এক সময় একের পর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। নব্বইয়ের দশকের ছোটদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন এই ছোট মানুষটি। কিন্তু ক্রমেই অন্তরালে চলে গিয়েছেন। গত পাঁচ বছর ধরে কোনও কাজ নেই। এখন দু’বেলা খাবার জোটানো মুশকিল হয়ে গিয়েছে কে কে গোস্বামীর।
‘বিক্রাল অওর গবরাল’ ধারাবাহিকের গবরু তিনি। ‘শক্তিমান’-এর খল্লি বল্লি। ‘শাকা লাকা বুম বুম’-এর ক্রিস্টাল। ‘গুটুর গু’, ‘শ্শ্শ্শ্....কোই হ্যায়’-এর মতো ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন কে কে গোস্বামী। ওরফে কৃষ্ণকান্ত গোস্বামী।
উচ্চতা মাত্র তিন ফুট। সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়েও এক সময় সফল হয়েছিলেন গোস্বামী। তাঁর এখন কোনও কাজ নেই। এ কথাটা তিনি নিজেই বিশ্বাস করতে পারেন না।
একটি সাক্ষাৎকারে গোস্বামী বলেন, ‘‘এত ভাল ভাল ধারাবাহিকে অভিনয়ের পরেও হাতে কোনও কাজ নেই। আমার কাছে এটাই উদ্বেগের। কখনও ভাবতেই পারিনি যে, আমার কাছে কোনও কাজ থাকবে না। একটা ভাল শোয়ের অপেক্ষায় রয়েছি।’’
এক কালে দারুণ সফল ছিলেন এই অভিনেতা। সেই পথ কিন্তু সহজ ছিল না। খাটো উচ্চতার জন্য স্কুলে পরিহাসের পাত্র ছিলেন। সহপাঠীরা ঠাট্টা করত। হীনম্মন্যতায় ভুগছিলেন গোস্বামী।
এই সময়ে গোস্বামীর পাশে ছিলেন তাঁর বাবা-মা। ক্রমাগত সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। গোস্বামীর বাবা-মা চাইতেন ছেলে অভিনেতা হোক। সেটাই বুঝিয়ে চলতেন তাঁকে।
এক ভোজপুরী পরিচালকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল গোস্বামীর। তিনিই জানিয়েছিলেন, অভিনেতা হতে পারেন গোস্বামী। এর পর ‘বিক্রাল অওর গবরাল’ তাঁকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল। জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন গোস্বামী।
একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছিলেন, তিনি উচ্চতায় খাটো হলেও তাঁর স্ত্রী কিন্তু যথেষ্ট লম্বা। উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। দুই পরিবার একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁর উচ্চতা কম হওয়া সত্ত্বেও আপত্তি জানাননি তাঁর স্ত্রী পিঙ্কু।
পিঙ্কু এবং গোস্বামীর দুই ছেলে রয়েছে। স্ত্রীকে খুব ভালবাসেন বলে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি আমার স্ত্রীকে ভীষণ ভালবাসি। পৃথিবীর সমস্ত সুখ, আনন্দ ওঁকে আমি দিতে চাই।’’
কিন্তু এখন সংসার চালানোই দায় হয়ে গিয়েছে গোস্বামীর। কোনও রোজগার নেই। অনেক পরিচালকের কাছে গিয়েছেন। অনেক প্রযোজনা সংস্থার কাছে ঘুরেছেন। কেউ কোনও কাজ দেননি। গোস্বামী জানিয়েছেন, প্রযোজক একতা কাপুরের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। কাজ চেয়েছিলেন। একতা কাপুর নিজের ম্যানেজারকে গোস্বামীর নম্বর লিখে রাখতে বলেছিলেন। তাঁর আশা, শীঘ্রই ডাক পাবেন।
দীর্ঘ দিন লড়াই করে অভিনয় জগতে নিজের জায়গা পাকা করেছিলেন গোস্বামী। তার পর দীর্ঘ বছর সাফল্যের স্বাদ পেয়েও এখন তা থেকে বঞ্চিত। আবার শুরু হয়েছে নতুন লড়াই। তাই নিজের দুই সন্তান অভিনয়ের জগতে আসুক, চান না গোস্বামী।
একটি সাক্ষাৎকারে এই অভিনেতা বলেন, ‘‘আমার ছেলে নবদ্বীপের অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। আমি এবং আমার স্ত্রী ওঁকে বুঝিয়েছি। বলেছি, অভিনয়ের জগতে না আসতে। বলেছি, এই পথে এলে সারা জীবন লড়াই করতে হবে। একটা সময় আসবে, যখন কুয়ো খুঁড়লেও আর জল বার হবে না। তাই আমি ওকে বলি, পড়াশোনা করো। তার পর চাকরি খুঁজে নাও, নয়তো ব্যবসা শুরু করো। ও বুদ্ধিমান। এখন আর অভিনয়ের দিকে ঝোঁক নেই।’’
এই পরিস্থিতিতে দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ছে না ৪৯ বছরের কে কে গোস্বামীর। দিন কয়েক আগে তাঁর গাড়িতে আগুন লেগে যায়। তখন গাড়ি চালাচ্ছিলেন ছেলে নবদ্বীপ।
কলেজ থেকে গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন নবদ্বীপ। তাঁর বয়স ২১ বছর। গাড়িতে হঠাৎই আগুন লেগে যায়। যদিও নিরাপদেই রয়েছেন নবদ্বীপ।
যদিও এত কিছুর পরেও বলিউডকে ধন্যবাদ দিতে চান গোস্বামী। তিনি জানিয়েছেন, আজ যা কিছু হয়েছেন, সবটাই বলিউডের জন্য। প্রথম সুযোগটাই পেয়েছিলেন মুম্বইতে। তাঁর কথায়, ‘‘যখন প্রথম এখানে এসেছিলাম, একটি দৃশ্যে অভিনয় করতাম। তখন মুকেশ খন্নার সঙ্গে শক্তিমান ধারাবাহিক অভিনয় করছিলাম। আমি তাঁদের কাছে গিয়ে বলি, এই একটা-দুটো দৃশ্যে অভিনয় করতে চাই না। তারকা হতে চাই। মুকেশজির মতো। ছোট শক্তিমানও হতে পারি। তখনই দর্শকেরা বোধ হয় শুনতে পেয়েছিলেন।’’
তার পর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন গোস্বামী। তার পর সেই সাফল্য ফের হারিয়েও গিয়েছে। ২০১৩ সালে তাঁর শেষ সুপারহিট ধারাবাহিক ‘গুটর গু’। ২০১৭ সালে ‘ত্রিদেবীয়’-তে শেষ বার তাঁকে দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকে আর পর্দায় দেখা যায়নি গোস্বামীকে।
সেই নিয়ে আফসোস রয়েছে। গোস্বামী বলেন, ‘‘যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, তার পর দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেও আজ এই জায়গায়। এখনও কাজ করছি, তবে শুধুই বেঁচে থাকার জন্য।’’ তাঁর আশা, আরও এক বার মুখ তুলে চাইবেন ঈশ্বর। বলিউড। তিনি আবারও কাজ পাবেন।