহ এবং শ্বেতা বসু প্রসাদের সে ছবি বক্স অফিসেও সুপারহিট তকমা পেয়েছিল। তবে সমালোচকেরা বিবেকের কাজে সন্তুষ্ট হননি। তবুও ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর আগে বক্স অফিসের হিট তকমায় খানিকটা হলেও সাফল্যের ছোঁয়া পেয়েছিলেন বিবেক।
কেরিয়ারের গোড়ায় অবশ্য সাফল্য অধরাই থেকেছে বিবেকের। বিজ্ঞাপনী জগতের থেকে বলিউডে পা রেখেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে বিবেকের প্রথম ছবি, ‘চকোলেট: ডিপ ডার্ক সিক্রেটস’। অনিল কপূর, ইরফান খান, ইমরান হাশমি, আরশাদ ওয়ারসি, সুনীল শেট্টি, তনুশ্রী দত্ত এবং সুষমা রেড্ডিদের মতো একঝাঁক তারকা সত্ত্বেও তা দর্শকদের সিনেমা হলে বেঁধে রাখতে পারেনি। যদিও ওই ছবি মুক্তির আগে থেকেই ‘হালকা হালকা সা নশা’ গানটি লোকের মুখে মুখে ঘুরেছিল।
সিনেমার উৎসাহীরা অবশ্য দাবি করেছিলেন, বিবেকের প্রথম ছবিটি ছিল হলিউডের হিট ছবি ‘দি ইউজুয়াল সাসপেক্ট’ থেকে হুবহু টোকা। বক্স অফিসে তা মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
প্রথম ছবি মুক্তির বছর দুই পরে বিবেকের দ্বিতীয় ছবিও তেমন সাড়া জাগায়নি। এ বার অবশ্য ছবির মেজাজ ছিল অন্য। ব্রিটেনের এশীয় ফুটবলাদের কাহিনি ‘ধন ধনা ধন গোল’-কে হাততালি দেননি আমজনতা। ফলে বক্স অফিসে গোলশূন্য থেকেছে জন আব্রাহম, বিপাসা বসু, আরশাদ ওয়ারসিদের এ ছবি।
যদিও ‘চকোলেট… ’-এর মতোই এ ছবির কয়েকটি গান দাগ কেটেছিল। ‘বিল্লো রানি’ বা ‘হল্লা বোল’ এবং ‘ইশ্ক কা কলমা’ শুনে অনেকেই সে সময় গানগুলি গুনগুন করে উঠতেন। কিন্তু বক্স অফিসে মুনাফার সুর শোনা যায়নি।
২০১২ সালে আবারও অন্য পথে হাঁটা দিয়েছিলেন বিবেক। এ বার পর্দায় এল তাঁর তৈরি ইরোটিকা— ‘হেট স্টোরি’। যে ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটেছিল পাওলি দামের। সঙ্গে ছিলেন গুলশন দেবাইয়া এবং নিখিল দ্বিবেদীর মতো শক্তিশালী অভিনেতা।
পাওলির ‘হট’ অবতার সত্ত্বেও বক্স অফিসে মোটামুটি মুনাফা কামিয়েছিল ‘হেট স্টোরি’। মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন সমালোচকেরা।
‘হেট স্টোরি’-তে সাফল্যের আভাস পেয়ে এ ধরনের আরও একটি করেছিলেন বিবেক। ২০১৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘জিদ’। নামজাদা অভিনেতারা কেউ নেই। তবে প্রিয়াঙ্কা এবং পরিণীতি চোপড়ার তুতো বোন মান্নারা চোপড়াকে দেখা গিয়েছিল। সঙ্গে ছিলেন কর্ণবীর শর্মা এবং শ্রদ্ধা দাস।
পাওলিদের নিয়ে ইরোটিকায় যেটুকু সাফল্য পেয়েছিলেন, তার ছিটেফোঁটাও এ ছবিতে হাতে আসেনি বিবেকের। সিনেমা হলের পর্দা থেকে উধাও হতে বেশি সময় নেয়নি ‘জিদ’।
২০১৬ সালে গিয়ার বদল করেছিলেন বিবেক। এ বার আর ইরোটিকা নয়, তৈরি করেন থ্রিলার। তবে তাতে রাজনীতির জবরদস্ত মিশেল রয়েছে।
বিবেকের আশা ছিল, ‘বুদ্ধ ইন আ ট্র্যাফিক জ্যাম’-কে চেটেপুটে উপভোগ করবেন দর্শকেরা। তাঁর মুন্সিয়ানা দেখে এ বার অন্তত সমালোচকেরা খুশি হবেন। তবে অনুপম খের, অরুণোদয় সিংহ এবং মাহি গিলের এ ছবিকে তেমন পাত্তা দেননি কোনও পক্ষই।
২০১৬ সালে এসেছিল বিবেক আরও একটি ছবি। আবারও ছবির মেজাজবদল করেন তিনি। ‘জুনুনিয়ত’-এর মতো রোম্যান্টিক ড্রামায় হাত দিয়েছিলেন বিবেক।
দর্শক বা সমালোচক— কারও মনে ধরেনি তবে পুলকিত সম্রাট এবং ইয়ামি গৌতমের ‘জুনুনিয়ত’। তাঁরা বরং পর্দায় বাইরে সে সময়কার এই ‘জুটি’কে নিয়ে জল্পনায় মেতেছিলেন।
তিন বছর পর অন্য বিবেককে দেখেছিল বলিউড। এ বার ‘দ্য তাসখন্দ ফাইলস… ’-এর পাতা খুলে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। চমকের যে আরও বাকি ছিল, তা কে জানত! ‘কাশ্মীর ফাইলস’ দিয়ে সে কাজটাই বোধ হয় সারছেন বিবেক!