কেবলমাত্র অন্তর্বাস পরে মেট্রোতে ওঠার কারণে সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে হইচই ফেলেছেন দিল্লির তরুণী রিদ্ম চানানা। পরে অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, এটি কোনও এক দিনের ঘটনা নয়। তিনি অনেক দিন ধরেই মেট্রোয় যাতায়াত করেন কেবলমাত্র অন্তর্বাস পরে। রিদ্মের এই পোশাক পরার ধরন দেখে তাঁর সঙ্গে উরফি জাভেদের মিল পেয়েছে সমাজমাধ্যম। আর সেই কারণেই তিনি পরিচিত হয়েছেন ‘দিল্লির উরফি’ নামে।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও অদ্ভুত সব ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দিল্লি মেট্রো। কখনও কোনও যুগলকে মেট্রোর মধ্যেই আলিঙ্গন করে প্রকাশ্যে চুম্বন করতে দেখা গিয়েছে। কখনও আবার মেট্রোর ভিতরেই হাতাহাতি করতে দেখা গিয়েছে যুগলকে।
দিল্লি মেট্রোর ভিতরে অভব্যতা করার অভিযোগ এনে হঠাৎই এক যুবকের উপর চড়াও হতে দেখা গিয়েছিল সহযাত্রী যুবতীকে। ওই যুবককে থাপ্পড় মারার হুমকিও দেন তিনি। তাঁদের ঘিরে ভিড় জমে গেলেও কেউ যুবতীকে থামানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি।
মেট্রোর মধ্যে চুরি করতে গিয়ে অনেকে ধরাও পড়েছেন। তার মধ্যেই একটি ঘটনা সমাজমাধ্যমের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এক শিখ সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পকেট কাটতে গিয়ে ধরা পড়েন এক জন চোর। তবে তাঁকে মারধর করেননি ওই প্রৌঢ়। তার বদলে ওই চোরকে হাঁটু মুড়ে বসে প্রকাশ্যে ভগবানের নাম করে ক্ষমা চাইতে বলেন তিনি।
দিল্লি মেট্রোর মধ্যে টি-শার্টের দাম নিয়ে প্রকাশ্যে তরজা করতে দেখা যায় এক যুবক এবং যুবতীকে। টি-শার্টের দাম ১০০০ টাকা না কি ১৫০ টাকা তা নিয়ে তরজায় জড়ান তাঁরা! তর্ক করতে করতে হঠাৎই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন যুবতী। কয়েকটি চড়ও মারেন ওই যুবককে। শুধুমাত্র টি-শার্টের দাম নিয়ে যুবককে চড় মারায় মেট্রোর অন্য যাত্রীরাও স্তম্ভিত হয়ে যান।
‘ক্যাট ফাইট’-এরও সাক্ষী হয়েছে দিল্লি মেট্রো। ঝগড়ার সূত্রপাত মেট্রোর ফাঁকা আসনে বসা নিয়ে। আর তা নিয়েই বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে একে অপরের শিক্ষা-দীক্ষা থেকে বাবা-মা তুলে ঝগড়া করতে দেখা যায় দুই মহিলাকে। একে অপরকে পেটানোর হুমকিও দেন। ওই ভিডিয়োতে বার্গার খেতে খেতে দুই মহিলার ঝগড়া তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে তৃতীয় এক মহিলাকে।
দিল্লি মেট্রোয় ‘দিল্লির উরফি’র ছবি শোরগোল ফেলার কয়েক দিনের মধ্যেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে প্রকাশ্যে চুম্বন করতে দেখা যায় এক যুগলকে। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মাঝেমধ্যে একে অপরকে চুম্বনও করছেন। মেট্রোর এক যাত্রী সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করলেও সে দিকে ভ্রুক্ষেপ ছিল না যুগলের। দিল্লি মেট্রোয় যুগলের এই খোলামেলা ‘রোম্যান্স’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ভরা মেট্রোয় কারও পরোয়া না করে চুম্বন করতে থাকায় অনেকে বিরক্তিও প্রকাশ করেন।
তবে মধ্যে শুধু ঝগড়া এবং রোমান্স নয়, প্রকাশ্যে নাচগান করতেও দেখা গিয়েছে দিল্লি মেট্রোয়। দু’জন যুবককে গিটার এবং বাঁশি বাজিয়ে সঙ্গীতচর্চা করতে দেখা গিয়েছে মেট্রোয়। তবে সেই সঙ্গীত শুনে মাথা দুলিয়ে উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে সহযাত্রীদের।
দিল্লির মেট্রোর অন্দরের অন্য একটি ভিডিয়োতে এক দল তরুণ-তরুণীকে তারস্বরে চিৎকার করে কোরাস গাইতে দেখা গিয়েছে। তবে তাঁদের সেই ‘সুমধুর’ সঙ্গীতে পালাই পালাই রব ওঠে মেট্রোর ভিতরের বাকি যাত্রীদের মধ্যে।
দিল্লি মেট্রোর তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মেট্রোর অন্দরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার ‘রিলস্’ বানানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু মেট্রোযাত্রীদের কেউ কেউ সে কথায় বিশেষ আমল দিতে রাজি নন। প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়োতে ফাঁকা মেট্রোর ভিতরে আধুনিক পোশাক পরে এবং মুখে মাস্ক লাগিয়ে এক তরুণীকে বিদেশি সঙ্গীতে কোমর দুলিয়ে রিলস্ বানাতে দেখা গিয়েছে। সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে যথেষ্ট সাড়াও ফেলেছিল।
আবার অন্য এক তরুণীকে দিল্লি মেট্রোর ভিতরে হাতা-পা নেড়ে এবং রীতিমতো লাফালাফি করে নাচতে দেখা গিয়েছিল। যদিও সেই নাচ দেখে অভিভূত হওয়ার বদলে বিরক্তি প্রকাশ করেন সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
শুধু মানুষ না, মেট্রোর কামরায় অন্য এক ‘যাত্রী’র কারণেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি)কে। কারণ সেই ‘যাত্রী’ ছিল এক জন বাঁদর। বাঁদর ‘যাত্রী’র দিকে প্রায় সকল যাত্রীরই চোখ আটকে ছিল। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, কামরার বিভিন্ন জায়গায় ‘টহল’ দিয়ে এক যাত্রীর পাশের আসনে গিয়ে বসে বাঁদরটি। খানিকক্ষণ পর মেট্রোর জানলা থেকে বাইরের দৃশ্য দেখতে শুরু করে বাঁদরটি। মেট্রোতে সচরাচর এমন ‘যাত্রী’ দেখা যায় না বলেই তার ‘বাঁদরামি’র ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ডিএমআরসি-কে।
দিল্লি মেট্রোর বিভিন্ন চর্চিত ঘটনার নবতম সংযোজন ছিল দিল্লির তরুণী রিদ্মের প্রায় নিরাবরণ হয়ে মেট্রোভ্রমণ। রিদ্মকে উরফির সঙ্গে তুলনা করার যে যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তা তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে স্পষ্ট। উরফির মতো তিনিও স্বল্পবসনে থাকতে ভালবাসেন। বক্ষযুগল কোনও রকমে ঢেকে রাখেন উরফির মতোই। যদিও রিদ্মের দাবি, তিনি কোনও ভাবেই উরফির দ্বারা অনুপ্রাণিত নন। ‘সাময়িক খ্যাতি পাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই’, বলেও স্পষ্ট করেছেন রিদ্ম। (দিল্লি মেট্রোর ভিতরে ভাইরাল হওয়া কোনও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।)